আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড: মেরুদন্ডের খোঁজে! (পর্ব - ১)

ব্লগিং হোক আগামীর... শুরুর কথা যখন থেকে খারাপ ভালো বিচার করতে শিখেছি, ঠিক তখন থেকেই একটা বিষয় নিয়ে সবসময়ই অভিযোগ ছিল। সেটা হলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। ধারনা করছি, দেশের সচেতন নাগরিকদের অভিযোগের তালিকায় শিক্ষাব্যবস্থাই প্রথমে থাকবে। (দ্বিতীয়তে থাকবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর সামগ্রিকভাবে অবশ্যই দুর্নীতি!) বিষয়টা নিয়ে এতটাই হতাশ এবং উদ্বিগ্ন থাকি যে মনে পরলেই উত্তেজনায় ছটফট করি। অভিযোগ আর সুন্দর করে গুছিয়ে বলা হয় না।

হঠাৎ করে সরকারই এই সুযোগটা করে দিলো! মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে সরকারের তুঘলকি সিদ্ধান্ত আবার রাগটাকে ফুসিয়ে তুলেছে। কেউ যেন আবার মনে করবেন না যে এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করতে চাইছি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট সংকট আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক দৈন্যদশার প্রতিচিত্র মাত্র। বলতে চাইছি সামগ্রিক অবস্থাটাই। প্রসংগক্রমে মেডিকেল কলেজের ভর্তিও চলে আসবে।

যেহেতু এইবার সুন্দর করে বলতে চাই, ভাবছি পর্ব আকারেই দেব। লিখছি আসলে নিজের জন্যই, নিজের মতামতটা সবার সাথে যাচাই করে নিতে পারবো। সুতরাং সবাই যদি ধৈর্য্য ধরে পর্বগুলি পড়ে আপনার মতামত দেন, তাহলে একটা ভালো আলোচনা হতে পারে। আর সামু ছাড়া এইরকম প্লাটফর্ম আর কোথায় পাব! শুরুটা করতে পারি উন্নত দেশের (নাগরিক সুযোগ সুবিধার দিক বিবেচনা করে) শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের ধারনা একটু ঝালাই করে। তানাহলে সবাইকে হয়তো বোঝাতে পারবো না।

আসুন শুরু করা যাক... মানবশিশুর শিক্ষা শুরু হয় মায়ের পেট থেকে। প্রথমে সে লাথি মারতে শেখে! ভূমিষ্ট হওয়ার পর একটা বয়সে শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মোটামুটি সবদেশেই এর গ্রহনযোগ্য বয়সসীমাটা পাঁচ এর পর। একে বলে স্কুল। স্কুল শব্দটা খুব জরুরী, কারন আমার অভিযোগ শুরু হবে এখান থেকেই! স্কুল শব্দের অর্থটা আমরা বুঝতে চেষ্টা করি School of Thought এর ধারনা থেকে।

একটা রাষ্ট্রের স্কুল গুলোতে common স্কুল অফ থট এর চর্চা থাকে। এর উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে একই ধ্যন ধারনায় দিক্ষিত করা। নূন্যতম কিছু বিষয়ে নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আসলে রাষ্ট্রের অস্থিত্বই সংকটপূর্ন থাকে। যেমন – আমরা সকলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং স্বাধীনতা যুদ্ধই আমাদের গোড়া, এই দর্শনে যদি কেউ ঐকতানে আসতে না পারে তাহলে তার এই দেশের নাগরিক থাকার কোনো অধিকারই নেই! তারমানে এই নয় যে বৈচিত্র থাকবে না। অবশ্যই থাকবে।

কিন্তু বৈচিত্রের উদ্দেশ্য হবে সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন। রাষ্ট্রকে বিশৃঙ্খল করা অবশ্যই নয়। এই কমন স্কুল অফ থট এবং বৈচিত্রময় নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিরাট ব্যর্থতা আছে! স্কুল তো শুরু হইলো। স্কুল খুইলাছে রে মাওলা স্কুল খুইলাছে..! এবার আসবে এটা কতদিন ধরে চলবে সেই প্রশ্ন। উন্নত রাষ্ট্রগুলিতে প্রাথমিক শিক্ষার সময়কাল ধরা হয় মোটামুটি ১২ বছর ব্যপী।

স্কুলিং বিষয়টাকে তারা এতটাই জোর দেয় যে তাদের সবরকম চেষ্টা থাকে কিভাবে পোলাপানকে ক্লাসে ধরে রাখা যায়। তাদের স্কুলগুলির গল্প শুনতে এত হিংসা লাগে যে চোখে পানি চলে আসে! উপরের ক্লাসগুলিকে ওরা বলে হাইস্কুল (আমরা যেটাকে বলি কলেজ)। যে প্রাথমিক শিক্ষাটুকু শেষ করতে পারলো তাকে ওরা বলে হাইস্কুল গ্রাজুয়েট। এটাও ওদের একটা ভালো যোগ্যতা! প্রাথমিক শিক্ষাটুকু সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার। হাইস্কুল গ্রাজুয়েট হওয়ার পরই ওরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

এটাকে বৈচিত্রের পরিনতি বলা যায়। বৈচিত্রের শুরুটা স্কুলের প্রথম দিন থেকেই! এখানে বলে রাখা ভালো যে হাইস্কুল পর্যন্ত সবাই মোটামুটি একই জিনিসই পড়ে। আমাদের মতো ক্লাস নাইনে এসেই বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয় না। হাইস্কুল গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন ভাগগুলি বলি। আমাদের মতো ওরা গনহারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না।

ওদের সরকারের কাছে কঠিন পরিসংখ্যান থাকে, ঠিক কতজন ছাত্র প্রতিবছর হাইস্কুল গ্রাজুয়েট হবে। কতজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। কতজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি না হয়ে অন্যভাবে পড়াশোনা করবে। কতজন আর পড়াশোনা করবে না, পেশা জীবনে ঢুকে যাবে। বলে রাখা ভালো, ঠিক কতজনের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে সেই পরিসংখ্যানও থাকে, ব্যবস্থাও থাকে।

যার কারনে খুব বেশি মানুষকে বেকার থাকতে হয় না, চাকরির বাজারে হুড়াহুড়িও করতে হয় না। আমাদের দেশের পরিসংখ্যান যারা করেন, তারা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে তাদের পরিসংখ্যান ১০% হলেও সঠিক! ফাঁকে বলে নেই, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রক্রিয়াটা ভিন্ন। উদাহরন দিতে পারি SAT এর কথা বলে। SAT GMAT GRE এগুলোকে বলে Aptitude Test । অর্থাৎ একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করার জন্য যোগ্য কিনা তা যাচাই করা হয় এই পরীক্ষার দ্বারা।

Aptitude Test সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন এই ঠিকানায়... Aptitude Aptitude Test এই বিষয়ে বিস্তারিত পরে কোনো পর্বে বলবো। যা বলছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তারাই যারা সবচেয়ে মেধাবী, পরিশ্রমী এবং সৃষ্টিশীল। তাদের একটা অনুসন্ধিৎসু মন থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা হওয়ার কথা গবেষনাধর্মী। প্রতিনিয়ত সেখানে নতুন কিছুর সংযোজন হতে থাকবে।

এদেরকে বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট। পড়াশোনা হয় নির্দিশ্ট বিষয় ভিত্তিক। যেমন- শুধু পদার্থবিজ্ঞান বা সাহিত্য। সাথে বিষয়ের বাইরেও কিছু কোর্স থাকে। সময়কাল হয় ৪ থেকে ৫ বছর।

পোস্টগ্রাজুয়েট ধরলে আরও ১ থেকে ৫-৬ বছর। গবেষনা সারাজীবনই চলবে! শুধু পড়াশোনাটা হবে একটি নির্দিশ্ট দিকে। লক্ষ্য গবেষনা। এখানে যারা পড়বে, তাদের দায়িত্ব হবে সারাজীবন উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নকে বৃদ্ধি করা। গবেষনাই এদের রুটি রুজি! বলা বাহুল্য আমাদের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ধারে কাছেও নেই!! থাকবে কি করে?! ছাত্র-শিক্ষক মিলেই না বিশ্ববিদ্যালয় হয়।

যেখানকার ছাত্র-শিক্ষক যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তেমনই হবে! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া (কিংবা প্রাথমিক শিক্ষার পরে যে কোনো পড়াশোনা) ওদের কাছে একধরনের Privilege। সবাই উচ্চ পর্যায়ে পড়াশোনা করবে তাতো হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক খরচের ব্যপার। সরকার এতটাকা খরচ করবে শুধু মেধাবীদের পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটা একধরনের স্কলারশিপের মতো।

যারা বাপের টাকায় পড়বে তাদের কথা ভিন্ন। বলে রাখা ভালো, ঐসব দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলেই ভালো ছাত্র হতে হয়, শুধু বাপের টাকা থাকলেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পরের কোন পর্বে বিস্তারিত বলবো। এবার আসি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না তারা কি করে? এদের একটা অংশ যায় বিভিন্ন পেশা ভিত্তিক ডিগ্রিতে। যেমন- ডাক্তার হতে চাইলে মেডিকেল কলেজ (ওরা বলে স্কুল!), ইন্জিনিয়ার হতে চাইলে ইন্জিনিয়ারিং কলেজ, ল’ইয়ার হতে ল’স্কুল ইত্যাদি।

এর পরে আসতে পারে তাদের কথা যারা পড়ে বিভিন্ন কলেজে। এই কলেজগুলি ঠিক গবেষনার জন্য তৈরি না। তবে এখানেও বিষয়ভিত্তিক পড়া হয়। তবে ফ্যাকাল্টি ভাগ করা থাকে। যেমন- সায়েন্স ফ্যাকাল্টির একজন ছাত্র পদার্থ, রসায়ন সবই পড়তে পারবে।

এখানে আবার মেজর, নন-মেজর কিছু ব্যপার আছে। পড়াশোনার ব্যপ্তি হয় ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত। খুটিনাটি, বিস্তারিততে যাচ্ছি না। কারনটা শেষে বলছি। কলেজে পড়ার উদ্দেশ্যটা থাকে পড়াশোনার মাধ্যমে ম্যচুরিটি বাড়ানো, শুদ্ধ ভাষায় বললে, মনের ব্যপ্তি বাড়ানো! এটা গুরুত্বপূর্ন এই কারনে যে সবাই গবেষনা করলে তো হবে না।

দেশ চালাতে নেতৃত্ব দরকার। নেতৃত্ব দিতে হলে ম্যচুরড মানুষ দরকার! খুব আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান হয়তো এই কলেজ গুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে! হয়তো বা এরও নিচে!! তবে আমাদের দেশের জন্য এটাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজগুলির সাথে তুলনা করাটাই সম্মানজনক হবে! (যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাটা আমার কাছে তুলনামূলকভাবে কঠিন মনে হয়। এটা নিয়ে আরেক পর্বে...) এবার আসি যারা কলেজেও পড়ে না তারা কি করে। তাদের জন্য একটা সুন্দর ব্যবস্থা আছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং বা প্রচলিত ডিপ্লোমা। আমাদের দেশেও আছে ডিপ্লোমা নামে, যাদের দিকে অনেক নাক উচু ছাত্ররা করুন চোখে তাকিয়ে থাকে।

টেকনিক্যাল বিষয়ে ট্রেনিংটা পুরোপুরি কর্মমুখী। যারা এসব কিছুই করে না তাদের কি কোনো উপায় নেই? আছে। আমাদের দেশের মতো টাইপিস্ট এর চাকরির জন্য মাস্টার্স পাশ ছাত্র ওরা খুজে না। ১২ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার পরই একজন তার যোগ্যতা অনুসারে ভালো একটা চাকরি পেতে পারে যেখানে পড়াশোনার কাজ আছে। আর চাকরিতে ঢোকার পর প্রফেশনাল ট্রেনিং তো আছেই।

অনেক ক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই এই ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে। আর যারা কলম ঘুরিয়ে খাবে না বলে পণ করেছে তাদের জন্যও আছে অনেক ব্যবস্থা। জানেন নিশ্চয়ই ঐ দেশের মোটামুটি মানের হোটেলের একজন শেফও আমাদের একজন সচিবের মতো বেতন পেয়ে ভালো ভাবেই জীবন নির্বাহ করতে পারে। তবে তার জন্য প্রশিক্ষন নিতে হয়। সেটাও আসলে একধরনের পড়াশোনাই! পড়াশোনা বাদ দিয়ে নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে জীবনে সফল হওয়া লোকের সংখ্যাও কম না।

আমি বলছি না তাদের দেশে কোনো বেকার নেই বা ছিনতাইকারী নেই। কিন্তু এটাও সত্য তাদের কোনো মাস্টার্স পাশ বেকার বা কেরানী নেই, ফপর দালাল নেই। অনেকে বলতে পারেন আমি শুধু রুটি রুজিকেই সফলতা ধরছি কেন। এখন যদি বলি শিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞানঅর্জন, তাহলে হয়তো অনেকে আমাকে গালি দিবেন। আইছে আরেকটা, চুশীল!! উপরের যা কিছু বললাম, এটা একধরনের ধারনা মাত্র।

একেবারে রেফারেন্সসহ তথ্য দিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিনি। বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সময়ে যা জেনেছি তার একটা ধারনা বা মডেল দেয়ার চেষ্টা করলাম। আমাদের দেশের শিক্ষার মান এত নিচে নেমে গেছে যে উন্নত একটা শিক্ষা ব্যবস্থার ধারনার কাছাকাছি পৌছাতেও অনেক সময় লেগে যাবে। তবে কেউ যদি কোনো রেফারেন্স সহ তথ্য শেয়ার করতে চান, দয়া করে কমেন্টে আপনার বক্তব্য দিন। আমরা একটা আলোচনায় আসতে পারি, যদিও পরিবর্তনের আশা করছি না! অনেকে হয়তো কিছু কথাকে আক্রমনাত্নক ভাবতে পারেন।

তাদের বলবো, ধৈর্য্য ধরুন। সবগুলো পর্ব শেষ হোক। আমার মনোভাব পরিস্কার হবে। আপনাদের মতামত পরের পর্বগুলিতে যোগ করে দেবো। আপাতত এই পর্যন্তই! চলবে.... পরের পর্ব  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.