তুমি ক্ষমাশীল হও, সৎ কাজের আদেশ কর, আহাম্মকদের থেকে দূরে থাকো. -সুরা আরাফ, আয়াত.১৯৯
নতুন ডিজাইনের জামাটা রাসার গায়ের সাথে লেপ্টে আছে, ডিজাইনার জেয়ান জামার পিছনের চেইনটা টেনে দিতে দিতে বলে-তুমি কিন্তু শো-স্টপার, কোন ঝামেলা করে বসোনা। রাসার সামন্য বিরক্তই লাগে, সে মনে মনে সিব্ধান্ত নেয় এই শো টা শেষ হলে সে আর এই লোকটার সাথে কাজ করবেনা, অনেক হলো- ফেমের যখন সে একদম উপরের জায়গাটা ধরে আছে তখনও এই লোকটা তাকে শিখিয়ে দেয় কি করতে হবে, সে কি খায় কি ভালো বাসে, কোনব্রান্ডের সাবান তার ভালোলাগে, কখন হাসে, কোন ছেলের সাথে সে ডেট করে সব যখন মানুষ লুফেনেয়। মানুষ অপেক্ষায় থাকে রাসার খবরের জন্য, তখন এই লোক তাকে বলে কিভাবে শো-স্টপার হতে হয়। রাসা এই শো তে না থাকলে ওর অর্ধেক দর্শক কমে যেত, শো হত ফ্লপ। রাসা কম করে হলেও ৫০ টা শো- এর স্টপার হয়েছে।
সে ভেতরে ভেতরে গজ গজ করতে থাকে, সে কোন কথা না বলে উঠে দ্বাড়ায়, র্যাম্পে ঢোকার দরজার পিছনের পর্দাটা ঠেলে সে সামনে বেড়িয়ে আসে, চারপাশে এতো আলো এতো ক্যামেরার ফ্লাস তার চোখে লাগে, সে হেটে যায় র্যাম্পের উপর দিয়ে, সামনের দিকে দৃপ্ত পা, কনফিডেন্সের কোন কমতি নেই তার।
দুলে দুলে হাটার এক অদ্ভুত ছন্দে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, বোধ্বা রা এটাকে বলে ক্যাট ওয়াক। সত্যিই বিড়ালের মতন পা পেচিয়ে পেচিয়ে হেটে যায় রাসা, তার চোখ সামনের ফটো সাংবাদিক দের দিকে, ক্যামেরার মুহু মুহু ফ্লাসে চমকাতে থাকে রাসার পোষাক শরীর ও মন, সে পুলকিত হয়, কত মানুষ তার ভক্ত সবাই তার এই হেটে আশার অপেক্ষায় অধির। কাল পেপারে তার ছবি তো অবশ্যই আসবে তা ছাড়া বিনদোন সংখ্যা গুলায় তো ছবি থাকবেই সথে নিউজও সে অনেক গুলা সিনেমা করেছে, টিভি কমার্সিয়াল করেছে,
বিভিন্ন মাসিক- ত্রই মাসিক পত্রিকার প্রচ্ছদে থাকে তার ছবি, সেই ছবি দেখেই পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যায় অনেক খানি। রাসা কোমর ঘুড়িয়ে আবার ব্যাক স্টেজের দিকে হেটে যেতে থাকে, তার চোখের সামনে একটা মুখ ক্যামেরার ফ্লাসের ফাক দিয়ে উকি মেরে যায় সামান্য সময়ের জন্য সে হক চকায় তার কান বন্ধ হয়ে যেতে থাকে দর্শক দের তালি বা শিশ কিছুই তার কানে ঢোকেনা, সে কেবল মুখটির কথা ভাবতে থাকে।
এর পরো সে টলকায় না বহু দিনের অভ্যেসে সে ব্যাক স্টেজে ফেরত আসে।
জেয়ান এগিয়ে আসে রাসার দিকে- সে উচ্ছসিত
- গুড জব রাসা, ইউ আর জিনিয়াস, রাসা কিছু শুনতে পায়না কেবল একটাই কথা ভাবতে থাকে, যে মুখটা কে সে দেখেছে এই ফটো সাংবাদিক ই একদিন তাকে চিনিয়ে দিয়েছিলো এই জগৎ টাকে। সে ই দেখিয়ে ছিলো সমাজের এই কুৎ সিত রংটাকে, একদিন এই লোকটাই তাকে নিয়ে ব্যাবসা করেছিলো, আর আজ সেই লোক তার ছবি বেচে জীবন চালায়, হাহ্ জীবন।
রাসা ড্রেস ছাড়ে জেয়ান কে সেটা ফিরিয়ে দিয়ে বলে আমি চলি,
জেয়ান অবাক হয়ে বলে- কোথায়?
বাসায়। শরির টা তেমন ভালো লাগছেনা।
জেয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে
-তোমাদের সবার এই এক অবস্হা একটু নাম ডাক হলেই ধরা কে সরা গ্যান করো।
রাসা ভেতরে ভেতরে আরো ক্ষেপে যায়। সে ভাংয়া ভাংয়া ইংরেজীতে বলে হট ডু ইউ মিন?
জেয়ান হাসে, বস্তির মেয়ের মুখে ইংরেজী মানায় না রাসা, তুমি তোমার অতীত কে ভুলে যেওনা, তুমি যতই রেব্যান্ডে চোখ ঢেকে রাখো তুমিকি অতীতের হাত থেকে মুক্তি পাবে, পাবেনা! ঠিক তেমনি আমাদের হাত থেকে কি তোমাদের মুক্তি আছে? একটু ভেবে দেখো।
রাসা বলে আমি যাচ্ছি।
জেয়ান উহু বলে ভ্রু কুচকায়,- যাচ্ছি বললেই তো আর চলে যাওয়া যায়না রাসা, তোমার সাথে আমার একটা চুক্তি হয়েছে, সেখানে লেখা আছে শোয়ের পড়ে একটা ককটেল পার্টি হবে, আর সেই পার্টিতে তুমি থাকবে এবং হাসি মুখে থাকবে।
রাসা কিছু বলেনা সে চুপ করে থাকে। শোন রাসা আজকের শোতে কিছু বিদেশি ডেলীগেট এসেছে, এদের আমার ডিজাইন পছন্দ হয়েছে, ওরা চায় ডিজাইনের পাশাপাশি মডেল হিসাবে আমাদের মেয়েরা কেমন তাও একটু একান্তে পরখ করতে, শো-স্টপার হিসাবে যেমন তোমার জুড়ি নেই তেমনি... বোধ করি আর বলতে হবেনা।
২
রাসা বেস বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে, শরীরের আনাচে কানাচে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে, বিদেশি শুয়োর টা........। রহিম চাচা বলে ডাক দেয় রাসা, রহিম পৌড় মানুষ এসে ঘরে ঢোকে, কি মা মনি? চাচা এক কাপ চা দেওনা, রহিম মিয়া চা নিয়ে আসে, চাচা রাতে আমাকে বাসায় দিয়ে গেছে কে? মা মনি জেয়ান সাহেবের ড্রাইভার নিয়া আসছিলো আপনারে। রাসা কিছুটা অপমানিত হয়, জেয়ান নিজে আসলোনা ড্রাইভার দিয়ে বাসায় পাঠালো তাকে।
মানুষ কিভাবে বদলায়? রাসা নিজেও বদলে গেছে পুরটাই, এই জেয়ানের এক সময় কাজ ছিলোনা, সবে ডিজাইনিংয়ের উপর পড়া শেষ করেছে বেকার, রাসার কাছে এসে একদিন রিকোয়েষ্ট করলো আমারা ক"জন বন্ধু মিলে একটা ফ্যাশন শো করবো আপনি যদি একটু আমাদের সংগ দেন উপযুক্ত পারশ্রমিক হয়তো দিতে পারবোনা তবে চেষ্টা করবো। রাসার ছেলেটাকে দেখে অদ্ভুত এক ভালো লাগা জন্মে ছিলো, সেই ছেলে যাকে সে এক দেখায়ই ভালোবেসে ফেলেছিলো, এখন জেয়ানেরও নাম হয়েছে খুব, রাসা কেও আর তার তেমন লাগছেনা আগের মতন। বহু সুপার মডেল এখন তার চার পাশে ঘোর পাক খায়। ওকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে, রাসা কে চেনেনি রাসার সাথে প্রতারনা করলে ফল ভালো হয়না, রাসার শরীর বেচে আজকে সে করিম আব্দুল কুদ্দুস থেকে জেয়ান হয়েছে।
৩
জেয়ানের মন খুব ভালো, কালকের সোটা খুব ভালো গেছে, আমেরিকার জন এফ সাহেবের তার ডিজাইন খুবই ভালো লেগেছে, আমেরিকার বড় একটা ব্র্যান্ড কম্পানীর সাথে তার চুক্তি এবার হয়েই যাবে, তার পর আর না ফিরে তাকানো।
তবে জেয়ানর মনের একটা খুত খুত ভাব কাটছেনা শোটা তো সে কিছু ডিজাইন নেট থেকে নামিয়ে চালিয়ে দিলো, চুক্তি হয়ে গেলে সে কাপরের ডিজাইন পাবে কোথায়? জেয়ান জানে ডিজাইন টিজাইন কিচ্ছুনা সাদা চামড়ার লোকের পছন্দ হয়েছে রাসা কে, রাসা টাও পারে, সব দিকে বিশাল এক্সপার্ট। মদ খেয়ে এমন ভাবে নাচে যেনো মনে হয় ওর জন্ম হয়েছে আমেরিকায়, আর বিছানয়- উহ! অসাধারন, মেয়েটাকে প্রেমের ফাদে ফাসিয়েই জেয়ান আজকে এই পর্যন্ত। তবে রাসার কপালও ওকে সায় দিয়েছে, বস্তির ছোট্ট খুপরি ঘরের মেয়ে আজকে গুলশানে থাকে। রাসেদা সারমিন এখন রাসা হয়েগেছে, মডেলিংয়ের এই জগৎএ ওকে নিয়ে একটা পদ্যের প্রচলন আছে, "রাসা- মাল খাসা। " জেয়ান হাসে মাল শব্দটা মনে আসা তে, অনেক ধার্মিক আজকে চিল্লায় মেয়েরা নাকি পন্য হয়েযাচ্ছে, মাল মানেতো পন্যই- জেয়ান জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে একা একা।
৪
ফুটপাথের ছোট বইয়ের দোকানের সামনে দ্বাড়িয়ে আনন্দ কথা পত্রিকাটার মলাটের দিকে তাকিয়ে আছে বজলু, মলাটে নাইকা রাসার ছবি, অদ্ভুত এক ভংগিতে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে একটা থ্রী-পিছ পড়ে, পায়জামা জামা ঠিকই পড়েছে কেবল ওড়নাটা জায়গা মতন নাই, ওড়না থাকার কথা নারীর বুকে, সেই ওড়না এখন নারীর হাতে, আর বুক উদাম। আফসুস নারীরা নিজেরা নিজোগরে জাহিলিয়াতের যুগে নিয়া যাইতেছে এরা বুঝতাছেনা, পুরুষ হেগোর সৌন্দর্জ দেখেনা দেখে.......। থাউক মুখ খারাপ কইরা ফয়দা নাই এই সব নারী গো কাছ থেইকা দুরে সইরা থাকার মধ্যে আছে ব্যাপক ফয়দা, বলে সে রাস্তার পাসে পুচ শব্দকরে পানের পিক ফালায়। বইয়ের দোকান দার কে বিশটা টাকা দিয়ে সে নাইকা রাসার ছবি ওয়ালা একটা পত্রিকা কিনে পকেটে রাখে।
৫
মবিন বসে আছে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে, সে অপেক্ষা করছে বজলুর জন্য, বিকাল বেলা দুই দোস্তে একসাথে চা খায়, বজলু মবিনের এই জীবনের বন্ধু, সে তার অতীতের তেমন কিছুই জানেনা, কেবল সে যে ছোট বেলায় একটা প্রেমে ধরা খাইছিলো সেই ঘটনা ছাড়া।
মবিনের জীবনে একটা আতি সামান্য তবে ছ্যাকা খাওয়া কষ্টা আছে, সে যে মেয়ে কে ভালোবাসতো ছোট বেলা সেই মেয়ে হারায়ে গেছে, তার জীবনের প্রায় সব চাপা পড়ে যাওয়া ধুলা মাখা স্মৃতির মাঝে কেবল রাসেদার চেহারাটা তার মনের ভেতর তোল পার করে, ওর মনে আছে রাসেদা আর ওরা একই বস্তিতে থাকতো। মেয়েটার সাথে নানন খেলা খেলতো মবিন, ভিষন ভালো বাসতো সে রাসেদাকে, রাসেদার ছিলো সৎ বাপ, লোকটা এমন হারামি সে নিজের এই মেয়েটারেও কামনা করত, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাসেদা বিষ খাইছিলো, সেটাই হইলো ওর কাল, রাসেদারে ধরা ধরি কইরা নিয়ে যাওয়া হইলো হাসপাতালে। সেইখানে সেইদিন এক কাজে আসছিলো এক সাংবাদিক, লোকটা বিষ খাওয়া রোগীর খবর পেয়ে, কাছে গিয়ে ছবি তুল্ল পত্রিকায় নিউজ দিবে ভাইবা, সেই ছবি গিয়া পড়লো এক পরিচালকের হাতে, তার আবার মনে ধরলো মেয়েটারে, এতো পরির মতন মেয়ে, এরে দিয়া হবে। একদিন খুজতে খুজতে সে বস্তিতে এসে হাজির, রসেদা বিক্রিহয়ে গেলো সেই পেট মোটা পরিচালোকের কাছে, ওর বাপই ওরে বেচে দিলো, নগদ ১৭ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে গেল মবিনের প্রেম কে। কত সখ ছিলো দুজন বড় হয়ে বিয়ে করবে, রাসেদার ছিলো সিনেমা দেখার সখ, আহারে "রাংগা ভাবি মা" ছবিটা দেইখা রাসেদার কি কান্না, মবিন রাসেদার কথা দিয়েছিলো, ওদের বিয়ের পর প্রতি সপ্তাহে সে রাসেদারে একটা সিনেমা দেখাবেই।
বজলু পিছন থেকে এসে মবিনের পিঠ চাপড়ায় কিরে আছোস ক্যামন, এহনও ঝিম মাইরা বইসা আছস, বলে সে মবিন কে রাসার ছবি ওলা পত্রিকাটা দেয়। নে দেখ নাইকার পোজ খান দেখ, কেমনে ভাজ দিয়া খাড়াইয়া রইছে, শালার মানুষ, ওড়না গেছে হাতে, আর যতো পারো উদাম হও হেইডাই বোলে ফ্যাশন, বলে সে আবার পুচ শব্দ করে পানের পিক ফালায়, মবিন ছবিটার দিকে তাকায় না, আলসেমী করে পাশে রাখে, বজলু ঠাঠা করে ওঠে কিরে তোর লইগা বিশটা ট্যাকা জলান্জলী দিয়া বইটা আনলাম, সারা দিন সিনেমা সিনেমা করস, দেখতে যাইতে কইলে যাবিনা, আজিব দুনিয়া। তুই রাসেদারে এখনও ভুলতে পারলিনা, মেয়েটা দেখতে কি খুব সুন্দর আছিলো,
মবিন অন্য দিকে তাকিয়ে বলে পরির মতন। তুই পরি দেখছস, সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আকাশ লাল হতে আরম্ভ করেছে, এর মধ্যে বজলু পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বলে দেখতো রাসেদা এই মেয়ের চেয়েও সুন্দর ছিলো। মবিন সেই উবে যাওয়া মৃদু আলোয়ে দেখতে পায় তার অতীত তার সামনে দ্বাড়িয়ে আছে, রাসেদা চুরি যাবার পর আর টিভি দেখেনি মবিন,
সিনেমা ভালো বাসতো মেয়েটা সিনেমা দেখা তো দুরের কথা সিনেমার পোষ্টারের দিকেও তাকায়নি সে, আজ বজলু কি দেখালো তাকে?! এতো সেই পরী।
৬
মবিন আর বজলু এফ ডি সি র সামনে দ্বাড়িয়ে আছে, একে একে নায়ক নাইকে দের গাড়ি বের হচ্ছে ঢুকে যাচ্ছে, মবিন অপেক্ষা করছে রাসার গাড়িটা কখন আসবে দেখার জন্য, গেটের দারোয়ান কে সে বিশ টাকা দিয়ে রেখেছে, রাসার গাড়ি টা এলে যেনো ওকে বলে দেয়, এফডিসির ভিতর দিয়ে একটা নীল রংয়ের গাড়ী বেড়িয়ে আসে, মবিন জানে রাসেদার পছন্দের রং নীল, সে গাড়ি টা ভেতরে ঝুকে তাকায়, রাসেদাকে দেখা যায়, সে জোরে ডাক দেয় রাসেদা, রাসা ঘাড় ঘুড়িয়ে লোকটার দিকে তায়, অস্পষ্ট মসৃন কাচের ওপাশের লোকটার মুখ সে দেখতে পায়না, তবে বুঝতে পারে কেউ একজন ওকে ডেকেছে, যে ওর চিরো চেনা চিরো আপন।
৭
রাসা দাড়িয়ে আছে জোয়ানের ফ্লাটের লিফটের সামনে, আজ তার মনটা ভীষন খারাপ, আজ সে খুব অপনমানিত হয়েছে, তাকে যেদিন সেই পরিচালক বস্তির ঘরথেকে কিনে এনে বিবস্ত্র করে নাচিয়ে ছিলো তখন ও সে এতটা অপমানিত বোধ করেনি, রাগে তার শরীর কাপছে, তার ভেনিটি ব্যাগে একটা ধারালো ছুড়ি রহিম চাচা এটা দিয়ে সবজি কাটে, সে রহিম চাচার কাছে বিদায় নিয়ে এসেছে, রহিম চাচাকে সে একদিন কুড়িয়ে পেয়েছিলো ফুট পাথে, তখন থেকে এই বৃদ্ব লোকটা আছে তার সাথে, আজ সকালে জেয়ান ফোন করেছিলো রাসা কে, সে তার কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেছে, নাহলে বলেছে রাসার জীবনের নাম ধাম সব শেষ হয়ে যাবে- জেয়ানের হাতে। রাসা প্রথমে অবাক হয়েছিলো, কি বলছে এই লোক? যাকে সে হাত ধরে এত উপরে উঠিয়েছে সে কিভাবে তাকে নিচে নামাবে? জেয়ান-ই হাসতে হাসতে বলেছে, হানি তুমি মাতাল হয়ে গেলে কি করো না করো তা তো তোমার হুশ থাকেনা, তোমাকে পরে সব মনে করিয়ে দেবার জন্য আমি সবকিছু ভিডিও করে রেখছি বলে হা হা শব্দ করে হাসতে থাকে।
শেষ কথাঃ গল্পটা দুই ভাবে শেষ করা যায়, আমি দুই ভাবেই লিখে দেই, প্রিয় ব্লগার আপনারাই বেছে নিবেন কোন টা ঠিক।
লিফট টা ১০ তলায় থামে, রাসা নেমে যায় লিফট থেকে, জেয়ান বাসায় একাই ছিলো, জেয়ানের এই বাসা টায় রাসা আগে কখোন আসেনি, জেয়ান দরজা খুলে দেয়।
রাসা ভেতরে ঢোকে, তাদের মধ্যে অনেক ক্ষন উত্তেজিত কথা-বার্তা চলে, উত্তেজনার এক পর্যায়ে, রাসা জেয়ান কে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে, শ্বাস নালী কেটে যাওয়ায় সাথে সাথে মৃত্যু হয় জেয়ানের।
পরের দিন পুলিশ জেয়ানের সেই ফ্লাট থেকে দুটো লাশ উদ্ধার করে, পুলিশের ধারনা, জেয়ান কে খুন করার পর, রাসা সেখানে বসে বেশি মাত্রায় হেরোইন সেবন করে এবং বিষ ক্রিয়ায় মারা যায়।
আর মবিন একাই থেকে যায় তার জীবনের একলা গলি পথে।
এবার দ্বিতীয় শেষ টা বলি, ১০ তলায় লিফট থেকে নামার পর রাসা জেয়ানের ফ্লাটটা খুজতে থাকে, মবিন এই ফ্লাট গুলোর কেয়ার টেকারের চাকরী পেয়ছে কিছু দিন হলো, সে রাসা কে দেখে থমকে দ্বাড়ায়, রাসা কিছু টা হচকিত হয়ে বলে, তুমি মবিন না? মবিন মাথা নারে, বলে হ্যা রাসু আমি মবিন, রাসা এত দিন পর মবিন কে দেখে আবেগি হয়ে ওঠে সে ভুলে যায় তার বর্তমান, অতিতের কোন এক অন্ধকার প্রকষ্ঠে জিইয়ে রাখা ভালোবাসা টা আজ এসে রাসার সামনে দাড়ায়, সে বহু পুরুষের সাথে বিছানায় গেছে, এলো মেলো বিছানার চাদরের উপর শুয়ে ভেবেছে এই কি সত্যিকারের সুখ? তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষ টাই তার সত্যি কারের প্রেম, জেয়ানের সাথে তার এই ভাঙনেও এই মানুষ টা কিছুটা দায়ী, সে সত্যিকারের ভালো বাসতে পারেনি জেয়ান কে। কে জেনো এসে তাদের ভালো বাসার মধ্যে দ্বাড়াত, এই মবিনই যে সেই, সেটা বুঝতে পারে রাসা।
সে মবিন কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে ওঠে।
সেই রাতে, রাসা মানে রাসেদা আর মবিন ঢাকা ছাড়ে, চলে যায় কোন এক দুর অজনায় সুখের খোজে।
আর জেয়ান, আমেরিকা চলে যায়, একটা ভালো চাকরির অফার পেয়ে, কিন্তু সেখান সে বেশি দিন চাকরী করতে পারেনা, তার সেই নেট থেকে ডিজাইন চুরিই তাকে জেলে পাঠায়, এক নামি ডিজাইনারের ডিজাইন চুরির দায়ে, সে এখন কেলিফোর্নিয়ার জেলে আছে।
মুখ বন্ধঃ
গল্পের সব গুলো চরিত্রই কল্পনিক, আল্লাহ তালা মানুষ কে একটা ব্যাপার দেয় নাই সেটা হলো আমরা যা দেখিনি বা সুনিনি তা কল্পনা করতে পারিনা, তাই হয়তো কল্পনার সেই সুতোয় কারো জীবনের ঘটনা লেখা হয়ে যেতে পারে সেটা সম্পুর্নই কাক তালিয়,
০৬/০৮/২০১২ দুপুর ১:৩০ খুব বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে, লেখাটা তাই বৃষ্টিকেই উৎসর্গ করলাম, চোখের পানিও তো বৃষ্টির মতনই ঝড়ে।
অনেকেই প্রশ্ন করে- কেনো আমার কিছু লেখায় কোন না কোন ভাবে নষ্ট ভিডিওর কথা থাকে? তাদের বলছি, আমাদের সমাজে এখন সবার হাতে হাতে ভিডিও মোবাইল পৌছে গেছে, আর মন থেকে মুছে গেছে ধর্মের আদব।
আমরা কোন নারী কে ফাদে ফোলার জন্য প্রথমে যেটা চেষ্টা করি সেটা হলো সেই নারীর একটু অসাবধান সময়ের ছবি তুলেতে, ইদানিং কিছু নারী ও অবশ্য এব্যাপারে পুরুষের চেয়েও অগ্রগামী। যা হোক আমি মানুষ কে দেখাতে চাই একটা নষ্ট ভিডিও তখনই তৈরী হবেনা যখন একজন নারী ও পুরুষ ধর্মীয় আদবের মধ্যে থাকবে, আগে তো তাও এই ভিডিও সংক্রান্ত জটিলতা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে ছিলো, এখন তো সেটা জাতীয় পর্যায়ে চলে গেছে, সেদিন নাকি কোন এক সংসদ সদস্যকে ও এই ফাদে ফেলা হয়েছিলো, আমরা যারা সাধারন মানুষ তাদের কে এই নষ্ট ভিডিও বিষ ছোবল থেকে বাচাতে পারে কেবল সচেতনতা আর ধর্মীয় আদব।
পোষ্টে ছবি ব্যাবহার করেছি ভিজুয়ালাইজেশনের সুবিধার জন্য। শেষে যে ছবিটা ব্যাবহার করেছি সেটা সাব্বির ফিরদৌস ভাইয়ের তোলা, আর বাকি গুলো কারো না কারো তোলা, নেট থেকে নেয়া।
ফেইস বুকে আমাকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
শরির এবং কয়েকজন অমানুষ (আঠেরোর উপরের লোকদের জন্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।