আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গোপসাগরের অতলান্ত গহবরের রহস্যময় “বরিশাল কামান” সম্পর্কে প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ গড-উইন অষ্টিনের শতবর্ষী চিঠি!

অষ্টাদশ শতাব্দীতে (প্রথম লিপিবদ্ধ ১৮৪০ সালের বৃটিশ ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে মুদ্রিত!) জানা যায় যে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দক্ষিন বঙ্গের সাগর সঙ্গমে পূর্ব প্রান্তে বিশাল তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদী ও পশ্চিমে সুন্দরবনের মোহনার হরিন ঘাটা ও হিরন পয়েন্টের দিক থেকে কখনও কখনও গুরুগম্ভীর কামান গর্জনের মতো শব্দ শোনা যেত! শব্দগুলো এতো বেশী জোরদার ছিল যে তা খোদ কোলকাতা থেকেও শোনা যেত, বিশেষ করে ভরা বর্ষাকালে! হিন্দুদের কেউ কেউ এই কিংবদন্তিতে বিশ্বাস করতেন যে সেটা স্বর্ণলংকা নগরীর সিংহ দ্বারে “অবতার শ্রীরামচন্দ্রের” আঘাতের শব্দ! তখনকার বিজ্ঞানমনস্কঃ পন্ডিত ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তিরা অনেকে ভাবতেন যে বঙ্গোপসাগরের মহী-সোপানে যে “অতলান্ত গহবর (Swatch of No Ground)” রয়েছে তাতে গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা মোহনার ভরা বর্ষার বিপুল পানি যখন আছড়ে পড়ে তখন এই শব্দ বা গর্জনের সৃষ্টি হতে পারে! বলা হয়ে থাকে যে পরবর্তী শত বতসরে এই গর্জনের ব্যাপকতা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং বর্তমানে শুধুমাত্র উপকূলীয় এলাকাতে তা মাঝে মধ্যে শোনা যায়! এই রহস্যময় গর্জন তখন “বেঙ্গল ক্যানন”, “বরিশাল কামান” অথবা “বরিশাল ড্রাম” নামে শিক্ষিত মহলে, বিশেষ করে জিও-ফিজিসিষ্টদের ভেতর খ্যাতি লাভ করে! এই বিষয়টিতে বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ জনাব গড-উইন অষ্টিন (যিনি পশ্চিম প্রান্ত সীমায় কারাকোরাম-সুলেমানকি এলাকায় হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কে-২ আবিস্কার করেন এবং যার নামে শৃঙ্গটির নামকরন হয় “গড-উইন অষ্টিন”!) ১৮৯৬ সালের ১৬ ই জানুয়ারী ততকালীন সুবিখ্যাত সাময়িকী “ন্যাচার” এর সম্পাদককে একটি চিঠি লেখেন! চিঠিটি নিচে হুবহু অনূদিত হলোঃ Nature 53, 247-248 (16 January 1896) | doi:10.1038/053247b0 ১৮৯৬ সালের ১৬ ই জানুয়ারী বরিশাল কামান ও সংশ্লিষ্ট শব্দের বিষয় এইচ এইচ গড-উইন অষ্টিন প্রিয় সম্পাদক, উল্লিখিত বিষয়ে আপনার সুবিখ্যাত “ন্যাচার” পত্রিকার গত সংখ্যায় ছাপা হওয়া ভারতীয় সার্ভে দপ্তরের মিঃ জি বি স্কট মহোদোয়ের লেখাটি আমি গভীর আগ্রহের সাথে পড়েছি! এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, আমরা ভারতে এ ধরনের কমপক্ষে দুইটি অতি বিচ্ছিন ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কিনা? এই গর্জন কি গভীর ও ভারী কামানের গর্জনের শব্দের মতো যার একটি পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, গারো এবং খাসিয়া পার্বত্য রেঞ্জের নিম্ন জনপদে শ্রুত হয়, যা আবার সেই বহুল আলোচিত “বরিশাল কামানের” গর্জনের প্রায় অনূরূপ? মিঃ স্কট এর বর্ণণায় তিনি তা শুনেছেন যখন স্টীমারে তিনি বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তী ক্ষুদ্র চ্যানেল অতিক্রম করছিলেন, সম্ভবতঃ সামূদ্রিক ঢেউ এর সাথে সম্পর্কিত কোন কারন যার সাথে সংশ্লিষ্ট! এই গর্জন তিনি কখনও কামান গর্জনের মতোই গভীর শুনেছেন, কখনও একবার শুনেছেন, কখনও একাধিকবার, কখনও দূরে, কখনও কাছে, কখনও মনে হয়েছে যে দুই প্রতিদন্ধী দলের গোলা বর্ষনের শব্দ! কিন্তু তা সব ই যেন তার কাছে মনে হয়েছে দক্ষিন দিকে থেকে ভেসে আসা, অর্থাৎ সাগরের দিক থেকে! আমার মনে হয়েছে এই শব্দ কোন নির্জন ভরা বর্ষার রাতে হতেই পারে, যখন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জোয়ারে পূর্ব ও পশ্চিমে বহু শত মাইল পর্যন্ত সামূদ্রিক পানি বিশাল শব্দের সাথে আছড়ে পড়ে! আমি দুবার ষ্টীমারে এবং একবার দেশীয় নৌকাতে বরিশালে গিয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশঃত এই শব্দ বা গর্জন শুনতে ব্যার্থ হয়েছি! আশা করি ভবিষ্যতে আমরা একেবারে সঠিক কারন টি বুঝতে পারবো! আপনার বিশ্বস্ত গড-উইন অষ্টিন References: 1. Vide P. A. S. Bengal. Mr. La Touche, of the Geological Survey, p. 201, in “Report on Barisal Guns.” 2. Vide same Report. Letter by Mr. A. Manson, p. 208.  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.