জানি না কবে কোথায় , কিভাবে তোমাকে আবার দেখব। তবে তোমাকে হারানাটাই আমার অনেক বড় একটা বাজে অনুভুতি । ভাল থেকো বিবেকা। ভাল থেকো বিবেক। ভাল থেকো আমার কবিতাগুলো 15th december , 2011
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ------ গানটা যে কতবার শুনেছি খেয়াল নেই।
মনে আছে আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের অনেক বড় এক বিলাসীতা কম্পিউটার । আব্বা যেদিন অফিস থেকে টাকা ধার করল সেদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। ভাবছিলাম না বলেলই ভাল করতাম । তারপর ও কম্পিউটার ঘরে এল। কাজের ফাকে বিনোদনের কিছুই আমি তখন জানি না ।
নিগরানের সাথে এই তো সেদিন জীবনের প্রথম শিক কাবাব আর নান রুটি খেলাম। কখনও গান শোনার মত সময় বা সামর্থ্য কোনটাই ছিল না । সেদিন প্রথম একটা গানের সিডি কেনা । সেখানে কফি হাউজ গানটা ছিল। এর পর থেকে রোজ , রোজ,,,, পাশের ফ্ল্যাটের সুন্দরী নাফিসা যখন ওর কম্পিউটার বিশাল গানের ভান্ডার নিয়ে বেদম শব্দে আমাকে জালাতে আসত, তখনো আমাদের দুই ভাইয়ের মূল অস্ত্র সেই কফি হাউজ।
অল্প টাকার সাউন্ড বক্সের অল্পজোর শব্দে ওদের সাথে পেরে না উঠলেও মনের মধ্যে বয়ে যেত কেমন যেন হাওয়া । নাফিসার জন্যে নয়। আমাদের জীবনটার এই যে আলাদা এক রঙ, সেটার জন্যে ।
আজ এক বছরের বেশি হল কফি হাউজ শুনি না । আমার ঘরটা থেকে নাফিসাও মনে হয় শোনে না ।
আমার ঘরের অনেক পুরানা প্লাস্টিকের টেবিলটার উপর আব্বা আর সন্ধ্যায় অফিস থেকে এসে ভ্যানগার্ড বা একতা ফেলে রাখে না ।
আমার টেবিলে আর দাগ নেই লাল কলমের । মা সকাল বেলায় টেবিল গোছাতে গিয়ে পায় না কোন নতুন কবিতা । কম্পউটারের টেবিলে শুনেছি আর সেই ধুলো জমে না । এখন অনেক ঝকঝকে থাকে ।
জীনটা এমন ই । কত তাড়াতাড়ি , কতভাবে যে রঙ পাল্টায়। এই সেদিন একুশে বইমেলায় RJ দেখার জন্য প্রসূন কে দাড়িয়ে থাকতে দেই নি । বলেছি কয়েক বছর পর আমরাও এমন হয়ে যাবো। নিগরানকে বলেছি, আমার সাথে ব্র্যাকে ভর্তি হয়ে যা, দুজন মিলেমিশে পার হয়ে যাবো ।
নিগরান আজো আমাকে গালি দেয় । ” শালা অনেক আশা দেখায়া শেষে তুই ই ছেড়ে চলে গেছিস। “ আমি কথা খুঁজে পাই না । হয়তো আরেকটা হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেই কিন্তু আমার মনে দাগ কেটে চলে সর্বক্ষণ। ছোটবেলায় যারা ক্লাসে রোজ সারের মারের ভয়ে কুকড়ে থাকত, ৬৭ রোলের রায়হান বা , উজ্জল, বা আর যারা ছিল , ওদের কথা মনে পড়ে ।
স্যার রা বলতেন, তোদের দিয়ে কিছু হবে না । বড় হবি না । সুখে থাকবি না । অথচ সজল কে দেখ। শিখে রাখ।
আজ রায়হান সিংগাপুরে চাকরি করছে। চাইলেই প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পারে যখন তখন। সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে। ফেল করা সোহেল মালোয়েশিয়ায় চাকরিরত। আমাকেই ফোন করে উল্টো।
বিয়ে করেছে। উজ্জল বাড়িতে ব্যবসা করছে। খুব ছোট্ট সাজানো সংসার ওদের । বাবা , মা ভাই বোন নিয়ে রোজ সকালে শুরু হয় , রোজ রাতে শেষ। কষ্ট থাকলেও একসাথে থাকার আনন্দ থেকে তো ওরা কেউ আমার মত করে দূরে সরে যায় নি স্যার ।
আমি কেন এরকম ফাটা বাঁশের মধ্যে পড়ে আছি? আমার ও আজ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা নাট্যতত্ব নিয়ে অথবা বাংলা সাহিত্য নিয়ে। আমার রাজনীতির মঞ্চে বক্তৃতা দেয়ার কথা । কিন্তু আমি আজ এই দূর পাহাড়ের কিনারে একটা এসি মেশিনওয়ালা ঘরে বসে ল্যাপটপের পর্দায় কষ্টগাথা লিখে চলেছি। কারাগার লাগে। মাঝে মাঝে পারি না ।
সালেহ উদ্দিন স্যার আশাবাদী হতে বলেন । আমি দেখি সবটাই কুরুক্ষেত্র । তবু তো বাঁচতে হবে । এতগুলো জীবন আমার আশেপাশে , এদের ও তো বাঁচাতে হবে । (ছেংদু, গনচীন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।