লিখতে ভালোবাসি যাস্ট হুমায়ূন আহমেদ , বিস্ময়কর এক জনপ্রিয় লেখক। তার হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে জন্ম নিয়েছে একের পর এক কালজয়ী চরিত্র। সাহিত্যের পাতা থেকে মানুষের মস্তিস্কে এই সব চরিত্ররা ঘুরে ফেরে। কখনো বা চলতি পথে বাস্তবজীবনেও দেখা মেলে তাদের।
হ্যাঁ, হুমায়ূন আহমেদ এমনই এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, যে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারতেন মস্তিস্কে।
তার লেখায় সহজেই পাঠককে প্রভাবিত করার মতো এক যাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। তাইতো তার সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্রগুলোর জন্যও তীব্র আন্দোলন করে রাজপথে নামে মানুষ! দিন-রাত খালি পায়ে রাজপথে হেটে বেড়ায় তরুনরা। বাড়ির ছাদে কোন তরুনী উদাস দৃষ্টিতে অপেক্ষার আনন্দ নেয় বিষন্ন চোখে! এসবই তার কালজয়ী চরিত্রগুলোর প্রভাব।
কোন চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে কালেরসীমা অতিক্রম করবে তা নিয়ে চলে এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিরব প্রতিযোগিতা। শেষ পর্যন্ত কোন চরিত্রটি তার স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদকে বয়ে নিয়ে যাবে কাল-সীমানার বাইরে তা সময়ই বলে দেবে।
হুমায়ূন আহমেদের সেই কালজয়ী চরিত্রগুলো ছুঁয়ে দেখা যাক…
‘হিমু’
হিমু‘….প্রচন্ড রোদ নিউ মার্কেট এলাকায় দাড়িয়ে আছে যুবক। হাতে একটি সিগারেট। আজ হরতাল। কখন একটি বাস পুড়বে সেই আগুনে সে সিগারেট ধরাবে!’ এই বিস্ময়কর তরুনটিই হলো হিমু্। ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’ বইতে এভাবেই একটি ঘটনার বর্নণা দেওয়া হয়।
হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা চরিত্রের একটি হচ্ছে হিমু।
খালি পায়ে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুড়ে বেড়ায় হিমু। উদ্ভট সব কাজই তার মূল কর্মকাণ্ড। যুক্তির ধারধারেন না। এমন সব কাণ্ড করেন যে তার আশে পাশের মানুষ বরাবরই অবাক হয়ে যায়।
মানুষকে চমকে দেওয়াই তার কাজ। তার ওপর ক্ষিপ্ত হলেও শেষ পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসাই আদায় করে নেন এই বিচিত্র চরিত্রটি। আর সব শেষে মানুষের কল্যানেই তার উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রাটি শেষ করেন।
৯০ দশক থেকে এই ‘হিমু’ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে আছে এদেশের তরুনরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘হিমু’ হতে চেয়ে খালি পায়ে পিচ ঢালা পথে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাটা নিয়েছেন অনেকে।
হিমুর প্রথম বইয়ের নাম ‘ময়ূরাক্ষী’।
নাটকে সরাসরি ‘হিমু’ চরিত্রে কেউ অভিনয় করেন নি। তবে হিমু সেজেছেন, বা হিমু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অভিনয় করা চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম আজ রবিবার নাটকের ‘তুহিন’। তুহিনের সাজসজ্জা হিমুর দৃশ্যমান রূপের অভাব অনেকটা পূরন করেছে। এছাড়া মোশাররফ করিমও সম্প্রতি নাটকে ‘হিমু’ সেজেছেন।
‘মিসির আলী’
মিসির আলীমোটা ফ্রেমের ভারী চশমা পরিহিত লোকটি কিছুতেই বিশ্বাস করেন না অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা। যতো রহস্যময় ঘটনাই ঘটুক যুক্তি দিয়ে তার সমাধান খুজে নেন। এই যুক্তিবাদী মানুষটির নাম ‘মিসির আলী’। হিমু’র ঠিক বিপরীত। হিমু যেমন যুক্তি মানে না, মিসির আলী আবার যুক্তির বাইরে হাঁটেন না।
হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘মিসির আলী’ই তার সবচেয়ে প্রিয়। ‘হিমু’কে যদি অগোছালো আর যুক্তিতর্ক বিরোধী চরিত্রের প্রতীক বলা হয়; মিসির আলী হচ্ছে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং সংকট যুক্তির আলোকে ব্যাখা করাই হলো মিসির আলীর একমাত্র কাজ।
হুমায়ূন আহমেদের কয়েকটি নাটকে উঠে এসেছে ‘মিসির আলী’ চরিত্রটি। এ চরিত্রে সবচেয়ে স্বার্থক অভিনয় করছেন অভিনেতা আবুল হায়াত।
পরবর্তীতে ‘মিসির আলী’ চরিত্রে আশীষ খন্দকার স্বার্থক অভিনয় করেন।
‘শুভ্র’
‘শুভ্র’ চরিত্রটি তার নামের অর্থের মতোই শুদ্ধতম এক মানবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটেছে। হুমায়ূন আহমেদরে চরিত্রগুলোর মধ্যে শুভ্র অন্যতম। নিজেকে পৃথিবীর যাবতীয় জটিলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবতে চান না শুভ্র।
সব সময় মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে বইয়ের মাঝে ডুবে থাকেন। বাবার বিপুল সম্পত্তি শুভ্রকে কখনো টানে না। শুভ্র সুন্দরের শুদ্ধতা নিয়েই বেঁচে থাকতে চান।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় দেখা দেয় শুভ্র। এ চরিত্রে অভিনয় করেন নায়ক রিয়াজ।
এছাড়াও শুভ্রকে নিয়ে নাট্যকার-নির্মাতা অরুণ চৌধুরী নির্মাণ করেন ধারাবাহিক নাটক ‘শুভ্র’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আয়াজ উদ্দিন অনি।
‘বাকের ভাই’
বাকের ভাইকোনো গল্প, উপন্যাস কিংবা নাটকের চরিত্র যে বাস্তবজীবনে এভাবে দৃশ্যমান হয় তা বোধ হয় আগে কেউ দেখেনি। হুমায়ূন আহমেদই সেই বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের মাধ্যেমে।
হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নিমির্ত হয় নাটক।
এ নাটকে ‘বাকের ভাই’র চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। পাড়ার এক মাস্তানকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দে্রয়া হয়। এরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে শত শত মানুষ!
‘বাকের ভাই’র ফাঁসি বন্ধের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ বিক্ষোভ হয়। নাটকের স্ক্রিপ্ট ঘুরানোর কথা বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাঁসিই বহাল রেখেছেন নাট্যকার।
‘বাকের ভাই’র ফাঁসি হওয়ার পর কেঁদেছিলেন মানুষ। এমনকি নাট্যকারের উপর তীব্র অভিমান থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে! নাটক জগতের সে এক বিস্ময়কর ইতিহাস ‘বাকের ভাই’ চরিত্রটি।
‘রুপা’
'রুপা'হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সৃষ্টি ‘রুপা’। হিমু’র মতো এক বাউন্ডুলেকে ভালোবাসে এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি। সবসময় অপেক্ষা করে হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে।
হিমু ফোন দিয়ে বলে ‘রূপা আমি আসছি’। হিমুর পছন্দের আকাশি রংয়ের সাড়ি , চোখে কাজল দিয়ে ছাদে কিংবা বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে রূপা। কিন্তু হিমু আসে না। রুপাও জানে হিমু আসবে না। কিন্তু তারপরও অসম্ভব মায়া আর ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করে।
পরিনতিহীন এক প্রেম নিয়ে রুপা দাড়িয়ে থাকে সবসময় হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে।
নাটকে রুপার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিচি। ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘আমি হিমু হতে চাই’ নাটকে মোশাররফ করিমের বিপরীতে রুপার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিচি।
কালজয়ী এসব চরিত্রের মাধ্যমেই ভক্তদের মাঝে বেঁচে আছেন হুমায়ূণ আহমেদ।
সুত্র : অলশেয়ার নিউজ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।