আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়তু এরশাদ! জয়তু ভারত রাজনীতি!

কবি হতে চেয়েছিলাম... জয়তু এরশাদ! জয়তু ভারত রাজনীতি! -তায়েব মিল্লাত হোসেন মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক হয়েও তিস্তার পানি বন্টন ও টিপাই মুখ বাঁধ ইস্যুতে আচমকাই বিরোধীদলের আচরণ শুরু করেছিলেন লে. জে. (অব.) হু. মু. এরশাদ। বন্দুকের নল ঠেকিয়ে রাতারাতি রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়ার মতোই লংমার্চ করে গরমা-গরম ভারতবিরোধী বক্তব্য দিতে লাগলেন তিনি। বিষয়টা নিয়ে আমার মনে একটা খটকা ছিলো। তা পরিস্কার হলো এ সপ্তাহে। ভারত সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে অনেকটা হঠাৎ করেই গত সোমবার সফরে যান এরশাদ।

পাঁচ দিনের ভারত সফর শেষে আজ দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি যেসব কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে এদেশের ভোটারদের প্রতি তার কোনো আস্থা নেই। ভারত সরকারের উর্দ্ধতন মহলের প্রতি তার যতো আস্থা। এ নিয়ে তাকে বেশ উচ্ছ্বসিত মনে হয়েছে। আবার আমাদের অভন্তরীণ রাজনীতিতে ভিনদেশিরা হস্তক্ষেপ করুক কিংবা মাথা ঘামাক তা যেন আমাদের গণমাধ্যমের কর্মীরাও চান। তাই এক সাংবাদিক এরশাদকে প্রশ্ন করেন, ‘ভারত আপনাকে মহাজোটের থাকার ব্যাপারে কী বলেছে’ এরশাদের উত্তর, ‘ভারত বললেই মহাজোটে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

এটি আমার দলীয় বিষয়। আমি তাদের বলেছি, একক নির্বাচন করবো এবং সেই সিদ্ধান্তেই অনড় এখনো। ’ আরেক প্রশ্নে এরশাদের উত্তরে আবার বিপরীত সুর। ‘এই সফরের বড় অর্জন হচ্ছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এককভাবে নির্বাচনের সমর্থন পাওয়া। ’ এই না হলে এরশাদ! তার এই সফর বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তার সফরের পর আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বাড়ার ইঙ্গিত কী মিলছে? এ নিয়ে কী এরশাদ সাহেব গর্বিত? বিমানবন্দরে এরশাদ আরও বলেছেন, ‘এই সফর থেকে বলা যায়, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমরা বড় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি এবং এখন ভারতও আমাদের মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। ’ মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে অনেকটা স্বেচ্ছায় পাকিস্তানে থাকা এরশাদ (তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে কয়েক দফা বাংলাদেশে এসেছেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে আবার পাকিস্তানে তার ব্যারাকে ফিরে গেছেন, ইচ্ছে করলেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারতেন; অনেক সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন) স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের যে দলাদলি ছিলো, তাতে অমুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন। তাই তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর দেশের সেনাবাহিনীতে অমুক্তিযোদ্ধা (বিজয় দিবসের পর পাকিস্তান ফেরত সেনা সদস্য) অফিসারদের উন্নতির সূচকে ছিলো উর্দ্ধগতি। বলা হয়ে থাকে এরশাদ কৌশলে জিয়া হত্যার দায় মেজর মঞ্জুরসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার উপর চাপিয়ে তাদের দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এতে সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা হীনবল হয়ে পড়েন। অন্যদিকে এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাদে) হত্যকারীদের দায়মুক্তির অধ্যাদেশ বহাল রাখেন এবং খুনীদের বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুতাবাসের বড় বড় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। ৭৫-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনী সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশে-বিদেশে পালিয়ে থেকেছেন, তাদের আগের বেতন দিয়ে এভাবেই পুনর্বাসিত করেন এরশাদ। একাত্তর, পচাত্তরে এরশাদের ভূমিকার বিস্তারিত বিবরণ জানা যাবে সদ্য প্রয়াত কর্নেল (অব.) সাফায়াত জামিল বীর বিক্রমের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা, নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি বই থেকে। তাতে দেখা যায়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত পচাত্তরের ঘটনাপ্রবাহে এরশাদের ভূমিকা ছিলো রহস্যজনক।

খুনিচক্রের সাথে এরশাদের এক ধরনের যোগাযোগ ছিলো। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ এসব ভুলে এখন জাতীয় পার্টির সাথে গাটছড়া বেঁধেছে। এতে জোট রাজনীতির হাটবাজারে পতিত স্বৈরাশাসক এরশাদের রাজনৈতিক মূল্য বাড়ছে (আওয়ামী লীগ- বিএনপির কাছে, জনগণের কাছে মনে হয় অতোটা নয়)। ক্ষমতায় থাকাকালে পচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারগুলোর মতোই পাকিস্তানপন্থী অবস্থান ধরে রাখা এরশাদ (রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কায়েম, রোববারের সরকারি ছুটি শুক্রবারে নেয়া, যদিও পাকিস্তানে এখনও ব্রিটিশ ভারতের মতোই রোববারে সাপ্তাহিক ছুটি) আজ ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই সেলুকাস, বিচিত্র এই দেশ! বিচিত্র এ উপমহাদেশ! স্বার্থের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিছু নয়।

এদেশে ক্ষমতার রাজনীতি-ই সবার আগে। ভারতের কাছে আগে ক্ষুদ্র প্রতিবেশিকে ঠকিয়ে কিভাবে নিজেদের স্বার্থ আদায় করা যায়। তাই, জয়তু এরশাদ! জয়তু ভারত রাজনীতি! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।