একজন স্বনাম ধন্য কলাম লেখক বলেছেন, ‘তবে এবার চারটি সিটি কর্পোরশন নির্বাচনে খুবই খারাপ একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, তাহোল একটি বিশেষ মহল সিটি কোর্পোরশন নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করছে। বাস্তবে কোন খারাপ বিষয়কে যদি কোন রাষ্ট্র বা সমাজের কোন অঙ্গে চালু করা হয় তাহলে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কষ্টের। যদি খারাপ কিছু চালু করা যায় সহজে কিন্তু মুক্তি পেতে অনেক মূল্য দিতে হয়। ’ (স্বদেশ রায়- জনকন্ঠ-১৩/৬/০১৩)।
অনেক মুল্যবান কথা।
আর এটাতো শুভ বুদ্ধির কথা। যারা শুভ বুদ্ধি নাশ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ইংরেজের ‘ডিভাইড এ্যান্ড রুল পলিসি’ কার্যকর করে, জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব ভিত্তিক রাজনীতি চালু করেছে, তারা কি ‘ধর্মের কাহিনী’ শুনবে? নাকি শুভ বুদ্ধির কোন মূল্য দেবে? তারা হাড়ে হাড়ে রপ্ত করেছে, ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে। ’ যে সব অশ্রাব্য কথা বললে ভোট পাওয়া যায়, সে কথা তারা বলবেই। যে ধূয়া তুললে প্রতিপকে নাজেহাল করা যায়, সে ধূয়া তারা তুলবেই। কেননা মতাই তাদের মোধাম।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমিও স্বাধীনতার নেতৃত্বদান কারি দলের প হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলাম। সে অভিজ্ঞতা নিদারুণ। বিস্মিল্লাহর নামধারি সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার কারিরা বললো, ‘নৌকায় ভোট দিলে দেশে ধর্ম থাকবে না, ইসলাম থাকবে না, মাথায় টুপি থাকবে না, মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি বাজবে। সন্তানের নাম ‘রহিম- করিম’ রাখতে পারবেন না, রাম-শ্যাম যুদ-মধু’ রাখতে হবে’।
বক্তা হিসেবে আমার কিঞ্চিৎ সুনাম থাকলেও ঐদিন আমি বোবা বনে গিয়েছিলাম।
ধর্মের নামে ওষুধ বিক্রির মত এমন ঢালাও অপপ্রচারের জোর দেখে লা-জওয়াব হয়ে গিয়েছিলাম। যিনি এই প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার পরণে ছিলো ইউরোপীয় সাহেবদের পোষাক, তিনি কয়েকটি সিনেমা হলের মালিক, তার সিনেমা হলের ওয়ালে চোখ ধাধানো নায়িকাদের নগ্ন পোষ্টার লাগানো থাকে। আমাদের ধর্ম প্রাণ আলেমগণ এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত দিয়ে চোখ ঢেকে দ্রুত চলে যান। তার মুখমন্ডল ইংরেজ সাহেবদের মত মসৃণ। চুলে কলপ লাগানো।
তাহলে বুঝুন, শুধু ভোট সংগ্রহ করার জন্য ধর্ম নিয়ে এতবড় ফেরেবজাজী। আমার এক প্রাক্তন ছাত্র আমাকে বললো, ‘স্যার, আমি নিজে ঢাকার একটি জনসভায় শুনেছি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামীলীগ মতায় আসলে বিসমিল্লাহ থাকবে না। ’
জানিনা কথাটা সত্য কি মিথ্যা। সত্য হলে বুঝতে হবে রাজনীতিকে কলুষিত করার জন্যই ধর্ম টেনে আনা হয়। তাই গয়েশ্বর বাবুও বিসমিল্লাহর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
যেখানে মুসলিম লীগের রাজনীতির ম্যান্ডেট ছিলো দ্বি- জাতি তত্ত্ব। জিন্নাহ, খাজানাজিমুদ্দীনরা ইংরেজকে নয় হিন্দুদের প্রতিপ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেখানে আবার যোগেন্দ্র নাথ মন্ডলকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। রাজনীতিতে ধর্মের বাহানা তুললে এমনই উলঙ্গ স্ববিরোধিতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর এলাকার একটি উপজেলায় দেখেছিলাম এমন একটি পোষ্টার, ‘ইসলাম রা করতে হলে কালীপদ মন্ডলকে হারিকেন মার্কায় ভোট দিন। ’
ব্যক্তি জীবনে শেখ হাসিনা অনেক বেশি ধর্ম চর্চা করেন খালেদা জিয়ার চেয়ে।
শেখ হাসিনাকে অনেকে রণশীল মুসলিম মহিলা বলেন। অথচ প্রতিপকে জব্দ করার কৌশল হিসেবে খালেদা জিয়া গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের নাস্তিক বলে অপবাদ দিলেন। বিএনপির সমর্থক-ভোটার-কলাম লেখক ও টকশোওয়ালাদের মধ্যে নাস্তিকের অভাব নেই।
বিস্ময়ের সঙ্গে ল্য করলাম যে, চারটি সিটি কর্পোরেশ নির্বাচনে বিএনপির প্রচারণা কারিরা ধর্মের অপপ্রচার ছড়াচ্ছে এবং যথারীতি নাস্তিক-আস্তিকের প্রশ্ন তুলছে। এক সরেজমিনের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ‘সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্ম ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল এই চারটি সিটি কর্পোরেশনেই ১৮ দলীয় জোটের পে মাঠে নেমেছে ধর্মের ধ্বজাধারীরা। তারা ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। এধরনের প্রচারনা নিরপে নির্বাচনের েেত্র সংশয় সৃষ্টি করেছে বলে ১৪ দলের প থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। ....................
গত সোমবার খেলাফত মজলিশ সিলেট মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত সভায় খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্য মোহাম্মদ মাস উদ খান আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে আস্তিক এবং নাস্তিকদের চিহ্নিত করার নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে বাতিলের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় সত্যের বিজয়ের নির্বাচন।
তিনি ধর্মকে রার জন্য বিজয়ের প্রথম ধাপ হিসেবে ১৮দলীয় জোট প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন। ’ (সৈকত চৌধুরী- জনকন্ঠ- সাময়িকীর পাতা-৭/৬/০১৩)।
পত্রিকায় এও দেখেছি যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের পে হিন্দু সংখ্যা লঘুদের ভোট কুড়ানোর জন্য মাঠে নেমেছেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপির দু’জন সাবেক মন্ত্রী । এর ব্যাখ্যা কী হতে পারে? বিএনপির আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা, সাবেক আমলা ও মন্ত্রী এম, কে, আনোয়ার বলেছেন, ‘গত ৫মে হিন্দুরা পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে দিয়েছে।
’ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা দল মুসিলম লীগের মতই বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ক্রুদ্ধ হিন্দু বিদ্বেশী তাতো এম, কে আনোয়ারের অভিযোগে প্রকাশ পেয়েছে। আর ‘নাস্তিক’ অভিযোগটা পরোভাবে অমুসলমানদের ওপরই গিয়ে পড়ে। তদুপরি ১৮ দলের মধ্যেতো একটি সেুক্যুলার দলও নেই। তাহলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নিতাই রায় কেমন করে, কোন যুক্তিতে, কোন অর্থে ১৮ দলের রাজনীতি করেন? ভোট প্রার্থনা করেন?
অবশ্য নির্বাচনে যুক্তির চেয়ে শক্তির প্রকাশ ঘটে বেশি। এবং সেটা চোয়ালের শক্তি।
কৌশলটা হচ্ছে এক দিকে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালিয়ে মুসলমান ভোট-সংগ্রহ করা অন্য দিকে হিন্দু এজেন্ট দিয়ে হিন্দু ভোট সংগ্রহ করা। এমন ধাপ্পাবাজি রাজনীতিতেই শোভা পায়, পবিত্র ধর্মে শোভা পায় না। এ জন্য স্বয়ং আল্লাহর রাসূলও ধর্মকে রাজনীতির জটিলতা থেকে আলাদা রেখেছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার েেত্র তিনি অমুসলমানদের ও গুরুত্ত্ব দিয়েছিলেন। মহানবীর (দঃ) হুদায় বিয়ার সন্ধী একটি অসাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিক দলিল।
দয়া করে রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় রাখুন, ধর্মকে ব্যক্তি জীবনে পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে মাথার মুকুট হিসেবে রাখুন। মওলানা ভাসানী এক জায়গায় বলেছেন, ‘যাদের নিজেদের ঈমানের জোর কম, তারাই পরের ঈমান নিয়ে কটা করে। ’ মওলানা ভাসানীর কথাটুকুর তাৎপর্য সকল পরেই অনুধাবন করা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।