সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! স্বপন আমাদের বন্ধু সেই ছেলেবেলার। প্রাইমারী স্কুলে এক সাথে পড়তাম। পরীক্ষায় হলে ওর সিট পড়তো আমার পেছনে আর একটু পর পর তার কলমের গুঁতা খাওয়ায় আমার নিয়তি মেনে নিয়েছিলাম। ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় তারে খাতা খুলে দেখানোর অপরাধে টিচার পাঁচ মিনিট আমার খাতা কেড়ে রেখেছিলো।
আর এখন নিউমার্কেটের ভেতর বাধানো গোল চত্তরে বসে মেয়ে দেখায় তার প্রথম এবং প্রধান কাজ।
ঈদের সময় কিরকম জঘন্য ভিড় থাকে সে আর না বললেও হয়। সেদিন স্যান্ডেল কিনতে গিয়ে দেখি হা কইরা এক হস্তীসদৃশ মহিলার দিকে তাকায়া আছে। আমরা নায়িকার তন্বি শরীর ছোট কাপড়ে দেখতে চাই অন্যদিকে হস্তীর স্লিভলেস ব্লাউজ দৃষ্টির জন্য বড়ই বেদনা দায়ক। সেই জিনিস যখন সে চোখ ট্যারা করে দেখে তখন বোঝায় যায় তার কত অধঃপতন!
কিছু কিছু ছেলে যাদের ওড়না পরা খুব জরুরী বলে আমাদের বান্ধবি নুরী তার পাক্কা অভিমত দিয়েছিলো তাদের ভেতর ট্যারা স্বপন অন্যতম। নুরীদের ছিলো স্কুলের পাশেই ডালপুরির হোটেল।
ছোট্ট ছোট্ট নমনীয় পুরি। মুখে দিতেই শেষ! আমরা নুরীরে প্রায় অভিভাবকের মর্যাদা দিয়ে ফেলেছিলাম কারন নুরীর আব্বা মানে টুকু চাচা প্রায় ই টিফিনের সময় দু একটা পুরি ভুল করে কেনা প্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে দিত। আর নুরীর আম্মার বাড়িতে বানানো স্বাদু কটকটির কথা আর নাই বা বললাম!
বলা বাহুল্য যে তার পাইলট স্কুলের সাদা শার্টটা ততদিনে প্রায় হলদেটে আকার ধারন করেছে। পিঠে যখন ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটে আসতো শার্ট টাইট হয়ে গায়ের সাথে সেঁটে যাওয়ায় যথাসম্ভব অশ্লীল দেখাতো বলেই একদিন সভা ডেকে নুরী তার মতামত উপস্থাপন করলো। আমরা এক কথাতেই সায় দিয়ে ফেললাম।
দরকার হলে চাঁদা তুলে তার জন্য ওড়না কেনার ব্যবস্থা করতেও আমরা একমত হয়েছিলাম সেদিন।
আর তার সামনে এ প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি দেখে আমাদের অসংখ্য সমাজ হিতৈষী চিন্তা ভাবনার মত এই সিদ্ধান্তেরও অপমৃত্যু ঘটে। সেই যে সবই তো হল কিন্তু বিড়ালেই গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে!
যাই হোক সেদিন আর সহ্য হলনা আগায়া গিয়া বললাম এই হাঁদা তোর খবর কি? সে চমকায়া উঠলো একটু। তারপর মুখটারে যথাসম্ভব বিরক্ত বানায়া আমারে বললো তোরা কি চামেই থাকিস? শালী এই সময় ডিস্টার্ব
দেওনের জন্য তুই আমাকে আড়াই প্লেট ফুচকা খাওয়াবি। এখন ই চল।
রোজা রমজানের দিনে এই হাতী যে ফুচকা খাওয়ার বায়না ধরতে পারে তা আমার কল্পনাতেও ছিলনা।
শত শত স্যান্ডেল দেখে ততক্ষনে আমার মেজাজ চরমে। কোন একটারে পায়ে ঢুকায়া ফিরতে পারলে বাঁচি। আবার আফসোস ও কম হইলো না। এখনো স্যান্ডেল কিনতে পারি নাই দেখে নতুন স্যান্ডেলের একটা বাড়ি দিয়া ওর রমজানে ফুচকা খাবার স্বাধ মেটাইতে পারলাম না।
বললাম এখানে কি করোস? আর তোরে আমি মহিলা কলেজের গেটে তিনদিন দাঁড়ায়া থাকতে দেখসি। এই লুল ফালানি থামবে কবে তোর?
বিশ্রী রকমের হেহে সম্বলিত হাসি দিয়া বললো তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হইয়া যা তাইলে আর লুল ফেলুম না।
আমার তখন ছেড়ে দে হাতী পালায়া বাঁচি অবস্থা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।