তিন
হঠাত্ করেই ঘুম ভেঙ্গেগেল আমার । রাত নিঝুম । বাইরে একটানা রি..রি..রি ..রি ঝিঝি পোকার ডাক । বুঝতে পারলাম না কি জন্য ঘুম ভাঙল আমার ।
চোখ বুঝে আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলাম ।
হয়তো চোকটা লেগেও এসেছিল । ঠিক সে সময় ,একটা শব্দ শুনলাম। ভয়ঙ্কর একটা শব্দ । একটা অমানবীয় আর্তচিত্কার । কানের এপাশ - ওপাশ করে বেরিয়ে গেল শব্দটা ।
ভয়ে আত্কেউঠলাম আমি । ঘুম একেবারেই চলে গেল । সেইসাথে খেয়াল হল আমি কোথায় আছি । একে একে মনে পড়ল সব । জাহাজে ভ্রমন,চাচার মুখ আর ভয়ঙ্কর এইদ্বীপটার কথা ।
প্রথমেই মনে এল শিলুর কথা । পাশের বেডেই শুয়েছে ও । পাশ ফিরে ওদিকে তাকালাম । একরাশ কালো অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করতে পারলাম । কয়েকবার চোখ বুঝে আবার তাকালাম ।
চোখ ঘসে অন্ধকারটাকে চোখে সইতে দিলাম । এবার আবছা আবছা দেখা গেল শিলুকে । নাকে মুখে কাথাদিয়ে ঘুমোচ্ছেও । বেঘোরেঘুমোচ্ছে ও । এত বড় একটা শব্দ কি কানে যায়নি ওর?
নাকি ,শব্দটা ছোটই ছিল ।
হতে পারে বাংলোটার আশেপাশেই হয়েছে শব্দটা । একে সজাগ ,তারপর নিঝুম রাত । তাই হয়তো মানবীয় আর্তনাদটা অতিমানবীয় হয়েধরা দিয়েছে আমার কাছে ।
নিজেকে বোঝ দেবার চেষ্টা করলাম । আমার ঘুমুতে চেষ্টা করলাম ।
কেমন একটা অসস্থি লাগতে শুরু করল আমার । মনে হচ্ছে কেউ যেন ঝলঝল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । ঘোত্ ঘোত্কয়েকটা শব্দও শুনলামঘরের মধ্যে । তারপর হাটচলার শব্দ । ধীরে ধীরে সরে গেল ওটা ।
একটা ক্যাচ করে শব্দ হল । মনে হল কেউ দরজা খোলে বাইরে বেরিয়ে গেল এইমাত্র । তারপর ক্রমশ হারিয়ে গেল হাটচলার শব্দটা । ঘুমে ঢোলে পড়লাম আমি ।
: এই অভি !অভি ! আরে উঠ !
রুপার ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার ।
চোখ মেলেই ওর বিরুক্তি মাখা মুখটা দেখলাম ।
: পারিস বটে দুজনে । মা গো!এত ঘুম কি কোন মানুষে ঘুমায় ?
দুজন মানে ? কি বলছে রুপা!
মুখ ঘুরিয়ে শিলুর বেডেরদিকে তাকালাম । ঘুম ঘুম চোখে বসেছে ও ।
: এত সাত সকালে দরজাটা খোলে এই দাজ্জালটাকে ঘরে আনলি কেনরে তুই ?
শিলুর দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম আমি ।
ঘোত্ করে একটা শব্দ করল রুপা । ভয়ে মুখের দিকে তাকালাম না ওর । তাকালে দেখতাম রেগে টংহওয়া একটা মুখ ।
: আমি কখন খোললাম আবার?আমিত এই মাত্র উঠলাম ।
: তাহলে ?
প্রশ্নোবোধক দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকালাম আমি।
সে ঘরে ঢুকলো কি করে?
: তাহলে আর কি ? দরজা না দিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে তোমরা । আমি এসে দরজা খোলাই পেয়েছি ।
: মানে ? এবার নড়েচড়ে বসল শিলু ।
দিব্বি মনে আছে আমাদের । দরজা ভাল করে বন্ধ করেই ঘুমিয়ে ছিলাম আমরা।
: ছার !ফেরেস হয়ে খাইতে আয়েন ।
দরজার বাইর থেকে ভেসে এল কথাটা । কেয়ার টেকারের গলা ।
: আসছি !যাও তুমি !
বলল রুপা । তারপর আবার আমাদের মুখের দিকে তাকাল ও ।
বোকা বোকা একটা দৃষ্টিওর চোখে । হয়তো বুঝতে পারছেনা কিছুই ।
: শিলু ...
রাতের সেই চিত্কার আর ঘরেহাটাহাটির শব্দের কথাগুলো জানাতে গেলাম ওকে ।
কিন্তু ও হাত দিয়ে থামিয়েদিল আমাকে ।
: চল ফ্রেস হয়ে খেয়ে আসি ।
অদ্ভূত একটা অবহেলা দেখলাম ওর চোখ মুখে ।
নিশ্চয় কিছু আচ করেছে ও । হয়তো বা এসব কথা বলা এখনঠিক হচ্ছেনা ।
চার
কি হয়েছে রে তোর ?
রেলিং ধরে হাটতে গিয়ে পাকরাও করলাম শিলুকে ।
ব্যাটার আচরন দেখি বেমালুম পাল্টে গেল !
রহস্যের দিকে যেন কোন ঝোকনেই ওর ।
ওরকম একটা সংঘাতিক কান্ড ঘটার পরও ।
: তুই কি আমার কথা শুনেছিস !
রাতের কাহিনী গুলো বলারপরও কোন ভাবন্তর নেই শিলুর মুখে ।
: হ্যা । আর ... ।
থেমে গেল শিলু ।
: আর কি ?
: শু ..
মুখে আঙুল চেপে চুপ থাকারইশারা দিল ও । তারপর ধীরে ছাঁদের দরজার দিকে এগিয়ে গেল । এক ঝটকায় খোলে ফেলল দরজাটা । ঝনঝন করে একটা শব্দ হল ।
থ হয়ে গেলাম আমি ।
থতমত হয়ে দরজার ওপারে দাড়িয়েআছে রামু । । বাংলোর কেয়ার টেকার ।
: আপনি এখানে কি করছেন ?
শিলু যেন জেরা শুরু করল ।
: জ্বি স্যার ! সাহেব একটাখবর দিতে বলল ।
নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে উত্তর দিতে একটু দেড়ি হয়েগেল ওর ।
এই ফাকে আমি ওদের কাছাকাছি চলে এলাম । শিলুর মুখের দিকে ও রেগেগেছে কিনা বুঝার চেষ্টা করলাম । মুখ দেখেকিছু বুঝতে পারলাম না ।
চোখ সরিয়ে রামুর দিকে তাকালাম ।
বেশ ভালই একটাভয় পেয়েছে ও ।
মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম।
সিঁড়ির একদম শেষ মাথায় একগোছা চাবির রিং ।
ভয়ে হয়তো ফেলে দিয়েছে ।
: হ্যা কি খবর বল ?
যেন কিছুই হয়নি এমনভাবেপ্রশ্নটা ছুড়ল শিলু ।
: সাহেব !
একটা ঢোক গিলল রামু । যেন জোর করে স্বাভাবিকহওয়ার প্রচেষ্টায় আছে ও।
: আজকেও একজন খুন হয়েছে । আপনাকে দ্রুত নিচে যেতে বলেছে ।
বলেই ঘুরে দাড়াল ও ।
হনহন করে নিচে নেমে গেল । যাবারসময় সন্তর্পনে চাবির গোছাটানিয়ে গেল ।
||পাঁচ||
ভয়ঙ্কর অবস্থা নিচে ।
একটা বিভত্স লাশ নিচে । বিকট গন্ধে কেউ কাছে ঘেষতে পারছেনা ।
ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকল । একরাতের মধ্যে লাশটা পচার কথা না ।
তাছাড়া গন্ধটাতেও একটা কিন্তু কিন্তু লাগছে ।
কেমন যেন একটু বেশি বিকট । একটু বেশি প্রকট আর কেমনযেন কৃত্রিম কৃত্রিম ভাব ।
দু চার একটা লাঠি দিয়ে লাশটাকে একটা শবখাটে উঠিয়ে নিল ।
তারপর নাঁকমুখ বেধে সাগরে ফেলে দিয়ে আসল ।
ক্রমান্বয়ে ....
আগের প্রকাশিতঃ http://alor-nishan.com/viewtopic.php?id=1273 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।