সাম্প্রতিক কালে মেক্সিকো উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রে উপকুলে বহুজাতিক বিপি কর্তৃক গভীর সমুদ্রের মাকান্দো কুপ দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সাময়িক ভাবে সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলণ বন্ধ করে দেয়(সূত্র:১) এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের তদারকি প্রতিষ্ঠান মিনারেল ম্যানেজমেন্ট সারভিসেস(এমএমএস) কে বিলুপ্ত করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলণের কাজ তদারকির জন্য পৃথক তিনটি সংস্থা গঠন করার কথা ঘোষণা করে(সূত্র:২)। সেই সাথে এরকম দুঘটনা যেন আর না ঘটে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন আইনি ও কারিগরী বিধিবিধানকে আরো সুনির্দিষ্ট ও হালনাগাদ করার কাজ শুরু করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কানাডা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে নতুন করে সতর্কতা আরোপ শুরু হয়। অথচ বাংলাদেশে সেই মার্কিন দেশেরই কোম্পানি কনোকোফিলিপসকে গভীর সমুদ্রের গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়া হচ্ছে সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলণে সুনির্দিষ্ট কারিগরী ও পরিবেশ গত বিধিবিধান ছাড়াই।
সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান ছাড়াই তেল-গ্যাস উত্তোলণ
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরণের আইন ও নিয়মকানুন বেধে দেয়া হয়।
সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলণ ভীষণ ঝুকি পূর্ণ হওয়ায় এক্ষেত্রে নিয়মকানুনও থাকে কড়া ও সুনির্দিষ্ট । দেশী বিদেশী সকল প্রতিষ্ঠানের জন্যই এগুলো প্রযোজ্য। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলণের কাজে নিরাপত্তা ও ঝুকি মোকাবেলার মূল দ্বায়িত্ব তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর হলেও তদারককারী কর্তৃপক্ষ কিছু নূন্যতম মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড বেধে দেয়। কোম্পানিগুলোকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, কুপ খনন, ড্রিলিং , সিমেন্টিং, উত্তোলণ, ওয়ার্কওভার বা মেরামত, পাইপলাইন নির্মাণ, তেল-গ্যাস উত্তোলণের জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও স্ট্রকচার বা কাঠামো সম্পর্কিত শত শত পাতার কারিগরী মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গভীর সমুদ্রের জন্য প্রযোজ্য এরকম কতগুলো আইন ও বিধিবিধান হলো আউটার কনটিন্টোল শেলফ ল্যান্ড এক্টস ১৯৫৩(যা ১৯৭৮ সালে সংশোধিত ও সংযোজিত হয়), অয়েল পলিউশন অ্যাক্ট ১৯৯০, আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটস রেকমেন্ডেট প্র্যাকটিস গাইডেন্স ডকুমেন্ট ১৯৯৩, ন্যাশনাল এনভায়নমেন্টাল পলিসি এক্ট (এনইপিএ) ,আউটার কনটিনেন্টাল শেলফ অর্ডার ১-৭, ক্লিন ওয়াটার এক্ট ইত্যাদি।
(সূত্র: ৩)
অথচ বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিদেশী কোম্পানিকে কোন সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান মেনে চলতে হয় না, উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিতে শুধু উল্ল্যেখ থাকে কোম্পানিগুলো যেন আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম ইন্ড্রাষ্ট্রির নিয়মকানুন মেনে কাজ করে! আর এই ফাঁপা ও অনির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের সুযোগ নেয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এদেশে বহুজাতিক অক্সিডেন্টাল ও নাইকো মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার দুর্ঘটনায় বিপুল গ্যাস নষ্ট হয়, পরিবেশ ধবংস হয় কিন্তু কথিত আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম ইন্ডাষ্ট্রির নিয়মকানুন ভঙ্গ হয় না, ক্ষতিপূরণও আদায় করা হয় না। যে মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুসারে কনোকোফিলিপস কে সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক ইজারা দেয়া হচ্ছে সেখানেও সেই একই আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম ইন্ডাষ্ট্রির নিয়ম কানুন মেনে চলার আর্জি রাখা হয়েছে, আশা করা হয়েছে বহুজাতিক গুলো প্রকৃত workmanlike manner এ কাজ করবে! (আর্টিক্যাল ১০.৪, সূত্র: ৪)। শুধু তাই না, আর্টিক্যাল ১০.২৭ এ কোম্পানির ”অদক্ষতা, অযত্ম ও অবহেলা”র কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে :”উপযুক্ত” ক্ষতিপূরণের বিধানের কথা বলা হয়েছিল, সেখান থেকেও কনোকোফিলিপস এর আবদার অনুসারে ”অদক্ষতা” শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। (সূত্র: ৫) প্রশ্ন হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতার দোহাই দিয়ে কনোকোফিলিপস এর মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ডেকে আনা হলেও এসব কোম্পানি তাহলে ”অদক্ষতার” ভয় পায় কেন?
দুর্ঘটনার রাজা কনোকোফিলিপস
২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট এ কনোকো এবং ফিলিপস পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশান একীভূত হয়ে গঠন করে কনোকো ফিলিপস কর্পোরেশন যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম এবং সারা দুনিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম এনার্জি কর্পোরেশান।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে বড় গলায় দাবী করা হয়েছে: ”শেয়ারের বাজার মূল্য, তেল-গ্যাসের রিজার্ভ ইত্যাদি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম এনার্জি কোম্পানি হিসেবে নিরাপদ ভাবে এবং পরিবেশ ও সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার সাথে জ্বালানি সরবরাহের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে কোম্পানি সম্পূর্ণ অবগত। ” (সূত্র: ৬) অথচ বাস্তবে গভীর সমুদ্রে-স্থলভাগে তেলগ্যাস উত্তোলণে দুর্ঘটনা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের রাজা এই কনোকোফিলিপস। ২০০২ সালের আগে কনোকো এবং ফিলিপস পেট্রোলিয়াম পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে যেমন: ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে ফিলিপস পেট্রোলিয়াম কর্তৃক নর্থ সি’র একোফিসক ব্রাভো প্লাটফর্ম ব্লো আউট, যা এখন পর্যন্ত নর্থ সি’র সর্ব বৃহৎ ব্লো আউট (সূত্র: ৭) , ১৯৯৩ সালের ২১ ডিসেম্বর কনোকো কর্তৃক লূইজিয়ানা ব্লো আউট ইত্যাদি(সূত্র:৮)। কনোকোফিলিপস হওয়ার পরও কোম্পানির খাসলত পাল্টায়নি:
২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ডালকো প্যাসেজ অয়েল স্পিল(সূত্র: ৯),
২০০৬ সালের ৩ মে কানাডার এডসন থেকে ২৬ কিমি দক্ষিণ-পূর্বের একটি গ্যাস কুপ ব্লোআউট(সূত্র:১০),
২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর কানাডার ড’সন ক্রিকের ৩০ কিমি পূর্বে গ্রাউন্ড বার্চের এর গ্যাস কুপ আগুনে পোড়ানো(সূত্র: ১১),
২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর, আলাস্কার কুপারুক অয়েল ফিল্ডে এযাবত কালে আলাস্কার সবচেয়ে বড় ওয়েল স্পিল(সূত্র:১২)…
ইত্যাদি নানা ’কৃতিত্ব’ অর্জন করেই চলেছে কোম্পানিটি। এছাড়া ২০০৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ এর শুরু পর্যন্ত সময়টুকুতে যুক্তরাষ্ট্রের অকুপেশনাল সেফটি এন্ড হেলথ এডমিনিষ্ট্রেশান (ওএসএইচএ ) কর্তৃক ১১৮ বার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ভঙ্গকরার অভিযোগের নোটিশ পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করার গৌরব(!) অর্জন করে কনোকো ফিলিপস।
৮৬২ বার নোটিশ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিপি, সনোকো ১২৭ বার পেয়ে দ্বিতীয় স্থান। (সূত্র: ১৩) বিপি ২০১০ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো উপসাগরের মাকান্দো কুপ ব্লোআউটের মাধ্যমে তার সেই প্রথম স্থান অধিকারের তাৎপর্য দেখিয়ে দিয়েছে! এবার হয়তো বাংলাদেশের সাগর বক্ষে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ভঙ্গে তৃতীয় স্থান অধিকারি কনোকো ফিলিপসকে তার ’দক্ষতা’ ফলানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নাই
বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়ার তেল-গ্যাস উত্তোলণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দক্ষতার বাজারে বড় বড় সাইনবোর্ড ওয়ালা কোম্পানি গুলো যত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেই তুলনায় জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে দুর্ঘটনা ঘটেছে খুবই সামান্য। বিপি, এক্সন, শেভরন, শেল ইত্যাদি বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানি বিদেশের মাটি ও পানিতে তেল-গ্যাস উত্তোলণ করতে গিয়ে যত দুর্ঘটনা, অয়েল-স্পিল কিংবা ব্লো-আউট ঘটিয়েছে সেই তুলনায় আমাদের বাপেক্স, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস কিংবা ভেনিজুয়েলার পিডিভিএসএ ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে নিজেদের দেশে দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে। এর কারণ দক্ষতা নয়, দক্ষতার প্রয়োগে।
দক্ষতা যেহেতু স্থির, আকাশ থেকে নাযিল হওয়া কোন বিষয় নয়, নিয়মিত যত্মসহকারে অর্জন-লালন-প্রয়োগ করবার বিষয়, তাই দেখা যায় জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যতটা দ্বায়িত্বের সাথে দক্ষতার প্রয়োগ ঘটায়, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা সর্বোচ্চকরণের পেছনে ছুটতে গিয়ে নানান ঝুকিবহুল কারিগরী সিদ্ধান্তের বেলায় মুনাফাকেই প্রাধান্য দেয় ফলে নানান দুর্ঘটনার ঘটিয়ে মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট করে।
বিপির মাকান্দো কুপে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি থেকে আবারো সেই বাস্তবতাই বেরিয়ে এসেছে। মেক্সিকো উপসাগরে গভীর সমুদ্রের ব্লকে বিপি’র তেল কুপে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা যায়, মূলত বিপি এবং তার সহযোগী কোম্পানিগুলোর কূপের ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, সিমেন্টিং, পরীক্ষা-নিরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কারিগরী বিষয়ে কতগুলো ভয়ংকর সিদ্ধান্তের কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আর এই ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে সময় ও অর্থ বাচিয়ে মুনাফা সর্বোচ্চ করণের জন্য। এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত জাতীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে রিপোর্টে বলেছে এ বিষয়ে বলেছে : ”উদ্দেশ্য মূলক হোক বা না হোক, বিপি, হ্যালিবার্টন আর ট্রান্সওসানের নেয়া যেসব সিদ্ধান্ত মাকান্দো ব্লোআউটের ঝুকি বাড়িয়ে দিয়েছে, পরিস্কার বোঝা যায় ঐ সিদ্ধান্তগুলো তাদের যথেষ্ট সময় (এবং অর্থ) বাচিয়েছে।
” (সূত্র: ১৪)
কমিশনের অনুসন্ধানে এরকম কয়েকটি সিদ্ধান্ত হলো(সূত্র: ১৫)
১) প্রোডাকশন বা উত্তোলণ এর জন্য তেলের কুপে কেসিং বাসনোর ক্ষেত্রে বিপি সময় ও অর্থ বাচানোর জন্য, একটি একটানা দীর্ঘ কেসিং (লং স্ট্রিং কেসিং) কূপের মুখ থেকে কুপের তলা পর্যন্ত বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় । মাকান্দো কুপের অনিশ্চিত ও বিপদজনক বৈশিষ্ট বিবেচনা করলে এই লং স্ট্রিং কেসিং বসানো ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, প্রাইমারি সিমেন্টিং এর কাজে বাড়তি জটিলতা তৈরী করে।
২) কুপের দেয়াল আর কেসিং এর মাঝে সিমেন্টিং এর কাজটি সফল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য কেসিংটিকে কুপের কেন্দ্র বরবার ভারসাম্যে(কুপের চার দেয়াল থেকে সমান দুরত্বে) রাখা জরুরী ছিল। আর এই ঠিক কুপের কেন্দ্র বরবার কেসিংটিকে স্থির রাখার জন্য প্রয়োজন হয় সেন্ট্রালাইজার। মাকান্দো কুপের কেন্দ্রীয় অবস্থানে কুপের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কুপের চারদেয়াল থেকে সমান দূরত্বে কেসিংকে স্থির রাখার জন্য আদি ডিজাইন অনুযায়ি ২১ টি সেন্ট্রালাইজারের প্রয়োজন হলেও, বিপি সময় ও অর্থ বাচাতে ব্যাবহার করে মাত্র ৬ টি সেন্ট্রালাইজার।
ফলে কেসিংর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং কেসিং ও কুপের দেয়ালের মাঝে সিমেন্ট সমান পুরুত্ব ও সমান শক্তি নিয়ে বসেনি যা গোট কুপটিকে দুর্বল করে ফেলে।
৩) সিমেন্টিং এর কাজটি সফল করার জন্য কেসিং এর মধ্যে কুপের উপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে উপরে ড্রিল মাড প্রবাহিত করে সিমেন্টিং এর রাস্তা পরিস্কার করা প্রয়োজন ছিল। সময় বাচানোর জন্য বিপি এই কাজটি আংশিক ভাবে সম্পন্ন করেছে।
৪) সিমেন্টিং এর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সিমেন্ট কত মজবুত হয়েছে সেটা পরীক্ষার জন্য সিমেন্ট বন্ড লগ নামের একটি পরীক্ষা করার কথা ছিল। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত করে সিমেন্টের মধ্যে কোন ফাপা বা দুর্বল স্থান আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হয়।
পরিক্ষাটি করতে খরচ হয় সাকুল্যে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ডলার । কিন্তু পরীক্ষা না করে অপেক্ষমান স্লামবারজার কোম্পানির লোকদেরকে ১০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় বিপি।
৫) যে নাইট্রোজেন ফোম সিমেন্ট ব্যাবহার করা হয়েছে তার গুনাগুন পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হলেও হেলিবার্টন বিপিকে সেটা জানায় নি এবং বিপিও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামায় নি। এই দুর্বল সিমেন্ট ব্যাবহার করেই বিপি সিমেন্টিং এর কাজটি সম্পন্ন করে।
৬) সিমেন্টিং শেষে কুপের স্থিতিশীলতা ও কাঠামোর গুনাগুন পরীক্ষার জন্য নেগেটিভ প্রেসার টেস্ট করা হয়।
এই পরীক্ষায় কুপের ভিতরে চাপ একেবারে কমিয়ে দিয়ে দেখা হয়, এই কম চাপে সিমেন্টিং কুপের তলার গ্যাসের প্রচন্ড চাপ সহ্য করতে পারে কি-না। যদি সিমেন্টিং ঠিক না হয়, সিমেন্টিং কুপের তলায় গ্যাস বা তেলাধারের মুখ সঠিক ভাবে বন্ধ করতে না পারে তাহলে তলার গ্যাস/তেলের তীব্র চাপে ড্রিল মাড কুপের নীচ থেকে উপরে উঠে আসে। মাকান্দো কুপে নেগেটিভ প্রেসার টেস্ট করার সময় দুই দুই বার কয়েক ব্যারেল করে ড্রিল মাড উপরে উঠে আসলেও বিপি কিংবা ট্রান্সওসানের কর্মকর্তারা সেটাকে আমলে নেয় নি।
৭) ড্রিল মাড সরানোর আগে অন্তত যদি কুপের তলায় সিমেন্ট প্লাগ বসানো হতো তাহলেও বাড়তি প্রতিরোধ সহনীয়তা তৈরী হতে পারতো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তাড়াহুড়া করে বিপি সারফেস প্লাগ বসানোর আগে ড্রিল মাড সরিয়ে কুপটিকে দুর্বল করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের জাতীয় সম্পদ নিয়ে বহুজাতিক বিপি এই ধরণের ছিনিমিনি খেলতে পারলে, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে বহুজাতিক তোষণ কারি নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ পেট্রোবাংলার তদারকি যে কোনোকোফিলিপসকে যে থোরাই বাধ্য করা হবে তা বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর গ্যাস উত্তোলণের ইতিহাস থেকে সহজেই অনুমেয়। তারওপর বাংলাদেশে তেল-গ্যাস উত্তোলণের কোন সুনির্দিষ্ট বিধি বিধানও নেই যে তার মাধ্যমে কনোকোফিলিপস এর মতো বহুজাতিককে বাধ্যকরা হবে যথাযথ নিয়ম মেনে তেল-গ্যাস উত্তোলণে। কোনোকোফিলিপস এর আবদার মেনে চুক্তি থেকে ”অদক্ষতা” শব্দটি বাদ দেয়ার তৎপরতা থেকেও লক্ষণটি স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৫০ লক্ষ্য ব্যারেল তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়লে এবং তার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ঘটলে সে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠা তেমন কঠিন কিছু না হলেও বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য সাগরের তেল-গ্যাস ছাড়াও মৎস সম্পদ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং অন্যান্য মূলবান খনিজ সম্পদ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মুনাফাবাজ বহুজাতিকের হাতে শতকরা ৮০ ভাগ মালিকানায় সেই গ্যাস তুলে দেয়া, রপ্তানির সুযোগ দেয়া কিংবা দুর্ঘটনার মাধ্যমে সেই গ্যাস কিংবা মৎস-উদ্ভিদ-প্রাণীজ-খনিজ সম্পদ সহ গোটা সাগরের পরিবেশ ধ্বংসের ঝুকি নেয়ার বিলাসিতা বাংলাদেশের জন্য নয়।
বাংলাদেশের জন্য শত ভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেল-গ্যাস সহ সাগরের সম্পদ আহরণের ব্যাবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
তথ্য সূত্র:
১) Click This Link
২) Click This Link
৩) Report to the President, chapter 3
National Commission on the BP Deepwater HorizoniOil Spill and Offshore Drilling
৪) মডেল পিএসসি ২০০৮
Click This Link
৫) Click This Link
৬) Click This Link
৭) Click This Link
৮) http://www.incidentnews.gov/incident/6975
৯) Click This Link
১০)http://www.ercb.ca/docs/new/newsrel/2006/nr2006-17.pdf
১১) Click This Link
১২) Click This Link
১৩) Click This Link
১৪) Report to the President, chapter 4
National Commission on the BP Deepwater HorizoniOil Spill and Offshore Drilling
১৫) ঐ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।