তার লেখাপড়া বেশিদুর এগোয়নি। ছিলেন বাস ড্রাইভার। কিন্তু সূক্ষ্ণ কূটনৈতিক চাল, ফ্যাসিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আর নেতৃত্বের বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য পালন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো কঠিন দায়িত্ব। ভেনেজুয়েলার অবিসংবাদিত মহান নেতা হুগো শ্যাভেজকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে তার ছিল মুখ্য ভূমিকা। নেতৃত্বের ক্যারিশম্যাটিক যোগ্যতায় বর্তমানে হাল ধরেছেন ভেনেজুয়েলার।
তিনি নিকোলাস মাদুরো মোরোস, ভেনেজুয়েলার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
নিকোলাস মাদুরো জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালে কারাকাসে। বাবা কমিউনিস্ট নেতা হওয়ায় মাদুরোর রক্তেই মিশে রয়েছে রাজনীতি। পরিবারে কমিউনিস্ট চর্চা চালু থাকায় তার রাজনীতির হাতেখড়ি হয় বাড়িতেই। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মাদুরো জীবিকার তাগিদে বেশ কয়েক বছর কারাকাস মেট্রো সিস্টেমে বাস ড্রাইভারের চাকরি করেন।
এক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন তিনি। সেখান থেকেই মূলত রাজনীতির শুরু মাদুরোর। এক পর্যায়ে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করে দেয়। ১৯৮৩ সালে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হোসে ভিনসেন্তে র্যা ঞ্জেলের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
তবে মাদুরো মূলধারার রাজনীতিতে আসেন ১৯৯০ সালে হুগো শ্যাভেজের সামরিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে।
সেই আন্দোলনের বেসামরিক শাখা এমবিআর-২০০’র সদস্য হন মাদুরো। ১৯৯২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় কারাদণ্ড হয় শ্যাভেজের।
১৯৯৪ সালে শ্যাভেজের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হয়ে লাইমলাইটে আসেন নিকোলাস মাদুরো। ওই বছর মুক্তি পান শ্যাভেজ এবং ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন তিনি। সেই সময় প্রথমবারের মতো ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য হন মাদুরো।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে তিনি ভেনেজুয়েলার সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে মনোনিত হন মাদুরো।
২০০৬ সালে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাদুরো। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদের কড়া সমালোচক ছিলেন হুগো শ্যাভেজ। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমেরিকার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বুশকে ‘খুনি’ এবং ‘রক্ত পিপাসু’ বলে অভিহিত করেছিলেন শ্যাভেজ।
সেই একই আদর্শ এবং মানসিকতার অনুসারী নিকোলাস মাদুরো। ২০০৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তৎকালিন আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইসকে ‘হিটলার’ এবং ‘ভণ্ড’ বলে উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাদুরো নিজের মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন প্রতিবেশি দেশ কলম্বিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে। এছাড়াও তারই সময়ে ইরান এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট শাসিত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়।
২০১২ সালে হুগো শ্যাভেজ পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান মাদুরো।
ক্যান্সার আক্রান্ত শ্যাভেজের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা গণমাধ্যমে মাদুরোই প্রকাশ করতেন। সন্তষ্ট শ্যাভেজের কাছে মাদুরো ছিলেন সন্তুান তুল্য।
মাদুরোর স্ত্রী সিলিয়া ফ্লোরেস ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল কংগ্রেসের স্পিকার এবং একজন আইনজীবী।
শ্যাভেজের অনুসারী হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও নির্বাচন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করেন মাদুরো সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।