নিজেকে হয় নাই চেনা
আমারা ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি যে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। এই কথার মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছি অল্প কথায় তা হল, শিক্ষাই হল জাতির অস্তিত্বের মুল স্তম্ভ যা ছাড়া একটি জাতি মাথা উঁচু করে কখনই দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি যে, বহুল প্রচলিত ও অনন্য জ্ঞান সমৃদ্ধ এই বাক্যের অন্তরালে আরও কিছু ভয়ংকর শিক্ষা যে লুকিয়ে আছে তার সন্ধান আজ অবধি কোন পন্ডিত আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা তা আমার অন্তত জানা নেই। আমি দাবি করছি না যে “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” এই কথাটা কোন অংশে ভুল। বরং অন্যান্য পন্ডিত দের সাথে গলা মিলিয়েই বলছি, এটাই পরম সত্য।
এবং এই পরম সত্যের অপর একটি দিক জেনে-নাজেনে অথবা বুঝে-নাবুঝে হয়তোবা জেনে-বুঝেই আমাদের থেকে গোপন রাখা হয়েছে যা আমরা বিন্দুমাত্রও টের পাইনি
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং সে জন্য শিক্ষাই জাতির জন্য একটি কয়েদ খানা, যেখানে সংশ্লিষ্ট জাতি অন্যের দ্বারা সম্পুর্ন প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়। কারো কারো কাছে এই কথাগুলো বড়ই নতুন ও আজব শুনালেও মুলত এটিই নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং সত্য। তবে হ্যাঁ, শিক্ষা তখনই জাতির জন্য কয়েদখানা যখন শিক্ষাটি জাতীয় মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও বিশ্বাস বহির্ভুত কোন আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের কে আলোকিত করতে আসে। আর বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় বাক্যটির এ শিক্ষাটিই আমাদের থেকে যুগ যুগ ধরে আধাঁরের গহীনে রয়ে গেছে, অথবা উদ্দেশ্য মুলক ভাবেই সেটা আমাদেরকে জানানো হয়নি।
অন্ধকার গহীন বনে পথহারানো পথিকের কাছে আলো একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারি বস্তু।
কিন্তু সে আলো যদি ভয়ংকর কোন পরিনতির দিকে পথিক কে ডেকে নিয়ে যায় তাহলে সেই আলোই তার জন্য চরম দুর্ভাগ্যের কারন। যেমনটি আমরা বলে থাকি যে, পানির অপর নাম জীবন কিন্তু এই পানির অতিমাত্রায় আগ্রাসীতা ও অপপ্রয়োগই আবার মৃত্যুর কারন। এভাবে শিক্ষা জাতির জন্য চরম গোলামির চুক্তিনামা, যখন সে শিক্ষা পদ্ধতি বা কারিকুলাম জাতীয় মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও বিশ্বাস বহির্ভুত কোন আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শিক্ষা শুধু জাতির জন্য কয়েদখানাই নয় বরং চরম মগজ ধোলাইও বটে। মানুষের জীবন ইহলৌকিক ও পরলৌকিক এবং অদৃশ্য ও দৃশ্যমান জগতের এক অপরুপ সামঞ্জস্য, এখন শিক্ষা যদি একমুখি বা একপাক্ষিক হয় তথা মানব জীবনের আধ্যাতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি চরম ভাবে পরিলক্ষিত হয় তখন সে শিক্ষা একটি অসামঞ্জস্যতাপুর্ন জীবনের উদ্ভব ঘটায়।
যারা প্রতিনিয়ত মানুষের আধ্যাতিক বিশ্বাসের প্রতি বিদ্রুপ পুর্ন উচ্চারন করেন তারাও সময় বুঝে মানুষের এই আধ্যাতিক ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে জনসাধারনকে ব্ল্যাকমেইল করতে পিছপা হন না। অর্থাৎ মানুষের এই আধ্যাত্মিক বিশ্বাস কোন ফেলনা জিনিস নয়। আরও পরিস্কার ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, মানুষ যতদিন এই পৃথিবীতে বসবাস করবে ততদিন কোন না কোন গোষ্ঠী এই আধ্যাত্বিক জগতের উপর বিশ্বাসী থাকবেই আর তার মানেই হল মানুষের এই আধ্যাতিক বিশ্বাস কে ভিত্তি করে রাজনৈতিক ও অন্য যেকোন ইস্যুতে ব্ল্যাকমেইলিং চলতেই থাকবে অবিরাম। তাই আধ্যাতিক বিশ্বাস মনুষ্য সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যাকে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাদ দিলে সেই শিক্ষা একটি মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সেই মগজ ধোলাই যাকে ইংরেজিতে “ব্রেইন ওয়াশ” বলা হয়।
অন্যান্য জাতির জন্য আর যা ই হোক, মুসলমান জাতির জন্য বর্তমানের প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থ্যা একটি ব্রেইন ওয়াশের কার্যকরি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থ্যাতে ধর্ম শিক্ষাকে একতরফা ভাবে এড়িয়ে গিয়ে জড়বাদী ও শুধুমাত্র সাধারন শিক্ষার অনবরত প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়। একক ভাবে মুসলিম ঘরের কোমল মতি মুসলিম সন্তানেরা ধর্মবিবর্জিত শিক্ষা পেয়ে যাচ্ছে যা তাদের মগজকে এমন ভাবে ধোলাই করছে যার ফলে শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠার আগেই নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও নাস্তিক হিসেবে গড়ে তুলছে। অথচ একজন মুসলমান হিসেবে এটা তার মৌলিক অধিকার ছিল যে সে তার ধর্ম ও আদর্শ সম্পর্কে জানার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে। সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব ছিলো সন্তানকে এই শিক্ষা দেয়া কিন্তু সে তার অধিকার থেকে সম্পুর্ন বঞ্চিত।
চলবে..............আগামী পর্বে সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।