মানবতার পক্ষে .................................
--------------------------------------------------------------------------------
পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে লিখার চিন্তা আমার কয়েকদিন আগে থেকে। কিন্তু সময়ের বড় অভাব। তাই পারচি না। আমাদের বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েচে। সেনাবাহীনির একটা অংশ সেখান থেকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্চে।
এমতা অবস্থায় আমাদের বিরোধি দল এবং বুদ্ধিজীবিদের একটা বড় অংশ সেনা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করচে। তাদের মতে সেনা প্রত্যাহার করলে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালিদের জীবন নাশসহ অত্যাচারের ভয় রয়েচে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির আগে এবং পরে পাহাড়ে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা রয়েচে। ৯৫বা ৯৬তে আমি দেখেচি ২৮জন কাঠুরিয়াকে শান্তিবাহীনি নির্মম্ভাবে হত্যার পরে সেই কাঠুরিয়াদের পরিবারগুলোর আহাজারি। আকাশ বাতাশ হাহাকার করা সেইদিন আমি এখনো ভুলতে পারি নাই।
সেই পরিবারগূলোকে সরকার অল্প কিছু টাকা দিয়ে দায় সেরেচে মাত্র।
আমি দেখেচি আমার এক সময়ের ক্লাসমেট এক বাপের এক ছেলে জাকিরকে কিভাবে পাহাড়ি সন্ত্রাসিদের হাতে জীবন দিতে হয়েছিল। ঘটনাটা ১৯৯৯তে। মৃত্যুর তিন্ দিন আগে থেকে তাকে অনবরত পাহাড়ি মদ পান করানো হয় পানির বদলে। মদ পান করিয়ে তার পুরুষাংগকে বেঁধে দেয়া হয় যেন সে পশ্রাব করতে না পারে।
টিউব লাইটের কাচ ঢুকিয়ে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। আঙ্গুলের নখগুলো তুলে ফেলা হয়। তার সারা শরীরে ছিল অত্যাচারের চিহ্ন। তার মৃত লাশের ভোটকা গন্ধ এখনো আমার নাকে লাগচে, এটা আমি ভুলতে পারবো না কোনদিন। আমরা বা প্রশাসন কিছুই করতে পারি নাই, পেরেচি শুধু তার মৃত লাশ নিয়ে মিছিল করতে।
জাকিরের হত্যার বিচার হয়নি আজো। আর হবেও না।
এমন অনেক হত্যা প্রতিনিয়ত ঘটচে পার্বত্য চট্রগ্রামে। এগুলির কোন সাজা হয় না। সেনাবাহীনি এইসব ছোটখাট বিষয়ে অকর্ম।
শান্তিচুক্তির আগে শান্তিবাহীনির ভয়ে একসময় পুরো পাহাড়ের মানুষ ছিল অসহায়। অন্তত ত্রিশ হাজার বাংগালি আর সেনা সদস্য তাদের হাতে জীবন দিয়েচে। চাঁদাবাজিতে অস্থির ছিল পাহাড়ি বাংগালি সবাই। চাঁদা নাদিলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হতো, মানুষকে হত্যা করে লাশ পেলে দেয়া হতো পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চররায়(খাল)। প্রতিটি গাড়ি আসা যাওয়া করতে চাদা দেয়া লাগত টোকেন পদ্ধতিতে।
অপাহাড়িরা জংগলে ঢুকতে পারতো না। সেনাবাহীনির সদস্যরাও সব জায়গায় যেতে পারত না। সেখানকার বেশিরভাগ সীমানা ছিল অরক্ষিত। শান্তিবাহীনির চোরাগুপ্ত হামলায় সেনাবাহীর সদস্যরাও প্রচন্ড মার খায়।
কেন শান্তিবাহীনির জন্ম সেটা সবাই জানে।
নতুন করে কিছু বলার নেই। ঢাকা শহর বা চট্রগ্রাম শহরকে অন্ধকারে থেকে মুক্তিদিতে বানানো হয় কাপ্তাই বাঁধ। আর তাতে বিস্তির্ন পাহাড়ি ভুমি ডুবে যায় পানিতে। এবং পাহাড়িদের বাড়িঘর বা জুম চাষের জমিনগুলো ডুবে যায় এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্তিম লেক কাপ্তাই লেকের পানিতে। তখন পাকি সরকার এদেরকে তেমন গুরুত্ব না দিলে সেখান থেকে শুরু উপজাতিদের ক্ষোভের।
জিয়ার আমলে এই ক্ষোভ রুপ নেয় সশস্ত্র যুদ্ধে। আর জিয়ার কঠোর দমননীতিতে তাদের ক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। এবং যুদ্ধের দাবানল বাজে সম্পুর্ন পার্বত্য চট্রগ্রামে।
জিয়া তখন ভুলে গিয়েছিল আমরা বাংলার জনগন২৪ বছর পাকুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েও দমে যাই নি। স্বাধীনতা আমাদের প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল ফাকুদের অত্যাচারের কারনে।
সে তার মুনিবদের মত করে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েচিল। ঘৃনা আর শক্তিদিয়ে সব কিছু জয় করা যায় না। এই কথা আমাদের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানরা বুঝতে পারেন নি। এরশাদ এসেও জারি রাখলো যুদ্ধের দামামা।
যদি তারা শান্তিপুর্নভাবে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন তাহলে হয়ত এতগুলি মানুষ মারা যেত না, এত সম্পদ ধংস হতো না।
পাহাড়ি বাংগালিদের সম্পর্কও এত খারাপ হতো না। উন্নয়নের ধারা থেকে পাহাড়ের জনপদ এত পিছিয়ে থাকত না। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে সিমান্তের নিরাপত্তা বাড়ানো যেত, রোধ করা যেত চোরাকারবারি বা মাদকপাচারের মত গুরুত্বপুর্ন অপরাধ। সামরিক খাতে খরচ হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা বেচে যেত, যা দিয়ে দেশের উন্নতি আরো বেশি করা যেত। কক্সবাজারের মত রাংগামাটি বা বান্দরবানকেও করা যেত পর্যটনের এক বিশাল কেন্দ্ররুপে।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।