"সময়ের অতল গহ্বরে মিলিয়ে যাওয়া শেষ আলোক রশ্মি"
অন্তিম সূর্যের রক্তিম আনয়নে এই ভূতুড়ে শহরের সোডিয়াম লাইটগুলো আড়মোড়া ভাঙ্গে তাদের ফ্যাকাসে হলুদ দাঁত বের করে । বিটপীদের উগলে দেয়া বাষ্পীয় তরলগুলো আরো ঝাপসা করে তোলে দৃষ্টি, ধোঁয়াটে করে তোলে এই নির্মল সন্ধ্যা । চমকপ্রদ এই সন্ধ্যায়_ দানবীয় অজগরের ঝুলিতে ঝুলে কতগুলো ছায়াসম্বলিত বস্তু যাত্রার আবশ্যিকতায় মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্তের ন্যায় মাতামাতি করে ।
এই ভূতুড়ে পরিবেশের ছিপছিপে অলিতে গলিতে অনাহুত যুবকের কানাকানি; ছিনাল মেয়েদের হাতছানি । চকচকে মেটালিক ফিয়ারে ঐ পথগুলোকে বর্জন করে ভয়ার্ত প্রৌড়, সম্পদশালী যুবক কিংবা দেহত্বের বড়াইয়ে সদা তৎপর দেহ ধারিণীরা ।
রগচটা কিছু তরুণ অবশ্য থোড়াই কেয়ার করে এসব । তাদেরই একাংশ আবার চিপাগলিতে গচ্ছিত রাখে ওজনদার ওয়ালেট । দেহের নানা গিরিখাদে ঠাঁই পায় সৌন্দর্য বর্ধনীয় ধাতুস্ফটিক ।
ডিপথেরিয়াক্রান্ত কাশি নিস্তব্দতার পশ্চাদেশে সজোরে লাথি হাঁকায় । জ্বলন্ত নিকোটিন হাতে একদল আবার অপেক্ষা করে পরের ডোজের জন্য ।
এইরূপ ক্রমবর্তিকার গণ্ডি পেরিয়ে যখন আমি প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে নির্ভেজাল এক নিগূড় সন্ধ্যা কাটিয়ে দিলাম; নিয়নের এই নাগরিক ইকোসিস্টেমের ব্যাল্যান্স শীটে কিছুটা ঘাটতি পড়ে যায় । সেই ঘাটতি পূরণ করার প্রতিজ্ঞায় এবার আমি অন্য পথে চলি ।
সমান্তরাল লৌহযুগল রাস্তায় ঘড় ঘড় আওয়াজ তোলে স্পার্ক করতে করতে ছুটে চলে প্রকান্ড বস্তু । সেই বস্তুটির ভেতর সেঁধিয়ে আমি একটু ঘুমোতে চাই । ঘড় ঘড় আওয়াজ আর মৃদু কাঁপুনি সিডেটিভ হিসেবে ভালো কাজ করবে আশা করি ।
রেল ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে আমি হেঁটে চলি বিস্তীর্ণ পথে । ভীড়ার্ত মানুষগুলোর শোকার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিরাশায় ভরে ওঠে আমার মন । আমি দেখি ছিন্নমূল মানুষদের বিচ্ছিন্নতা, মাদকের কাছে সন্তর্পণে বিলিয়ে দেয়া সতীত্বতা অথবা একদল ত্রাস নির্মাতার লুকায়িত নির্মাণসামগ্রী নিয়ে শিকারের আশায় ওঁত পেতে থাকা ।
লোলুপ্ত দেহ শিকারিরা আশেপাশের ঘিঞ্জি বস্তিগুলোতে হানা দেবার অপেক্ষায় আছে । অতঃপর তিমির বিস্তীর্ণতায় কোলাহল স্তিমিয়ে আসে; ওরা হামাগুড়ি দেয় আশেপাশের আবাসিক পণ্যগুলোর দিকে ।
জনসমাগম থিতিয়ে এলে জুয়াড়িরা বসে বাকি লেনদেন গুলোর পরিসমাপ্তি ঘটাতে । অর্ধসমাপ্তি অবস্থায় অনেকে আবার যৌন সংক্রান্ত বিশ্রী খিস্তিপাকে পুরুষত্বের পুরুত্ব প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় ।
এই মুমূর্ষ ষ্টেশনের অসুস্থ পরিবেশের সিম্পটোমস গুলো নির্ণয় না করেই কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা নিরাময়ের ব্যর্থ অপারেশন চালাচ্ছে । দুয়েকটা ছ্যাঁচড়ে টোকাইয়ের বদান্যতায় তাদের এই প্রচেষ্টা পরিশেষে ব্যর্থদূতের ক্যানভাসে চুনকাম শুরু করে দেয় ।
কোন সে কুহকিনীর কুকীর্তনে বিরাট অজগরটা আবার ছুটে চলে গর্জন করতে করতে, তারপর হারিয়ে যায় দৃষ্টি সীমার আড়ালে ।
অনাগত মানুষের হাহাকারে বিদিয়ে ওঠে আমার তৃষ্ণা । বিদীর্ণ স্বপ্নের মুঠোয় পরিমিত সুখটাকেই যে আমি খুঁজে পেতে চাই ।
আমি বাড়ি ফিরতে চাই ।
হয়তো এই শেষরাতের শিডিউলে আর একটাই ট্রেন আছে । জানি না আমি পারবো কি না ।
যদি না পারি তাহলে শেষ রাতের উদ্ভাসিত আলো আর অন্ধকারের আলিঙ্গনে তোমরা ঘুমার্ত দৃষ্টি মেলে দেখে নিও; একজন হতাশাগ্রস্থ যুবক সমান্তরাল লৌহযুগল ধরে হেঁটে চলছে পরিতৃপ্ত আশার গুলেবাড়ি মাড়িয়ে ।
অজানা পথে অচেনা দৃষ্টি মেলে ।
হয়তো কোনো নিরুদ্দেশ যাত্রায় >>>
উৎসর্গঃ হাসান মাহবুব ।
যার শব্দগুলো দিয়ে ধারালো করি নিজের ভোঁতা অনুভূতি । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।