আল্লাহু আকবার!
সবার সাথে কান বরাবর দুই হাত তুলল রাকীব। একে তাকবীর বলে।
নিয়ম অনুযায়ী সুরা সানা পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব সুরা ফাতেহা শুরু করেন- আলহামদু লিল্লাহি রাব্বীল্ আ’লামীন...
রাকীবের চোখে নীলার অনাবৃত শরীরটি ভেসে উঠে। সুগঠিত স্তনযুগল, পুরু নিতম্ব... নীলাকে ঘিরে যত স্মৃতি সব একে একে ভেসে উঠে তার কল্পনায়।
কিযে এক উদ্দামতা ছিল তখন নীলাকে নিয়ে! নীলার জন্য পারত না হেন কাজ ছিল না এ পৃথিবীতে।
তার মনে পড়ে যায় নীলার সাথে প্রথম দেখা করার কথা। অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা বাদ দিয়ে সে চলে গিয়েছিল নীলার বাড়ী চট্টগ্রাম। রাকীবের নিজের কাছেই খুব অবাক লাগে, যে ছেলে একা বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পেত সেই ছেলে পরীক্ষার জন্য ঢাকা না গিয়ে চলে গিয়েছিল চট্টগ্রাম। তাও আবার একা একা। তার মনে পড়ে যায় নীলার সাথে সারা দিন ঘুরাঘুরি করে ফিরে আসার আগে নীলাদের খালি বাসায় নীলার রুমটা দেখতে যাওয়ার কথা।
কি অঘটনটাই না ঘটেছিল তখন! একটু পরেই নীলার মা বাসায় চলে আসায় রাকীবের আর বের হতে না পারা। সারা সন্ধ্যা সারা রাত নীলার রুমে থাকা। চালাক মেয়ে নীলা সারাক্ষণই তার রুমে দরজা দিয়ে বাতি নিবিয়ে রেখেছিল মাথা ব্যাথা করার অযুহাতে। সে রাতেই রাকীব উপভোগ করে তার জীবনে প্রথম নারীদেহ ও তার স্পর্শ। সে দৃশ্যগুলো মনে পড়তেই তার শরীর উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
আল্লাহু আকবার।
জামাতের সবাই এবার রুকুতে। রাকীবও। নীলার উপর রাকীবের এবার অনেক রাগ উঠে। এত ভালবাসল সে নীলাকে অথচ নীলা বিনিময়ে কি করল? তাকে এতটা কষ্ট দিল! মনে পড়ে এক পরীক্ষার আগের রাতে রাকীব নীলাকে অনুরোধ করেছিল, নীলা কাল আমার পরীক্ষা।
তুমি প্লিজ আজকের রাতটা কারো সাথে ফোনে কথা বল না। তুমি তো জান তুমি ফোনে কোন ছেলেদের সাথে কথা বললে আমার ভাল লাগে না। নীলা তাকে আশ্বস্ত করেছিল, বলেছিল নির্ভয়ে পড়তে। কিন্তু.. কিন্তু রাত বারোটার পর থেকেই নীলার মোবাইল ফোন ব্যস্ত হয়ে গেল। পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাকীব কলের পর কল দিতে থাকল, কিন্তু কল তো আর ঢুকে না।
অনবরত চেষ্টায় ভোর চারটার দিকে নীলাকে পাওয়া গেল। চরম রেগে গিয়ে রাকীব যখন ঘটনা জানতে চাইল তখন নীলা তাকে জানাল তার বান্ধবী বর্ণা আজ তার সাথে আছে। সে ই নাকি এতক্ষণ তার মোবাইলটা ব্যবহার করছিল। যদিও বর্ণার সাথে কথা বলতে চাওয়ার পরও নীলা তাকে বর্ণার সাথে কথা বলতে দেয়নি। রাকীব কিন্তু তবুও তার কথা বিশ্বাস করেছিল!
আল্লাহু আকবার।
নামাযের তৃতীয় রাকাত শুরু।
ধীরে ধীরে নীলার সাথে সম্পর্কের পুরো দুই বছরের সবকিছুই মনে পড়তে থাকে রাকীবের। সাইবার ক্যাফেতে ডেটিং, রমনার খোলা ময়দানে বসে তুমূল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা, পাবলিক লাইব্রেরীতে ঢুকে দুজনের প্রতিযোগিতা করে বই পড়তে থাকা, তুমূল ঝগড়ার পর মাসদুয়েক কথা বলা বন্ধ করে আবার এক থালায় লাঞ্চ করে এর মধুর পরিসমাপ্তি, একটু একটু করে বাড়তে থাকা সন্দেহ, কথা কাটাকাটি, বিশ্বাস উঠে যাওয়া এবং একমসয় সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়া, বুকের মধ্যে তুমূল কষ্ট চেপে টিকে থাকার চেষ্টা - সব সবকিছুই রাকীবের মনে পড়তে থাকে।
আল্লাহু আকবার।
সবাই এবার সেজদা শেষে আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি .. রাকীব ভাবনা ছেড়ে সুরাগুলো পড়া শেষ করে।
ইমাম তখনও দোয়া শুরু করেন নাই। এই ইমাম সাহেব এখানে এসে অনেক সময় নেন। রাকীব আর সবার সাথে বসে বসে অপক্ষা করতে থাকে কখন দোয়া শুরু হবে। আবার নীলা তার ভাবনায় ঢুকে পড়ে।
ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই নীলা এখন রাকীবের শহরে একই পাড়ায় আরেকজনের গৃহিনী।
রাকীবের পাড়ার ছেলে তুহিনের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের কার্ডে নাম আর ঠিকানা দেখেই রাকীব বুঝেতে পেরেছিল ব্যাপারটা। একই পাড়ায় থাকার কারনে না চাইলেও দেখা হয়ে গিয়েছিল একদিন। প্রথম দেখার দিন নীলার আচরন অনেক স্বাভাবিক ছিল। জেনে নিয়েছিল রাকিবের বর্তমান মোবাইল নাম্বার।
আসলেই রমনীরা রহস্যময়ী। আজ নীলা কল দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছে। রাকীবের বউ, বাচ্চার নাম জানতে চেয়েছে। আগের দিনের কথা তুলেছে।
আর সব শেষে তাকে নিমন্ত্রণ করেছে তার বাসায়। সন্ধ্যাবেলা নাকি সে একলা বাসায় থাকে। রাকীব যাবে কি না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। রাকীব ভীষন চিন্তায় পড়েছে তাই। একদিকে, নীলার দেহবল্লরীর প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ, অন্যদিকে নিজের বিবেক।
দোয়া শুরু হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বীল আলামীন ওয়াছ্ছালাতু ওয়াছ্ছালামু আলা ছাইয়ীদুল মুরছালীন।
রাকীব একবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যাবে, পরমুহুর্তেই ভাবছে যাওয়া উচিত না। যাওয়া ঠিক হবে না। যদি ধরা পড়ে যায়।
ঐ সময়টাতে যদি কেউ চলে আসে। আবার মনে হয়, আজ যদি সে না যায় তবে হয়তো আর কখনোই নীলা এ সুযোগটি দেবে না তাকে। এভাবে আর ডাকবে না তাকে। ভাবে, নীলাকে তো ভাবে নাই আর কখনো পাবে। সেই নীলা আজ ভাগ্যচক্রে আবার তার পরিচিত গন্ডিতে।
নাহ! একবার গেলে এমন কিছু হবে না। রাকীব নীলার বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
মুনাজাত শেষ পর্যায়ে। ইমাম সাহেব এবার বাংলায় বলছেন। হে আল্লাহ, তুমি তোমার সকল বান্দাদের মাফ করে দাও আল্লাহ।
হে আল্লাহ এইখানে আমরা যারা আছি আমরা সবাই মিলে আজ প্রতিজ্ঞা করলাম আমরা আর কোন পাপ কাজ করব নাগো আল্লাহ।
সুবহানাকা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জতি আম্মা ইয়াছিফুন। আছ্ছালামুন আলাল মুরছালীন। ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আমিন
রাকীবও সবার সাথে আমিন বলে মসজিদ থেকে ধীর পায়ে বের হয়ে নীলার বাসার দিকে রওনা দিল।
বি.দ্র: ‘তোমরা যখন নামাযে আল্লাহকে মনে করবে তোমরা অল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াবে। ’ (সুরা বাকারা, ২৩৮ নং আয়াত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।