আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূনের ডেথ রিপোর্ট

নিউজ ওয়ার্ল্ড, নিউ ইয়র্ক থেকে: কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট কিছুটা খুলেছে। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার অনুসন্ধানী এক রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। রিপোর্টে বলা হয়, কোলন অপারেশনের সংযোগস্থলের জোড়ায় ছিদ্র, সেখান থেকে বর্জ্য কণিকা নিঃসরণ এবং সংক্রমণই হুমায়ূন আহমেদের শোকাবহ মৃত্যুর কারণ। তবে এই ছিদ্র হওয়ার কারণ সম্পর্কে কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩রা আগস্ট শুক্রবার রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকডেল ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. মুজিব উর রহমান মজুমদারের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেলভ্যু হাসপাতালে অপারেশন সফল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে ১০ দিন অবস্থান করেছেন ড. হুমায়ূন আহমেদ। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন নিজেই হেঁটে। কিন্তু বাড়িতে আসার একদিনের মাথায় এত জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন সেটা আমাদের জানা নেই। এটা হুমায়ূন আহমেদের সহচর বা পরিজনরাই বলতে পারবেন।

১০ দিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে কোন সমস্যা হলো না। কিন্তু বাড়িতে আসার পর তার ইনফেকশন বা সংক্রমণ কিছুটা অস্বাভাবিক। হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে হুমায়ূন আহমেদ ধীরে ধীরে কিভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলেন তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে রিপোর্টে। ডেথ রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন বিশিষ্ট অনকোলজিস্ট ডা. জি লরেন বাউরেল জর্জ মিলার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল হুমায়ূন আহমেদের।

তার ওপর কোলন ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল লিভারে। বেলভ্যু হাসপাতালে ১২ই জুন কোলন অপারেশনের পর ১৯শে জুন সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হয়। ২১শে জুন আবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কোলনের অপারেশন স্থলের কাছে ফুটো হয়ে যাওয়া (এনাস্টমিক লিক) সংক্রান্ত জটিলতাই ছিল এর কারণ। এর ফলে ছিদ্রস্থান দিয়ে নিঃসরণ হচ্ছিল মল।

এজন্য এটা বন্ধের চেষ্টায় তার অপারেশন স্থল খুলে আরেকটি অস্ত্রোপচার করতে হয়। এই অস্ত্রোপচারের সময় তাকে এনেসথেশিয়া সহ সবকিছুই দেয়া হয়। কিন্তু পেটের সেলাই খোলার পরই সেখান দিয়ে বেরিয়ে আসে মলসহ বিভিন্ন বর্জ্য। যা নিঃসরণ হচ্ছিল অপারেশনের জোড়ার পাশ দিয়ে। এ সময় তার সেলাইয়ের জায়গায় একটি বড় আকারের গর্তও ধরা পড়ে, যার দুই পাশ দিয়েই বেরিয়ে আসছিল ময়লা।

অপারেশনের পর পর রোগীর রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিকভাবে। এই অবস্থায় তাকে স্থানাস্তর করা হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। এ সময় তাকে সংযুক্ত করা হয় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের সঙ্গে। জুলাই মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও রক্তের শ্বেত কণিকা কমতে থাকে। অল্প হলেও যন্ত্র ছাড়াই তিনি কিছুটা শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছিলেন।

কিন্তু এদিন সকালে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক বমি শুরু হয় হুমায়ূন আহমেদের। এটা ছিল পিত্তবমি। বমির প্রচণ্ডতায় এর কিছুটা চলে যায় তার ফুসফুসে। এ অবস্থায় অবনতি শুরু হয় শ্বাস-প্রশ্বাসের। সংক্রমণ ও শারীরিক অবস্থাকে গতিশীল রাখতে এই অবস্থায়ও তাকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন এন্টিবায়েটিক সহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছিল।

ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে ও প্রস্রাব বৃদ্ধির বিশেষ ওষুধ দেয়ার সিদ্বান্ত নেয়া হয়। ৩রা জুলাই। হুমায়ূন আহমেদের হৃদকম্পনের মাত্রা আবারও অস্বাভাবিক হতে থাকে। এ অবস্থায় আশঙ্কার কারণে তার শ্বাসনালীতে দেয়া হয় অক্সিজেন টিউব। এর আগে ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ার কারণে পিজটেইল ক্যাথেটার দিয়ে বুকের ডানদিক থেকে বের করে আনা হয় ফুসফুসের পানি।

৪ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের শরীরে নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় তার প্রস্রাবের মাত্রা একেবারেই কমতে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ সিসির জায়গায় তখন এর মাত্রা ছিল মাত্র ১.৭ ফোঁটা মাত্র। এছাড়া মলদ্বারের পেছনেও এক ধরনের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়। এ অবস্থায় কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয় তার।

৬ই জুলাই। অবস্থার আরও অবনতি হয়। এদিন কলোনের সেলাই খুলে যায়। এ স্থান দিয়ে বেরিয়ে আসে বর্জ্য। এ অবস্থায় এটাকে ধুয়ে পরিছন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

৯ই জুলাই তার আহত অপারেশনস্থল জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৩ই জুলাই মুখের পাইপ খুলে গলা দিয়ে অক্সিজেন নল ঢুকানো হয়। হাসপাতালে অবস্থানকালে হুমায়ূন আহমেদকে বিভিন্ন ধরনের অপারেশন, ক্যাথেটার্স করতে হয়। এ সময় রক্তচাপ ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহকে সচল রাখতে সর্বোচ্চ মাত্রায় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন- ভ্যানকোমাইচিন, ফ্লাজিল, পিপ্রোফ্লোক্সাসিন, পলিমিক্সিনবি, ইমিপিনেম, ক্যাপসোফিউজিন, ফ্লোকোনাজল ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। ১৯শে জুলাই।

দুপুল ১টা ১৫ মিনিটের দিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন হুমায়ূন আহমেদ। ১.২২ মিনিটে তিনি প্রকৃতই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ সময় তার শরীরের কোন অংশই আর কাজ করছিল না। হৃদযন্ত্র, ব্লাডপ্রেসার সচল রাখতে সর্বোচ্চ মাত্রার ওষুধের সঙ্গে ১০০% অক্সিজেন দেয়ার পরও সেটা নিতে সক্ষম ছিলেন না তিনি। এ অবস্থায় শেষ হয়ে যায় প্রচেষ্টা।

ঘোষণা করা হয়, তিনি আর নেই। ডেথ রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- সেপসিস ব্যাকটেরিয়া, যা শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়, দ্বিতীয় অপারেশনের আগে রোগীকে সব ধরনের ঝুঁকির কথা অবহিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছিল, অপারেশনের কারণে রক্তক্ষরণ, সংক্রমণ, মৃত্যু, এমনকি স্থায়ী নিউরোলজিক্যাল সমস্যা হতে পারে। এসব জেনেও তখন হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসায় সম্মতি দান করেন।

রিপোর্টে এর আগে জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২১শে জুন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী জানান, পায়খানা বন্ধ, অনিদ্রা এবং ১০০ ডিগ্রির উপর জ্বরের কারণে হুমায়ূন আহমেদ সারারাত ঘুমুতে পারেননি। এর কারণ জানতেই ইমার্জেন্সিতে এসেছেন তারা। ঃদৈনিক মানব জমিন থেকে সংগৃহীতঃ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.