ফেসবুক থেকে চায়ের দোকান—সব আলোচনাতেই এখন স্পট ফিক্সিংয়ের দারুণ বাজারদর।
কিন্তু কাকা পড়েছেন সমস্যায়—এই বাজারে ঠিক তাল মেলাতে পারছেন না। হ্যাঁ, আমার সেই সাবেক ক্রীড়াসাংবাদিক কাকা। যেহেতু এসব বিষয়ে আলোচনায় তাঁকে থাকতেই হয়, তাই নিতান্ত বেগতিক অবস্থা দেখে ফোন ঠুকে দিলেন, ‘আচ্ছা দেবু, ম্যাচ ফিক্সিং তো আমাদের আমলেও ছিল। এই স্পট ফিক্সিংটা কবে থেকে শুরু হলো?’
: কেন? সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় থেকে।
: মানে কী! লর্ড ক্লাইভ স্পট ফিক্সিং করেছিলেন বলতে চাস?
: তা জানি না। মীরজাফরকে ফিক্সার হিসেবে রাখতেও পারেন। তবে সে আমলে ফিক্সিংয়ের প্রমাণ অন্য জায়গায়।
: কোথায়?
: আমির খানের লগন দেখেননি? ব্রিটিশরা যে আমিরদের টিমে একটা ফিক্সার ঢুকিয়ে দিল, যে কিনা নিজের দলের বিপক্ষেই কাজ করছিল। ওই হলো জানামতে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ফিক্সার।
কাকা ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন। আপনারাও মেনে নিতে পারেন। ভারতীয়দের ফিক্সিংয়ে হাতেখড়ি আসলে সেই ‘ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ’ থেকেই; আমির খান তো সিনেমায় তা-ই বলছেন। ফলে, শ্রীশান্তদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
শ্রীশান্তের দোষ কী, তা নিয়ে অবশ্য কাকাও দারুণ ভাবিত।
তিনিও খুব করে ধরলেন, ‘শ্রীশান্ত অন্যায়টা কী করেছে, একটু বুঝিয়ে বল তো। ’
সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। বললাম যে ৪০ লাখ রুপি নিয়ে শ্রীশান্ত এক ওভারে ১৩ রান দিয়েছে, এটাই ওর দোষ।
কাকা ভয়ানক অবাক, ‘এটার জন্য শ্রীশান্তকে টাকা দিল কে? কে সেই নির্বোধ?’
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা, ‘কেন, কাকা?’
‘আরে, ও তো বিনা টাকাতেই ওভারে ১৭-১৮ করে রান দেয়। ওকে ১৩ রানের জন্য আবার টাকা দেওয়া লাগে নাকি!’
কথাটা কিন্তু ভেবে দেখার মতো।
শুধু কাকা নন; অনেকেই দেখলাম এই লাইনে ভাবছেন, এক ভারতীয় সমর্থক তো টুইট করেছেন—ওভারে ১৩ রান দিয়ে শ্রীশান্ত পায় ৪০ লাখ টাকা। আর বেচারা আশীষ নেহরা; একই কাজ দিনের পর দিন ফ্রি করে যাচ্ছে!
এসব শুনে কাকা এবার স্বভাবসুলভ দার্শনিক ভাব ধরলেন, ‘দ্যাখ, শ্রীশান্তের কাছ থেকে একটা ব্যাপার শেখার আছে। ’
‘কী! কী!’
‘যার যেটা গুণ, সেটা ফ্রি করা উচিত না। ওর গুণই হলো খারাপ খেলা। ও সেটা করেই টাকা কামাচ্ছে।
’
আবারও দারুণ ভাবার মতো কথা।
কিন্তু ভাবার আর সময় পেলাম কোথায়। পরপরই কাকার আবার প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, ওই যে তোয়ালে নিয়ে কী একটা শুনলাম; ওটা কী?’
‘কিচ্ছু না। শ্রীশান্ত তোয়ালে কোমরে গুঁজে বুঝিয়েছে, কাজটা করবে। ’
‘তাহলে তোয়ালে আজকাল ভারতে বেশ বড় ভূমিকা রাখছে, বল!’
‘কীভাবে বুঝলেন?’
‘না বোঝার কী আছে? রণবীর কাপুর তোয়ালে পরে নেচে তারকা হলো, সানি লিওন তোয়ালে না পরে তারকা হলো।
আর শ্রীশান্ত তোয়ালে কোমরে গুঁজেই...’
নাহ্। কাকার সঙ্গে আলাপ আর বাড়ানো ঠিক হবে না। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে। শ্রীশান্তের বিষয়ে সানি লিওন চলে এসেছে; এরপর না জানি, আবার আমাদের ফেরদৌসও জড়িয়ে যায়!
ওর চেয়ে বরং ভারতে স্পট ফিক্সিংয়ের সর্বশেষ অবস্থাটা দেখে আসা যাক।
সর্বশেষ অবস্থা আর কী? এদিকে জামাই গুরুনাথ মেইয়াপ্পান ধরা পড়ায় বিপদে পড়েছেন বিসিসিআইয়ের ‘ওএসডি’ সভাপতি শ্রীনিবাসন; ওদিকে স্বামী কুন্দ্রা গ্রেপ্তার হওয়ায় বিপাকে শিল্পা শেঠি।
শিল্পা শেঠির দল রাজস্থান রয়্যালস আর শ্রীনিবাসনের দল চেন্নাই সুপার কিং অবশ্য সব তথ্যপ্রমাণ গিলে খেয়ে বিবৃতি দিয়েছে, গুরুনাথ বা কুন্দ্রা তাদের দলের তেমন কেউ ছিলেন না। তাদের দলের ওপর তেমন কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। তাদের দলের মালিক আলাদা।
এখন শ্রীনিবাসন আর শিল্পা নাকি একটা যৌথ বিবৃতি দেবেন:
‘গুরুনাথ বা কুন্দ্রা আমাদের পরিবারের তেমন কিছু ছিলেন না। পরিবারে তাঁদের তেমন কোনো কর্তৃত্ব ছিল না।
এমনিতেই আমাদের সঙ্গে ঘুরতেন মাত্র। আমাদের পরিবারের মালিক আলাদা। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।