নিজেকে নিয়ে ভাবছি
সমসাময়িককালে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়জন অকৃত্রিম বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর নাম অনায়াসে উচ্চারণ করা যায়, যুক্তরাজ্যের প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সে দেশের মানবাধিকারবিষয়ক সংসদীয় দলের বর্তমান সহসভাপতি লর্ড এরিক এভেবুরি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে দীর্ঘ আট বছর লিবারেল পার্টির ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের চিফ হুইপের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র তথা মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠার কাজে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। লর্ড এরিক এভেবুরি মৌলবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদবিরোধী তথা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সপক্ষে একজন সহযোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত ও সমাদৃত।
দেখুন কালের কন্ঠের সাথে তার সাক্ষাৎকার। পুরোটা দেখুন
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ বেশ গভীর। এই বিচারের নিরপেক্ষতাকে আপনি কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?
লর্ড এভেবুরি : আপনি হয়তো জানেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে অপরাধের বিচারে আইনের বিশেষ কিছু বিধিরও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যা আপনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) যে কনভেনশন রয়েছে সেখানে স্পষ্টতই দেখতে পাবেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই কনভেনশনই মূলত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং সুবিচারের মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং গ্রহণযোগ্য। আমরা আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনকে (আইবিএ) অনুরোধ করেছিলাম বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের আইনটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য।
তারা দেখতে পেল যে, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা লাভের জন্য বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল আইনে বেশ কিছু সংশোধনীর প্রয়োজন, যেগুলো সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সুপারিশ হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এটা খুব হতাশাজনক যে সরকার আইবিএর সুপারিশগুলোকে কোনো ধরনের আমলেই নেয়নি। সুপারিশকৃত সংশোধনগুলো করা হলে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রক্রিয়াকে নিন্দা বা সমালোচনা করার কোনো কারণই কারোর থাকত না।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশে গঠিত যুদ্ধাপরাধ আদালত এবং এর প্রক্রিয়াকে আপনি সমর্থন করেন কি?
লর্ড এভেবুরি : ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আদালতকে আমি আন্তরিকভাবে সমর্থন করি। তবে আমি এখনো আশা করব যে, বাংলাদেশ সরকার আইবিএ কর্তৃক দেওয়া সুপারিশগুলো সংশোধনের লক্ষ্যে পুনর্মূল্যায়ন করবে।
কালের কণ্ঠ : সুবিচার ও নিরপেক্ষতাকে নিশ্চিত করতে সরকার তো এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু সংশোধনী এনেছে। এগুলো কি যথেষ্ট নয়?
লর্ড এভেবুরি : আইবিএ তো তাই বলছে! আইবিএ যে সম্পূরকমূলক কিছু সুপারিশ করেছিল, সেগুলোর কোনো সংশোধন করা হয়নি। আমরা সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার হোক, তবে বিচারের আইনগত প্রক্রিয়াগুলো যেন সব ধরনের সমালোচনার উর্দ্ধে থাকে। আমার ধারণা, আইবিএর সুপারিশগুলো সংসদের আইনপ্রণেতারা একটু সময় দিলেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
কালের কণ্ঠ : বিশ্বের এমন কোনো বিচার হয়েছে কোথাও, যা সমালোচনার উর্দ্ধে ছিল?
লর্ড এভেবুরি : আসলে সময়ের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীতিগতভাবে আইনের ধারাগুলোরও উন্নতি সাধন করেছে, যার বর্তমান রূপ হচ্ছে আইসিসির কনভেনশন।
এই কনভেনশনকে মডেল হিসেবে মেনে নিয়ে আইবিএর সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্তু আমার ঠিক বোধগম্য নয় কেন বাংলাদেশ সরকার তা করছে না!
কালের কণ্ঠ : বিশ্বের এমন কোনো যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আছে, যেখানে অপরাধী ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে? যদি না পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন ৭৩-এর প্রণীত আইনে সে ধরনের ধারা যোগ করবে?
লর্ড এভেবুরি : আমি মূলত কোনো আইনবিশেষজ্ঞ নই; তার পরেও আমার মতে ব্যাপারটা খুবই সাদামাটা এবং স্বাভাবিক। কারণ যেভাবেই হোক, সবারই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুপারিশকৃত আইসিসি মডেলকে অনুসরণ করা উচিত। আমার পরামর্শ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনজীবী_তথা বিশেষজ্ঞদের অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা এড়াতে, যদি সম্ভব হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে এই মডেলকে অনুসরণের চেষ্টা করা উচিত।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।