আমি কেমন বয়সে এরা প্রত্যেকেই শিশু। এদের ওপর চলে সাঁড়াশি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। এরা প্রত্যেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। চলে নিত্যকার মারধর, কান্না। দেয়ালজুড়ে স্বর্ণপদকের ছবি ও বাণী।
নিয়মিত চলে শিশুদের মগজ ধোলাই। এ চিত্র চীনের ক্রীড়া অনুশীলন ক্যাম্পগুলোর।
ক্যাম্প সংশ্লিষ্টদের পাঠানো ছবি নিয়ে সচিত্র এ খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। 'সাফল্যের নেপথ্যে নির্দয় অনুশীলন। আর এর শুরু সেই স্কুলে পড়ার দিনগুলো থেকে।
' এভাবেই নিজের রেকর্ডগড়া স্বর্ণ জয়ের যা ব্যাখ্যা করছেন ইয়ে শিউন। আর তার কঠোর অনুশীলনের কথায়ই মিডিয়ার দৃষ্টি যাচ্ছে চীনের ওইসব ক্যাম্পের দিকে।
এ ঘটনা আশির দশকের শুরুতে। অলিম্পিক ক্রীড়ায় নিজেদের আসন গাড়তে চায় চীনারা। আর কমিউনিস্ট পতাকা তুলে ধরে থাকা চীন তা চায় যে কোনো মূল্যে।
দেশজুড়ে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকরা নির্দেশ পেলেন প্রতিভা অন্বেষণের। স্কুলপড়ুয়া এবং প্রকৃতিদত্ত প্রতিভার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে তুলে নেওয়া হয় তাদের পরিবারের কাছ থেকে। আর নির্দিষ্ট খেলায় দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনে রাখতে চীন দেশজুড়ে গড়ে তোলে তিন হাজার ট্রেনিং ক্যাম্প। আর এখানে সাঁড়াশি অনুশীলনে রেখেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হয় চীনা শিশু-কিশোরদের। ট্রেনিং ক্যাম্পে নিষ্ঠুর অত্যাচারী আচরণের শিকার হতে হয় এসব শিশুকে।
ক্যাম্পে শিশু-কিশোরের কান্নার খবর মিডিয়ায় প্রকাশও পায় পরে। 'তাকে মারধর করা হয়'- চীনের এক অনুশীলন ক্যাম্প থেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) সাত বছর আগে একজন চিঠি লিখে অভিযোগ জানায়। কিন্তু তদন্ত করবে জানালেও এ নিয়ে ভূমিকা দেখা যায়নি আইওসির। চীনে জিমন্যাস্টিক তারকা তৈরিতে অনুশীলনে শিশুদের মারধর ও তাদের কান্নার খবর বিশ্বজুড়ে প্রকাশ পায় এর আগে। চীনে অনুশীলন ক্যাম্পে ছোট ছোট শিশুর মগজ ধোলাই করা হয় নানা পন্থায়।
ভবিষ্যতের এসব অ্যাথলেটের মাথায় ঢোকানো হয় প্রতিযোগিতায় মার্কিনিদের হারানোটাই তাদের পণ হওয়া উচিত। চীনা কর্তৃপক্ষের এ উন্মাদনাময় ট্রেনিং কৌশলে অতিষ্ঠ হলেও মুখ খোলার সাহস রাখতো না আগেরকার চীনা অ্যাথলেটরা। তবে চীনের এখনকার ক্রীড়াবিদরা ট্রেনিং কৌশল নিয়ে মন্তব্যে অনেকটাই সাহসী। এবারের লন্ডন অলিম্পিকে চীন দলের সাঁতার তারকা লু উইংয়ের নাম বলা যায় এ ক্ষেত্রে। ২৩ বছর বয়সের এ সাঁতারু দুদিন আগেই মিডিয়ার কাছে মুখ খোলেন চীনের কঠোর অনুশীলন পদ্ধতি নিয়ে।
বলছেন, দেশে দীর্ঘদিন কঠোর অনুশীলনের বাজে প্রভাব পড়ছে এখানে প্রতিযোগিতার পুলে নেমে। লু উইংয়ের অভিযোগ- চীনের অনুশীলন ক্যাম্পে সব সময়ই তটস্থ থাকতে হয় তাদের। বলেন, অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উপভোগ্য অনুশীলন ব্যবস্থা চীনে পান না তারা। লন্ডন অলিম্পিকে পৌঁছার আগে প্রাক? প্রস্তুতি নিতে ওই দুদেশে অনুশীলন শেষে মিডিয়াকে এমন অভিযোগ ছিল চীন সাঁতারু লু উইংয়ের। অনুশীলন ক্যাম্পে ছোট ছোট শিশুদের মাথায় খেলাটিই ঘুরে ২৪ ঘণ্টা।
দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে প্রস্তুতিটা এসব শিশুর কাছে হয় শারীরিকভাবেও বেদনাদায়ক। জিমন্যাস্টিকের নানা কসরতের উপযোগী করে তুলতে শিশুদের হাত পা মচকে দেয়া হয় ক্যাম্পের অনুশীলনে। আর সাঁতারে বড় সাফল্য কুড়াতে অনুশীলনও এসব প্রতিযোগীর কাছে শারীরিকভাবে কষ্টকর। সাঁতারের জন্য অধিক অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় একজন প্রতিযোগীর। আর চীনারা এর জন্যও রেখেছেন কষ্টদায়ক পদ্ধতি।
পানিপূর্ণ সুইমিংপুলের বিশেষ কায়দায় প্রথমে শুষে নেওয়া হয় এর অঙ্েিজন। পরে অঙ্েিজন ঘাটতিতে থাকা পুলে সাঁতরাতে হয় চীনা সাঁতারুদের। অনুশীলনকালের এসব পদ্ধতি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করছেন চীনা তারকারাই।
চীনের রেকর্ডগড়া সাঁতার তারকা ইয়ে শিউন বলেছেন, নৈপুণ্যবর্ধক কোনো ধরনের ডোপ নেননি। দুদিন আগে মেয়েদের ৪০০ মিটার মিডলে ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জেতেন চীনের এ ষোড়শী।
কিন্তু তার বিস্ময়কর দ্রুত এ সাঁতারে সন্দেহ জুড়ছে একে একে। রেকর্ডের পরপরই সরাসরি টিভি অনুষ্ঠানে ডোপের ইঙ্গিত রেখে ইয়ের পারফরমেন্সে প্রশ্ন তোলেন বিবিসির প্রেজেন্টার ক্লেয়ার বল্ডিং। গতকাল এ নিয়ে স্পষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্ব্বী দল যুক্তরাষ্ট্রও। আর ইয়ে শিউনের সাফল্যে সন্দেহ প্রকাশে পশ্চিমা মিডিয়া জানাচ্ছে ১৯৮০'র অলিম্পিক সাঁতারের এক ঘটনা। সেবারের মেয়েদের সাঁতারে বিশ্বকে এমনই চমকে দেন পূর্ব জার্মানির ষোড়শী পেট্রা স্নেইডার।
৪০০ মিটার মিডলে সাঁতারে তখনকার ফেভারিট ব্রিটিশ তারকা শ্যারন ডেভিসকে পেছনে ফেলে তাক লাগান বিশ্বকে। নৈপুণ্যের পেছনেও ছিল কঠিন অনুশীলন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।