ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো। (যারা ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না,লেখাটি তাদের জন্য। লেখাটি আমার নিজের না। বেশ কয়েকটি জায়গার লেখাকে সমন্বয় করে অতীতের সেই কাহিনীটি প্রকাশের চেষ্টা করলাম। )
আজ ২৪ আগস্ট ছিল ইয়াসমিন ট্রাজেডির ১৭তম বার্ষিকী।
এদিন দেশব্যাপী পালিত হল নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে একদল পুলিশ সদস্যের হাতে তরুণী ইয়াসমিন নিমর্মভাবে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের আমজনতা। প্রতিবাদী মানুষকে লক্ষ্য করে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ।
সামু, কাদের ও সিরাজের লাশ পাওয়া গেলেও বাকি ৪টি লাশ পুলিশ গুম করে ফেলে। এর প্রতিবাদে দিনাজপুরের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জনতার রোষানলে পড়ে কোতয়ালী থানা, ৪টি পুলিশ ফাঁড়ি, ডিএসবি অফিসসহ অনেক পুলিশের গাড়ি ভস্মিভূত হয়। এই সুযোগে কিছু দুস্কুতিকারী দিনাজপুরের ৪টি সংবাদপত্র অফিস এবং প্রেসকাবে হামলা চালিয়ে মালামাল লুঠ ও ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর থেকে দিনাজপুর প্রেসকাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক সমিতিসহ সাংবাদিক সমাজ এদিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে।
এ ঘটনায় দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি নিবন্ধ হয় দিনাজপুরে।
ঘটনাটি সবার সাথে শেয়ার করা হল।
দিনাজপুর শহরের রামনগর মহল্লার এক দরিদ্র ঘরের কিশোরী কন্যা ইয়াসমিন ঢাকার এক বাসায় কাজ করতো। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট ভোরে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজ নৈশ কোচের সুপারভাইজার ইয়াসমিনকে দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে নামিয়ে দেণ। এক চায়ের দোকানদারকে বলেন, সকাল হলে তরুণীটিকে যেন দিনাজপুর শহরগামী বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেখানে পৌঁছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান। পুলিশ সদস্যরা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে থাকা ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করে এক পর্যায়ে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক পুলিশ ভ্যানে তুলে নেয়। এরপর তারা দশমাইল সংলগ্ন সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তাকে ভাসমান পতিতা বানানোর প্রচেষ্টা চালায়। তড়িঘড়ি করে বেওয়ারিশ লাশ বলে দাফন দিয়ে ফেলে
এ ঘটনায় দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
২৬ আগস্ট রাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জনতা কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে। ২৭ আগস্ট সকাল থেকে প্রতিবাদী মানুষেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েক হাজার জনতা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিতে যায়। এ সময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে। আহত হয় প্রায় তিন শতাধিক।
শহরের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে বিডিআর মোতায়েন করা হয়। দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তিনটি আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মতিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার রায়ে আসামি পুলিশের এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ‘৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন। আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই মঈনুলকে আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। অপরদিকে, দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় আলামত নষ্ট, সত্য গোপন, অসহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি দিনাজপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল মোতালেব, ডা. মহসীন, এসআই মাহতাব, এসআই স্বপন চক্রবর্তী, এএসআই মতিয়ার, এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন।
চাঞ্চল্যকর ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় আট বছর পর, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মামলার অন্যতম আসামী এএসআই মইনুল হক ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার কে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ২০০৪-এর ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ।
অপর আসামি পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মণ কে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে।
এদেশের র্যাব ও পুলিশ বাহিনী তাদের নানাবিধ কার্যকলাপের জন্য আজও আন্তর্জাতিকভাবে ও জাতীয়ভাবে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।