আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনার বাংলার কালো সোনার ভারাক্রান্ত গল্প

h
ইহা কোন গল্প নয়, বাস্তব। এক কঠিন বাস্তব। কথায় আছে, হাতের লক্ষী ঠেলে দিতে নেই, কিন্তু আমাদের এ কি অবস্থা! দেশের সম্পদের কোন সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনা করা হচ্ছেনা। না গ্যাস সেক্টরে, না কয়লা, না কালো সোনার ক্ষেত্রে যা নিয়ে আজ আমি লিখছি। কালো সোনা সম্পর্কে আগে ধারনা পেশ করা যাক।

কালো সোনা বা ব্ল্যাক গোল্ড (তেল নয়) হল কিছু মিশ্রিত তেজস্ক্রিয় খনিজ পদার্থ যেমন –জিরকন, ইলমেনাইট, রুটাইল, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট, মোনাজাইট ইত্যাদি। জিরকন শব্দটি আরবি ‘জারক্বুন’ থেকে এসেছে যার অর্থ সিঁদুরে। জিরকনে ভারী ধাতু জিরকোনিয়াম ছাড়াও তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম বিদ্যমান। এই জিরকন খুবই মুল্যবান ধাতু যা থেকে জিরকোনিয়াম ধাতু পাওয়া যায় যা কিনা পারমানবিক রিয়্যাক্টরে নিউট্রনের শোষক (এ্যাবসর্বার) বা মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্যাটালিস্ট বা প্রভাবক হিসেবে ও অনেক ক্ষেত্রে জেমস স্টোন হিসেবেও জিরকন ব্যবহৃত হয়।

জিরকনে নিহিত অন্যান্য ধাতু যেমন ইউরেনিয়াম এর ব্যবহার আমরা জানি, তা পারমানবিক শক্তি উৎপন্নে কাজে লাগে। আরেক তেজস্ক্রিয় ধাতু থোরিয়াম এরও বহুবিধ ব্যবহার আছে, মূলত নিউক্লিয়ার ফুয়েল হিসেবে ও সংকর ধাতু প্রস্তুতীতে। ইলমেনাইট ও রুটাইল হল মূলত খুব দামী ধাতু টাইটেনিয়ামের আকরিক। টাইটেনিয়াম ধাতু বিমান, মিসাইল, নভোঃযান প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হোয়ার কারন ধাতুটি অত্যান্ত ঘাতসহ ও উচ্চ তাপমাত্রা নিরোধক। এছাড়াও ধাতু ওয়েল্ডিং এর কাজেও ইলমেনাইট ও রুটাইল ব্যবহার করা হয়।

গার্নেটের নাম আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি, খুব দামী জেমস স্টোন হিসেবে গার্নেটের ব্যবহার আছে, এছাড়াও শক্তিশালী লেসার রশ্মী তৈরীতেও পরিশোধিতো গার্নেট ব্যবহৃত হয়। ম্যাগনেটাইট পদার্থের নাম ও আমরা জানি, এর অন্যতম বৈশিষ্ট হল আর্সেনিক ধাতু দুরীভূত করা। আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলে আর্সেনিক বিষকৃয়ায় হাজারো লোক আক্রান্ত। ম্যাগনেটাইটকে ছাকনি বা সর্বেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে খুব সহজেই আর্সেনিক পৃথকীকরন করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতে, এক্স-রে মেশিন ও নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে রেডিয়েসন শিল্ড হিসেবে এর ব্যবহার আছে।

বাকি থাকলো মোনাজাইট। এটাও অত্যান্ত মূল্যবান একটি আকরিক যাতে মুল্যবান তেজস্ক্রিয় সেরিয়াম, থোরিয়াম, ইটারিয়াম, ল্যান্থানাম, নিওডিয়াম ও গ্যাডোলিনিয়াম বিদ্যমান। যেগুলো কিনা বৈজ্ঞানিক গবেষনারে খুব মুল্যবান ধাতু হিসেবে পরিচিত। এত কিছু লিখার কারন কি? কারন হচ্ছে এই সকল ধাতুর একটি অন্যতম বৃহৎ অংশ আমাদের দেশে আছে। শুধু আছে বললেই হবে না, প্রচুর পরিমানে আছে।

কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ, মহেশখালী, নিঝুম দ্বীপ, কুয়াকাটা সহ দেশের সাগড় পাড়ের অঞ্চল গুলোতে এই কালো সোনা প্রচুর পরিমানে মজুদ আছে। এবার কিছু বৈজ্ঞানিক উপাত্তের দিকে লক্ষ্য করি। AUSIMM জার্নালে প্রকাশিত “Physical, Chemical and Mineralogical Investigations on Bangladesh Zircon” নামক এই পাবলিকেশনে দাবী করা হয়েছে বাংলাদেশে প্রাপ্ত জিরকনের বিশুদ্ধতা প্রায় ৯৫.৮৯ শতাংশ। খাঁদ হিসেবে যা আছে সেটাও বেশ দামী এক আকরিক, টাইটেনিয়াম অক্সাইড। তারা এক্সরে ডিফ্র্যাকশন এর সাহায্যে এই উপাত্ত পেয়েছেন যা নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

আনুমানিক হিসেবে বাংলাদেশের এই কোস্টাল অঞ্চলে প্রায় ১৬০ হাজার টন জিরকন, ৭০ হাজার টন রুটাইল, ১০২৬ হাজার টন ইলমেনাইট, ২২৫ হাজার টন গার্নেট, ১৭ হাজার টন মোনাজাইট ও প্রায় ৮১ হাজার টন ম্যাগনেটাইট মজুদ আছে, এ সংখ্যা কম-বেশী হতে পাড়ে। সোনার বাংলায় নাকি সোনার খনি নেই। কিন্তু আমাদের যা আছে এটা সোনা থেকে মোটেই কম নয়। এ খাত থেকে শত-শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু ষাটের দশকে আবিষ্কৃত হওয়া এ খনি, সকল সরকারের আমলে তাদের রহস্যময় নিরবতা শঙ্কাজনক।

বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশনের নাম-কা-ওয়াস্তে একটি প্রকল্প চালু আছে এ খাতে, কিন্তু কোনোই গবেষণা নেই, সরকারী বরাদ্দ নেই তো গবেষণা করবে কি দিয়ে। আমরা আমাদের এই সম্পদকে অতল সাগরে বিলীন হয়ে যেতে দিতে পারিনা, পারিনা অন্য বৃহৎ কোন শক্তি এসে আমাদের এ সম্পদ লুটে নিয়ে যাক (আফ্রিকায় এটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে)। আমাদের কিছু অন্তত করা উচিৎ। আশা করা যায় সরকার আশু পদক্ষেপ নেবেন এই ব্যাপারে, আমাদের সকলের-ই এটা কাম্য। [বি.দ্র. বিচের ছবিটা আমার তোলা ] তথ্যসূত্রঃ ১।

The Bangladesh Journal- 11th April, 2004 “Valuable minerals of Cox's Bazar go unutilized”. ২। The New Nation “ ৩। বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন। ৪। RPA Journal Volume -11, Number-3 (July 1993) ৫।

AUSMM Conference Paper, Paper ID: 5053 ৬। wikipedia.com ৭| "Science Direct" MINPREX 2000 Conference Carlton, South VIC 3053, Australia (2000), pp. 391–396. মোনাজাইট জিরকোনিয়াম
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.