আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

(পরিস্থিতির সামগ্রিক পোর্ষ্টমর্টেম) নিয়ন্ত্রণহীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এলোমেলো শিক্ষা ব্যবস্থা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণহীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এলোমেলো হয়ে পড়েছে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের ঘন ঘন হরতালে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষার উচ্চস্তর পর্যন্ত। চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শিক্ষাবিদরা বলেছেন, ‘শিক্ষা পরিস্থিতি চরম হুমকির মুখে।

’ গত কয়েক সপ্তাহে হরতাল, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচির কবলে পড়ে ভেঙে পড়ছে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। স্থবির হয়ে পড়েছে পাঠদান পদ্ধতি। ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের ৩ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও স্কুলে ক্লাস হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিন। কয়েক দফা পিছিয়েছে এসএসসি এবং চলতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাটক করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে অরাজকতা সৃষ্টিকারীরা।

বিরোধী দলের হরতালে পরীক্ষাজট সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও। হরতালের কারণে ফেব্র“য়ারি থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ৬টি বর্ষের ১৫টি পরীক্ষা পিছিয়েছে। শঙ্কা বাড়ছে বিদেশে পড়া নিয়েও। এ অবস্থায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসন। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

এরই মধ্যে ১ এপ্রিলে শুরু হওয়া এইচএসসির তিন দফায় ১৭টি বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ হরতালের কারণে পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ফেব্র“য়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএসসির ৩৭টি বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছিল। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ইংলিশ মিডিয়াম ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ‘ফার্স্ট টার্ম’ পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও এসব স্কুলে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১৭ এপ্রিল থেকে। যদিও অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন ফার্স্ট টার্মের জন্য নির্দেশিত সিলেবাস কোনো প্রতিষ্ঠানই শেষ করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে চাপ পড়েছে মায়েদের ওপর।

একই অবস্থা ব্রিটিশ ও আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডে পরিচালিত ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল স্কুলগুলোতেও। সেশন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে এসব শিক্ষার্থী। ক্যামব্রিজ ও এডক্সেলের সিলেবাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া ইংরেজি মাধ্যমের ৭ মে থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা। চলবে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।

এমন হলে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সেশন থেকে পিছিয়ে যাবে। পাশাপাশি বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন অভিভাবকরা। কেননা বাতিল হওয়া পরীক্ষায় পরে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আবার নিবন্ধন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা জানায়, অতীতে রাজনৈতিক দলের হরতালে সহিংসতা, মারামারি ও বোমাবাজি কম হতো।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের হরতালে সহিংসতা ও বোমাবাজি অনেক বেশি হচ্ছে। এমনকি কোমলমতি স্কুল ছাত্রছাত্রীরা হরতালকারীদের বাধার মুখে পড়ছে। রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, জানুয়ারিতে ক্লাস শুরুর পর এই পর্যন্ত গড়ে রাজধানীর সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ থেকে ২৫ দিনের বেশি ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়নি। অভিভাবকরা জানান, হরতালে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারে না। শিক্ষকরা কাউকে বঞ্চিত রেখে সিলেবাস শেষ করতে পারছে না।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই হরতালে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৬ এপ্রিল বলেন, ‘হরতালের কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। একবার হরতালের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে উঠতে আবার হরতাল ডাকা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, দু-একটি রাজনৈতিক দলের খাম-খেয়ালিপনার কাছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন জিম্মি হয়ে আছে। ’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে হরতাল না দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবুও হরতাল দিয়েই যাচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী। ’ এদিকে লাগাতার হরতালের কারণে পরীক্ষা বিলম্বের কারণে ফল ঘোষণায় দেরির আশঙ্কা বাড়ছে। এমন হলে উচ্চশিক্ষাস্তর নিয়ে আরো শঙ্কা বাড়বে। এইচএসসির ফল উচ্চশিক্ষা এবং দেশের বাইরের শিক্ষা সময়কালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ঠিক সময়ে এইচএসসি স্তর শেষ করতে না পারলে বিদেশের জুন-সেপ্টেম্বর সেশন ধরতে পারবে না উত্তীর্ণরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়কারী প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেন, ‘বারবার পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করলে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। আমরা নিরুপায় হয়েই রুটিন পরিবর্তন করছি। এরপরও ঘোষিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ’ তিনি বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করতে পারব আমরা। ’ যদিও বিষয়টি সহজ ভাবছেন না অনেকে।

আগামী ২২ ও ২৩ তারিখ সম্ভাব্য হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধী বিচার মামলায় অভিযুক্ত কামারুজ্জামান এবং গতকাল গোলাম আযমের মামলার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় বিচারের রায় প্রদানের সময় জামায়াত-শিবির আগামী সপ্তাহে আবারো হরতাল এবং নাশকতা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে নতুন করে সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য এবং প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাব্বত খান বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ক্ষতি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার নজির নেই।

এসব কারণে শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষতিই হচ্ছে না, তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকেই ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ’ হরতাল এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হরতাল এবং চলমান অস্থিরতায় জনগণের ক্ষতি হচ্ছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, জাতীয় সম্পত্তিও নষ্ট হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান সম্ভব সেখানে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি প্রমাণ করে এরা দেশের মঙ্গল চায় না। তথ্যসূত্র: Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.