আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুটান ভ্রমণ

পেশাগত কারনে আমি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি। কিন্তু কাজের ফাঁকে সেই জায়গা গুলো ঘুরে বেড়াবার সুযোগ খুব বেশী হয় নাই। তাই বিভিন্ন সময়ে ছূটি নিয়ে বেড়াবার চেষ্টা করেছি। এমনি একটা ছুঠিতে বেড়াবার গল্প করবো আজ। ২০০৬ সাল আমি নানা কারনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম , এর মধ্যে একটা অন্যতম ঘটনা হলো আমার একজন কাছের মানুষের অকস্মাৎ মৃত্যু।

সামনে কোরবানীর লম্বা বন্ধ। ভাবছি- কি কর. কি করি। আমার সহকর্মী বললেন চলেন বেড়াতে যাই। আমি তো এক পায়ে খাড়া। কিন্তু যাবো কোথায় , ঠিক হলো আগে দল পাকাবো, তার পর স্থান নির্বাচন করা হবে।

আমরা সহকর্মী/ বন্ধু সহ আট জনের একটি দল হয়ে গেল- কিন্তু যাবো কোথায় ? আমার এক আড্ডাবাজ সহকর্মী বললেন -তোমরা ভুটান যাও। কিন্তু কিভাবে??? তিনি ,তার এক বন্ধু, ভোরের কাগজের সুকান্তদার সাথে আমাদের ধরায়ে দিলেন। আমরা দল বেঁধে রাতের বেলা ভোরের কাগজে গেলাম, বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এলাম। তারপর শুরু হলো বিস্তারিত পরিকল্পনাঃ কার কি কাজ, কত টাকা লাগবে কিভাবে যাবো। তাই টাইপ করে একটি বাস্তবায়ন কৌশল পত্র তৈরি হলো।

এনজিওতে চাকুরী করি তো, কাগজে পত্রে সব ঠিক রাখতে চাই বাস্তবে যাই হোক! শুরু হলো নিজেদের মধ্যে বিতর্কঃ আকাশ পথ না স্থল পথ- কোন পথে যাবো। নিজেদের পকেটের কথা বিবেচনা করে ঠিক হলো স্থল পথেই যাওয়া হবে। ভিসার দায়িত্ব দেওয়া হলো আমার এক দুর্দান্ত স্মার্ট বন্ধু- যে আমাদের সফরসঙ্গী। জানা গেল স্থল পথে যেতে হলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ডাবল এন্ট্রি ভিসা নিতে হবে। আমার বন্ধুটি বলল কোন সমস্যা নেই।

যাবার দেড় দিন আগে আমরা আমাদের পাসপোর্ট ফেরৎ পেলাম কাঙ্খিত ভিসাসহ। শুধু মাত্র আমার সেই দুর্দান্ত স্মার্ট বন্ধুটির ভিসা হয় নি। ওটা আরো তিন দিন সময় লাগবে। আমরা বৈধ/ অবৈধ সব পথ, নামাজ রোজা সব মানত করলাম যাতে ওর ভিসাটি হয়ে যায়। যে রাতে আমাদের বাস সেদিন দুপুরে ও কোন খবর নাই।

আমার বন্ধুটি বললো "তোমরা যাও আমি এরপর কখনো যাবো" মহানুভব আর কি। তখন আমি একটি অভদ্রজোনিত কাজ করেছিলাম। আমার বন্ধুটি যে সংস্থায় কাজ করতো, তার শীর্য ব্যক্তি আমাদের রাষ্ট্রে গুরুত্বপূণ ব্যক্তির মর্যাদা পেতেন। একবার তার সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেই স্বল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে আমি তাকে ফোন করে আমার বন্ধুর ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানাই। তিনি শুধু বললেন “I will call you back ” কি আশ্চর্য !কি আশ্চর্য !সন্ধ্যার মধ্যে ভিসা সহ পাসপোর্ট আমাদের হাতে চলে এল।

আমার আর খুশি ধরে না। এখন প্রশ্ন আমি কেন এত মরিয়া হলাম। আমাদের দলের ৩টি দম্পত্তি। আমি আর ও একসাথে গেলে সব কিছু শেয়ার করবো, ফলে আমার পকেটের উপর চাপ কমবে। পাঠক আপনাদের জন্য তথ্য হলোঃ যদি আপনারা স্থল পথে যেতে চান, তবে হাতে সময় নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ডাবল এন্টি ভিসার জন্য আবেদন করুন।

সেই রাতে দলে বলে আমরা রওয়ানা করলাম। পর দিন বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে প্রবেশ করলাম। সেখানে জলপাইগুড়ি গিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ঢুকলাম ভুটানে। জলপাই গুড়ির ওপাড়েই ভুটান- সীমান্ত -এলাকার নাম ফুলশিলং সেখানে নানান কাগজপত্রসহ ভুটানের ভিসা লাগিয়ে আমরা শেষ বিকালে রওনা করলাম রাজধানী থিম্পুর উদ্দেশ্যে। একটা জিপে আমরা গাদাগাদি করে চলেছি।

যেই মাত্র আমরা লোকালয় ছেড়ে থিম্পুর রাস্তায় পরলাম মুগ্ধ হয়ে গেলাম পাহাড় আর প্রকৃতি দেখে। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে রাস্তা চলে গেছে। পাহাড়ের গায়ে ঝর্ণা। আমরা সবাই তখন ক্লান্ত। ফলে সৌন্দর্য আর বেশি দেখতে পারি নাই , ঘুমিয়ে পরেছিলাম।

যখন ঘুম ভাংল তখন পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। আমরা থিম্পু পৌঁছে গেছি । আমরা হোটেলে ঠিক করে, খেয়ে দেয়ে আরাম করে আড্ডায় বসলাম। পরের পাঁচটা দিন আমরা জীবনের অত্যন্ত আনন্দের দিন। আমরা গিয়েছি দোচালা, পাহাড়ের উপর মন্দিরে গিয়েছি, একটি ছোট শহরের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ফিরে এসেছি, একটা অপরূপ সুন্দর রিসোর্টে থেকেছি, নিজেদের মধ্যে ভালো রুম পাবার জন্য ঝগড়া করেছি,মদ খেয়েছি,নেচেছি।

এর মধ্যে একদিন ছিল ঈদ, সবাই যার যার বাড়ীতে যোগাযোগ করলো। আমাদের দলে একজন আম্মাজান ছিল আমাদের জন্য ঈদের দিন খাবার জন্য শনপাপ্রি নিয়ে গিয়েছিল। তারপর ফেরার পালা। অদ্ভুদ সুন্দর আর আনন্দময় দিনগুলো। এই আনন্দময় মূহূর্ত বিস্বাদ হওয়া শুরু হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের ঘুষ দেবার মধ্য দিয়ে।

দেশের মাটিতে পা দিয়ে বুড়িমাড়ীতে আটকে গেলাম ৩ দিনের জন্য। তখন ততকালিন বিরোধী দলের লাগাতার অসহযোগ চলছিল। তিন দিন আর দুই রাত কাটালাম গণ বিছানায়। তারপর ফিরে এলাম এই চিরচেনা ঢাকায়। কিন্তু নিয়ে এলাম ভুটানের শান্তি প্রিয় আর অমায়িক মানুষের স্মৃতি।

শান্তি আর সাদামাঠা জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষদের জীবনে প্রাচুর্য দেখিনি। কিন্তু দেখেছিলাম স্বস্তি। আমরা আসার পর পর সেখানে হয়েছে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হোল। রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পদার্পনের এত মসৃন নজির পাওয়া খুবই বিরল। আসলে এই মানুষ গুলো শান্তি চায়।

তাইতো হ্যাপী ইনডেক্সে এই দেশাটির অবস্থান সবার উপরে। ভুটান থেকে ফিরে আসবার পর মাঝখানে কেটে গেছে ৬টি বছর এই ছয় বছরে বহু পরিবর্তন এসেছে আমাদের জীবনে -রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আমরা অসামরিক মুখোশে সেনা শাষন দেখলাম, অভূত পূর্ব গণ অংশগ্রহনের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার দেখলাম। কিন্তু ভুটানের মতো শান্তি আমাদের অধরাই রয়ে গেছে। এবার আমাদের নিজেদের কথা বলিঃ- সফর সাথী রেজোয়ান -রিপা তখন দিল নব-বিবাহিত দম্পত্তি, এখন তাদের একটা মেয়ে আছে। রিপা তখন পড়তো, এখন পড়ায়।

মিল্টন ভাই আর অ্যানির কোন আপডেট নেই আমার কাছ। বিপ্লব দা আর অরপিতা এখনো প্রানোচ্ছল জুটি। আমার সেই স্মার্ট বন্ধুটি একজন স্কটিশকে বিয়ে করে এক সন্তানের মা -শুনছি দ্বিতীয়টি নাকি আসছে। আর আমি- এখনো সকালে অফিসে যাই। বিকালে ক্লাস করি আর নেট এ ঘুরাঘুরি করি -------- আকাশের মতো একেলা, ভাই পাঠক সকল আপনাদের জন্য শেষ অংশে কিছু তথা আছে ।

যে তথ্য হিসেবে নিবেন সে তথ্য পাবেন আর যে----------------------------- শেষ কথাঃ ছবি আপলোড করতে পালামনা কারণ জনৈক শুভাক্ষাস্থী আমার হার্ডড্রাইভটি নিজের মনে করে নিয়ে গেছেন। । আমার সমশ্ত নরম নথিপথ (soft file) এর সাথে আমার সাথের ছবি গুলোও গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।