সুরেশ কুমার দাশ
পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অশান্ত হয়ে উঠছে। অঘটন ঘটানোর বার্তা দিচ্ছে। সšত্তু লারমা ইতিমধ্যে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে। তিনি চেষ্টা করেছিলেন সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপকে তারা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না।
সরকার দোনামোনা করছে। সরকার এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তির পক্ষের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। সম্প্রতি আদিবাসী দিবস পালন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কিছু লুকোচুরি খেলার মত ঘটনাও দেখা গেছে। আদিবাসী দিবস পালন অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকরা পুলিশের বাধার কারণে ২/৩ টি জায়গায় অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
শান্তিচুক্তি মতে সরকার যদিও ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির কথা আগে বলছে।
এ কারণে সরকার কাজ চালিয়ে গেলেও তাতে সšত্তুষ্ট নয় জন সংহতি সমিতি তথা শান্তি চুক্তির পক্ষের পার্বত্যবাসীরা। এরমধ্যে পরিস্থিতি ভালো রকম জট পাকিয়ে উঠছে। সরকারকে তারা বিশ্বাসে নিতে পারছে না। অথচ এ সরকারের সঙ্গেই ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেছিল জনসংহতি সমিতি। সরকার ক্ষমতায় এসে এ চুক্তি সম্পাদন করে বেশ প্রশংসিত হয় দেশে বিদেশে।
দেশে সমালোচিতও হয়েছিল। এখানে প্রধান বিষয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এছাড়া নতুন ইস্যু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পাহাড়িদের ‘আদিবাসী’ বলার ক্ষেত্রে। তারা ‘আদিবাসী’ তারা দালিলিকভাবে চায় স্বীকৃতি চায়। এটা হলে তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়বে।
একদিকে তো তারা ঐতিহ্যগত ভূমি ব্যবস্থাপনা অধিকার ফিরে পাওয়ার অনিশ্চয়তায় পড়েছে অন্যদিকে নতুন দাবি তুলেছে আদিবাসী আখ্যার জন্য। এখন কোনটাতেই সরকারকে তারা বিশ্বাসে নিতে পারছে না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন শান্তি চুক্তি তার সরকার বাস্তবায়ন করবে। এজন্যই পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির বিষয়টি আগে জরুরি মনে করছে সরকার। হয়ত এটা সরকারের প্রধান কাজ।
তবে আদিবাসী আখ্যা পাওয়ার জন্য পার্বত্য জনগোষ্টির যে দাবী তাতে সরকারের কোন সাড়া নেই। এ সাড়া না দেবার বিষযটিকে অনেকে ভালো চোখে দেখছে না। অনেকে বলতে যারা তারা স্বার্থানেষি মহল। এরা দেশি নাকি বিদেশি তা চিহ্নিত করা দরকার। সব মিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ভালো নয়।
এটা দেশের ভেতরে এবং বাইরে নতুন সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাইরে একটা ভালই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।
তাত্ত্বিকভাবে পাহাড়িরা আদিবাসী কিনা সেটা একটা বিষয়। বিষয়টা এরকম যে আদিবাসী নাম দিয়ে পৃথিবী ব্যাপি এনজিওর দালালরা কি করতে চায়। অথবা কি করতে চাওয়ার উদ্দেশ্যের বাইরে-এনজিওওয়ালাদের আলাদা লাভ কি।
কতটুকু দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ এনজিও ওয়ালাদের দিয়েছে। নাকি এরা জাতি সংঘের নাম বেচাকেনা করছে।
পৃথিবীর যেসব জায়গায় ইনডিজেনাস গোষ্ঠি প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী স্বীকৃতি পেয়েছে তারা কেউ অবস্থানগত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। সেখানে আদিবাসীরা চেয়েছে তাদের স্বতন্ত্র জীবন জীবিকায় যেন আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা হস্তক্ষেপ না করে। কিন্তু তার বদলে পাহাড়ের উপজাতিরা আদিবাসী স্বীকৃতিও চায়।
আবার তারা স্বায়ত্ত্ব শাসনও চায়। কেউ কেউ আবার স্বায়ত্তশাসনের বেশিও চায়। তাদের প্রকৃত চাওয়া কি এবং এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন ঐক্যমত্য নেই। বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া আর এনজিও ব্যবসায়িরা তাদের উস্কানি দিচ্ছে। আর এখানে কেউ কেউ জাতে উঠার জন্য, সুযোগ নেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে সুর মেলায়।
এটা টাকার বিনিময়ে দালালি কিনা। একটি জাতীয় দৈনিক সম্পাদকীয় লিখেছে- বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির জাতিসত্ত্বা নাকি ‘আদিবাসী ’। আদিবাসী কোন জনগোষ্ঠির জাতিসত্ত্বার নাম হওয়া সম্ভব?
দুঃখজনক বিষযটা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে কোন যুক্ত নেই-তারা আদিবাসী কিনা। অথবা যুক্তি থাকলেও তা দুর্বল। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই।
এতেও নাখোশ এদেশের তথাকথিত আদিবাসী প্রেমিকরা। এবং আওয়ামীলীগের কোন কোন নেতা অতীতে ‘আদিবাসী’ ব্যানারে কোন সভা -সেমিনারে বক্তব্যও রেখেছেন। সরকার আদিবাসী নেই বলার পর এখন কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব সভা সেমিনাওে অংশগ্রহণের বিষয়টাও সামনে আনা হচ্ছে। কথা হচ্ছে তখনকার পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি এক নয়। আর আজ যারা নিজেদের আদিবাসী তখমার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা আরও ১৫/২০ বছর আগে নিজেদের আদিবাসী সাজানোর জন্য মরিয়া ছিলনা।
তাদের পূর্ব পুরুষরাও কখনও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচয় দিতে চায়নি। তাদের কি পরিচয় ছিল বা তারা কি পরিচয়ে নিজেদের পরিচয় দিতে চেয়েছিল তা তাদের পূর্ব পুরুষদের লেখা বই পত্র পড়লে জানতে পারবে। এছাড়া এরা জাতিসংঘের আদিবাসী সংজ্ঞার সঙ্গেও যায়না। বিষয়টিতে বাংলাদেশের মানুষের কোন ধরনের সমর্থন আছে তা দেখতে হবে। এটা এমুহূর্তে খুবই জরুরি।
কারণ সচেতন জনগণ জানতে চায় কোন যুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী পাহাড়িরা তথা অন্যরা আদিবাসী স্বীকৃতি চায়। বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃত আদিবাসী কেউ আছে কিনা। এ প্রশ্নের উত্তর গভীরভাবে অনুসন্ধান করা দরকার। তাত্ত্বিক উপায়ে এ প্রশ্নের সমাধান হওয়া দরকার। এ বিতর্ক করার মত সরকারের উদ্যোগ খুব দুর্বল।
এজন্য বাংলাদেশের নৃ-তাত্ত্বিক ইতিহাসকে সামনে আনা জরুরি। রাজনৈতিক বক্তব্য আদিবাসীর চিহ্নিত করার সংজ্ঞা নয়। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করা জরুরি। কারণ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রাম হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের অংশবিশেষ।
যেখানে আজকের পার্বত্যবাসীরা কয়েকশ’ বছর আগে অন্যদেশ থেকে এসে বসতি পেতেছে। এটাই সত্য। এ আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য এখন শুধু সন্তু লারমা নয় তার পক্ষ বিপক্ষের গ্র“পগুলোও সক্রিয়। এটার অনেক মতলব আমরা দেখছি।
বিষয় হচ্ছে সবকিছু একত্রিত করে একটা ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কিনা কিংবা তাদের সহযোগি দালালরা।
তবে পাহাড়ে ভূমি নিস্পত্তি নিয়ে মনে হচ্ছে দ্বিধায় পড়েছে সরকার। চুক্তির ১৫/১৬ বছর পরে এসে এ ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরকারের কোন বিচক্ষণতা প্রমাণ করেনা। বিচক্ষণতা বলতে পাহাড়িদের ঠকানোর মতলব বোঝানো হচ্ছে না। তবে সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে যারা এ চুক্তির বিরোধিতা করেছিল তাদের শক্তি বাড়বে। সরকার যদি কোন সন্দেহের বশবর্তি হয়ে থাকে তাহলে যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের অবস্থানই সঠিক বলে প্রমাণিত হতে বাধ্য।
কারণ চুক্তি বাস্তবায়নে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই সন্তু লারমার মাথা গরম হওয়ার কথা। কারণ চুক্তি করা মানে তো চুক্তি বাস্তবায়ন করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।