আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে প্রকাশকের জন্য মৃত হুমায়ূন অনেক বেশি সৌভাগ্যের ও বাণিজ্যলক্ষ্মী।

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। নন্দিত ও জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর শোক এখনও তরতাজা। পরিবার, ভক্ত, গুণগ্রাহী ও জাতি এখনও শোকে মূহ্যমান। এরমধ্যেই হুমায়ূনকে নিয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য পরিকল্পনায় মেতে উঠেছেন হুমায়ূনের প্রকাশক ও প্রযোজকেরা। বাড়তি মুনাফা হিসেবে তাদের বিবেচনায় রয়েছে হুমায়ূনের উত্তরাধিকার প্রশ্নের আইনগত জটিলতা।

প্রকাশনা শিল্প সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ূনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩২২টি। প্রতিবছর বাংলা একাডেমীর ফেব্র“য়ারির মেলায় হুমায়ূনের প্রতিটি গ্রন্থ বিক্রি হয় প্রায় লক্ষাধিক। দেশ-বিদেশের চাহিদায় পুরো বছরে একেকটি গ্রন্থের বিক্রি প্রায় আড়াই লাখ। হুমায়ূনের মৃত্যুর ৪ দিনের মধ্যেই বাজারে থাকা তার প্রকাশিত সবকটি গ্রন্থের বিক্রি হয়ে গেছে। এই মুহূর্তেই হুমায়ূনের যেকোনো গ্রন্থের কপি দুষ্প্রাপ্য।

আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাবাজার কেন্দ্রিক প্রকাশ করা হুমায়ূনের প্রতিটি গ্রন্থের লাখ খানেক কপি পুনর্মুদ্রনে ব্যস্ত। ‘নন্দিত নরকে’ কিংবা ‘জ্যোৎøা ও জননীর গল্প’ এ ধরনের বহুল আলোচিত গ্রন্থগুলোর মুদ্রন সংখ্যার আদেশ আরও বেশি। রক্ষণশীল হিসেবে সম্ভাব্য হুমায়ূন মেলা কিংবা হুমায়ূনের জš§দিন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবসহ বাজারে আসছে ভক্ত গুণগ্রাহীদের জন্য প্রায় ৩২ কোটি ২২ লাখ গ্রন্থ। বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে কম-বেশি সব বাঙালি পাঠকই পড়েছে হুমায়ূনের বই। এবারের কেনাকাটাটা হবে কালেকশনের জন্য।

এ ছাড়া আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠক বাজার রয়েছে। বাংলাবাজারের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকাশক জানান, গেল বই মেলায় যে গ্রন্থের দাম ছিল ৩৫০, চলতি মুদ্রনে তার দাম ন্যূনতম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ করা হয়েছে। সে হিসাবে বাড়তি লাভ আসবে ৩২২ কোটি টাকা। গড়ে একটি বই ৪০০ টাকায় বিক্রি হলে প্রকাশনা শিল্প প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার টার্ন ওভারের মুখ দেখবে। গড়পড়তা একটি গ্রন্থে স্বাভাবিক ১০০ টাকা মুনাফায় প্রকাশকেরা দেখবেন ৩২০ কোটি টাকা লাভের মুখ।

বাড়তি ১০০ টাকা মূল্যবৃদ্ধি প্রকাশকদের দেখাবে আরও ৩২০ কোটি টাকার মুনাফা। তবে কপিরাইট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকাশকদের ঘোষণা প্রকাশ্য হচ্ছে না। প্রকাশনা শিল্পের প্রভাবশালী মহল ইতিমধ্যেই হুমায়ূনের উত্তরাধিকার জটিলতা ও বিরোধকে উস্কে দিতে শুরু করেছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অডিও-ভিজ্যুয়াল শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্যরা। হুমায়ূন আহমেদের নিজের লেখা ৫০টি গান আর বিভিন্ন নাটকে ব্যবহƒত গানগুলোর সিডিও প্রস্তুতির পথে।

এক ঈদেই আসতে পারে প্রায় লাখ খানেক সিডি। তবে গানের সিডির দেশি-বিদেশি বাজার গ্রন্থ বাজারের প্রায় ৪ গুণ। ১০টি গান সম্বলিত একেকটি ৫০ টাকার সিডি মানেই ৫টি সিডিতে আড়াইশ টাকা। শোনা যাচ্ছে, হুমায়ূনের লেখা ও ব্যবহƒত গানের রিমিক্সও প্রকাশের ইচ্ছে আছে কোনো সংস্থার। একবছরে এইসব গানের সিডির টার্ন ওভার হবে ১০০ কোটি টাকা।

ইতিমধ্যেই হুমায়ূনের বিভিন্ন ধারাবাহিক ও একক নাটকের সিডির পুনর্মুদ্রনের কাজও বেশ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। বহুব্রীহি, এইসব দিন রাত্রি, অয়োময়, আজ রবিবার সহ বিভিন্ন ধারাবাহিক ও নাটকের পর্বভিত্তিক ডিভিডি প্রকাশের কাজও চলছে বেশ জোরেসোরে। দুএকজন অতি উৎসাহী আবার সম্পাদনায় হাত দিয়েছেন বিভিন্ন নাটকের শুটিংয়ের প্রেক্ষাপট ও হুমায়ূন আহমেদের ক্যামেরার পেছনের চরিত্র চিত্রনে। এই খাতেও টার্ন ওভার হবে ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রয়েছে হুমায়ূনের ৯টি চলচ্চিত্রের ডিভিডিগুলোর পুনর্মুদ্রন।

এইসব বাণিজ্যের লক্ষ্যেই বিভিন্ন ফোরাম থেকে তোলা আবেগাপ্লুত হুমায়ূন মেলার দাবিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রায় সব পরিকল্পনার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এক খ্যাতিমান প্রকাশকের নেপথ্যের নেতৃত্বে পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝি আর মতানৈক্যকে ব্যবহার করে দুই পক্ষকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে আইনি বিরোধে। ইতিমধ্যেই বাংলাবাজার প্রকাশক সমিতি জানিয়েছেন, আইনি সমঝোতায় হুমায়ূনের বৈধ উত্তরাধিকার চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা রয়্যালিটি প্রদান বন্ধ রাখবেন। উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদ প্রতিটি গ্রন্থের জন্য বেশ ভারী রয়্যালিটি নিতেন। সেই রয়্যালিটির টাকা এখন অনেক প্রকাশকের ব্যাংক হিসাবটিকে দীর্ঘদিন উজ্জ্বল রাখবে।

অবশেষে মনে হচ্ছে জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে প্রকাশকের জন্য মৃত হুমায়ূন অনেক বেশি সৌভাগ্যের ও বাণিজ্যলক্ষ্মী। আমাদের সময়  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।