সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই জাতিকে সু-শিক্ষিত করতে হলে প্রয়োজন ভালো শিক্ষকের। একজন সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষককই পারেন তার ছাত্রকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। কিন্তু আমাদের অবস্থা হয়েছে গোড়াতেই গলদ।
আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আজ যে শিশুটি শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হচ্ছে প্রাইমারী স্কুলে, সে কি শিখছে? তার শিক্ষকই বা কতটুকু সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ? আমাদেরকে অবাক করেছে এর উত্তরগুলি। গত ২০ মে ২০০৭ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টি·আই·বি) এর সহযোগীতায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পরিচালিত রিপোর্ট কার্ড জরিপে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির উৎঘাটিত চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাদের রিপোর্টে ভেসে উঠেছে সরকারি প্রাইমারি ও বেসরকারি রেজিষ্টার্ড প্রাইমারি বিদ্যালয়ে অবৈধ ভাবে নানারকম ফি নেওয়া, শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, প্রায় নিষ্কৃয় এস এম সি সহ নানা প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। যা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে ফেলেছে। রিপোর্ট কার্ড জরিপে দেখা যায় ২০০৫ সনে গবেষণা এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ফি হিসেবে ৫ ল ৫৪ হাজার ৬৬৭ টাকা আদায় করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২৯ ভাগ খানার ছাত্র-ছাত্রীরা যারা প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের অধীনে উপবৃত্তি পাচ্ছে তাদের মধ্যে শতকরা ৬৮ভাগই সরকার নির্ধারিত টাকা থেকে গড়ে ৫৪৬টাকা কম পেয়েছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে শর্তাবলীর কঠোরতার কারণে ২০০৫সালে শ্রীমঙ্গলে উপবৃত্তির মোট ২৯ ল ৬০হাজার ৫৮৭ টাকা বিতরণ করা হয়নি। দেশের মাত্র একটি উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডের ২০ টি মহল্লায় ১১৮টি খানা এবং ৯টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ২৪৭টি খানার এই তথ্য চিত্রের দিকে তাকিয়ে আমরা যদি বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করি তাহলে যে কোন সুস্থ মানুষকেই ভাবিয়ে তুলবে। বিদ্যালয়ে পাঠদানরত শিক্ষকরাই যদি সম্পৃক্ত থাকেন দুর্নীতির সঙ্গে তাহলে শিশুরা তাদের নিকট থেকে কি শিখবে। টি·আই·বির এ জরিপ কার্ডে আরোও দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈতনিক হলেও গবেষণা এলাকার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১০টি খাতে বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে।
আমরা আরোও হতবাক হই যখন দেখতে পাই প্রতি শ্রেণীতেই প্রায় ৯৯% ক্ষেত্রেই ১ম সাময়িকি পরীক্ষা, ২য় সাময়িকি পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি হিসেবে সরকার নির্ধারিত ফি অপো অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করা হচ্ছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিনামূল্য বই প্রাপ্তি ও বার্ষিক খেলাধুলার ফি হিসেবেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। রিপোর্ট কার্ড জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৯% উত্তরদাতা জানিয়েছেন তারা প্রদত্ত চাঁদার বিপরীতে কখনই রশিদ পাননি। টি·আই·বির এই রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার মতা গ্রহণের পর ঢাকডোল পিঠিয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি বিরোধী যে অভিযান শুরু করেছেন তার কোন প্রভাবই পড়ছেনা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। তাই দেশকে দুর্নীতির কালিমা থেকে মুক্ত করতে হলে শুধু বড়বড় রাজনীতিবিধ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের ধরে দুর্নীতির বিচার করলেই হবেনা, অঙ্কুরিত বীজ সঠিক পরিচর্চা করলেই সেই গাছ থেকে ভালো ফসল পাওয়া যায়।
একজন আদর্শ মা’ই পারেন জাতিকে আদর্শ সন্তান উপহার দিতে। তেমনি একজন ভালো সৎ কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষকই পারেন আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আজকের বেড়ে ওঠা শিশুকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। তাই শুধু রিপোর্ট পেশ করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। অভিভাবক মহলও সুশীল সমাজকে উদ্দ্যোগী হয়ে বন্ধ করতে হবে শিক্ষকদের শিক্ষা বাণিজ্য। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত করে নিশ্চিত করতে হবে শিশুদের সু-শিক্ষার পরিবেশ।
তবেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের দুর্নীতি মুক্ত সমাজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।