ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি দুদিন আগে ইফতারের খানিকক্ষণ আগে এক বড় ভাইজান মুবাইলে ম্যাসেজ দিল “ডেটিং এ যামু। ৩০০ টাকা ধার দাও”। আমি আল্লাহর তৈরী অধম বান্দা। ডেটিং সংক্রান্ত ঝামেলা টামেলা বুজি কম। তাছাড়া ইফতারের কিছু আগে উহারা ডেটিং এ কুথায় যাবে ইহাও আমার বোধগম্য হইল না।
আমি ম্যাসেজ এ রিপ্লাই দিলাম “টিউশনির টেকা পেরায় শেষের দিকে। তয় দিবার পারুম। কিন্তু কতা হইল এই ইফতারের আগে আফনে কুতায় যাইবেন!” ভাইজান রিপ্লাই দিল “তুমি এইগুলান বুঝবা না, আমি তুমাগো বাসার অতিশয় সন্নিকটে। ” উনি আরও কহিলেন বাসার নিকট আসিয়া “মিচকল” দিবেন। যাহা হোক, টেকা পয়সা লইয়া বাহির হইতে উদ্যত হইলাম।
কিছুদূর যাইয়া দেখি লাল্লু কালারের এক পাঞ্জাবী পড়িয়া ভাইজান রাস্তা ধরিয়া হাটিয়া আসিতেছেন আর ভাবী থুক্কু উনার জিএফ নীল শাড়ি পড়িয়া উহার হাতে হাত রাখিয়া আসিতেছেন। বড়ই মনোহর দৃশ্য! তয় আমি আমার সুগভীর দৃষ্টি সহকারে দেখিলাম রাস্তার আশেপাশের কিছু লুল ভাইয়ারা অপলক দৃষ্টিতে আফামণির দিকে তাকাইয়া আছেন। ক্ষণকাল বাদে তাহারা যখন আমার সন্নিকটে আসিলেন তখন ভাইজান আমারে সজোড়ে ধাক্কা দিয়া কুশল বিনিময় করিলেন এবং ভাবী থুক্কু আফামণির লগে পরিচয় করাইয়া দিলেন। আমি মুগধ চৌক্ষে আফামণিকে দেখিতে লাগিলাম এবং সর্বশেষ কহিয়াই ফালাইলাম আফু, আপনাকে না আইজকে বড়ই সৌন্দর লাগিতেছে! এ পর্যায়ে বড় ভাইজান হালকা ধাক্কা দিয়া আমাকে রাস্তার এক পাশে সড়াইয়া লইয়া গেলেন এবং কহিলেন ইফতারের আর বেশি সময় বাকি নাই, টেকা দিয়া দিতে। আমি আলতো করিয়া তাহার নিকট টাকা প্রদান করিলাম।
উহাদের প্রস্থানের পূর্বে আপু আমাকে বলিলেন, “যাবি নাকি আমাদের সাথে? চল ইফতার করে আসি!” আমি হালকা লজ্জিত হইয়া কহিলাম “না না!! কি যে বলেন না!” অতঃপর উহারা প্রস্থান করিলে আমি ভাবিতে লাগিলাম রোজা রাখিয়া বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড ইফতার করিলে সঠিকরূপে রোজা হইবে কি না! তয় আমার মনে লইল রোজা সঠিক রূপে হওনের চান্স বেশ কম। নিদেনপক্ষে হালকা হইবে –ইহা সুনিশ্চিত। এই সকল ভাবিতে ভাবিতে হঠাত করিয়া দেখি আমার সম্মুখে এক রিকশা হার্ড বেরেক করিল এবং রিকশাওয়ালা মামা চিল্লায়ে উঠিয়া কহিলেন, ওই মিয়া দেইখা রাস্তায় হাটবার পার না! মহল্লার রাস্তায় রিকশার তলে পড়িয়া ইতিহাস ঘটনো হইতে সামান্য দূরে থাকিতে আমি কহিলাম, “মামা, দেইখা হাটলেতো তুমার রিকশা দেখতামই!” মামা আমাকে আর ঘাটাইল না! অতঃপর রিকশা প্রস্থান করিল এবং আমি বাসার পথে রওনা দিলাম।
ইফতারের পরে আম্মা কহিল আমাকে লইয়া মার্কেটে যাইবে। আমি কহিলাম আমার টিউশনি আছে।
আজকে না পরে যামু। আম্মা কয় তুই না হয় আইজকা নাই গেলি। আমি কহিলাম, না যাওন লাগব। তুমি মার্কেট যাও, আমি আসিতেছি। আর মার্কেটে ঘুড়াঘুড়িও আমার ভালু লাগে না।
অতঃপর ইফতারের পরে দৌড়াইতে দৌড়াইতে ছাত্রের বাসায় গিয়া মিনিট দশেক উল্কার বেগে কলিংবেল টিপিলাম। কুনু সাড়া শব্দ নাই! ক্ষণকাল পরে এক আগুন সুন্দরী আফামণি দরাজ খুলিয়া ভিতর যাহিতে কহিলেন। আমি এই দফাই পুরাই লুলায়িত হইলাম। এই বাসায়ও যে আগুন সুন্দরী রমণী থাকে তাহা আমার বোধগম্যের বাহিরে। ভিতরে প্রবেশ করিয়া জানিলাম ছাত্র আমার উহার চাচার বাসায় গেছে! মিজাজ পুরাই খ্রাপ হইয়া গেল।
ছাগল, যেইখানে যাবি যা, একটা ফুন তো দিতে পারতি!! যাহা হোক, বাসা ছাড়িতে উদ্যত হইলে ছাত্রের বাসায় আগত উহার জনৈক মামা আমাকে বলিলেন
- বাবা, সামিরের তো পড়া-লেখায় মন নাই।
-হুম, মাঝে মাঝে তো ও হোমওয়ার্ক করে না!(মনে মনে কহিলাম আমি কি ওরে লাডি দিয়া পিডাইয়া ফড়ালেয়ায় মন আনুম নিকি!! ছাগল)
-ফিজিক্সের অঙ্ক চেঞ্জ কইরা দিলে তো কিছুই পারে না!
-প্র্যাক্টিস কম তো তাই!
-এইবার তো “এ” পাইছে ফিজিক্সে
-হুম দেখা যাক কি হয়, বোর্ড পরীক্ষায় ভাল করবে..
-ক্লাসে ভাল না করলে ফাইনালে কেমনে ভাল করবে?
এই কুয়েশ্চেনের আন্স আমার অজানা! একবার ভাবিলাম কহি, এইবার এ+ পাইছে ৬০ হাজার, পরের বার পাইব ৮০ হাজার। এই ৮০ হাজার ইশটুডেন্ট নিশ্চয়ই কলেজে সর্ব বিষয়ে এ পিলাচ পাইয়া আসিবে না! পরে চিন্তা করিলাম এত্ত ত্যানা পেচানো অর্থহীন। আস্তে করে কহিলাম, “আঙ্খেল, আমার একটু জরুরী কাজ আছে। সামিরের জন্য একটা ম্যাথের কুয়েশ্চেন কইরা আনছিলাম।
এইটা ওরে দিয়েন। ” কহিয়া উল্কার বেগে বাসা হইতে বাহির হইলাম।
এদিকে আম্মা আমাকে ফুনের পর ফুন দিচ্ছেন। অতঃপর মার্কেটের সন্নিকটে আসিয়া কিছু শান্তি পাইলাম। পুরাদমে শান্তি পাইলাম যখন মার্কেটের ভিতরে প্রবেশ করিলাম।
এসির হাওয়াও মন জুড়াইয়া গেল। মনে লইল মিডিয়াম একটা বেহেশতে ঢুইকা পড়ছি। বেহেশতে যেমুন ৭০টা হুরপরী পাওন যায় এইখানে অগণিত। তয় বেশির ভাগ পরীর লগে “খারাপ” জীন টাইপ বয়ফেরেন্ড আছিল দেখিয়া ঠিক মতন চোক্ষু তুলিয়া উহাদের দিকে তাকানোও মুশকিল। লুল ভাইয়ারা যারা আমাকে “জাতীয় লুল” বা “লুলশ্রেষ্ঠ” খেতাব দিতে যাচ্ছেন তাহাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কহিলাম ইচ্ছা করিয়া ললনাদের দিকে তাকাই নাই।
সম্মুখে যদি এইরাম টিশার্ট থেকে জিন্স পরিহিতা ললনারা ঘুড়িয়া বেড়ায় তাহলে একবার হইলেও চক্ষু পড়িবেই। না পড়িলে বুঝিতে হইবেক চৌক্ষুর সমস্যা আছে! আর এইখানে আমার কইলাম কুনু দুষ নাই। আমি তো আর মাটির দিকে তাকাইয়া হাটুম না। এদিকে আম্মা ফুন দিয়া কহিল তিনি অমুক দুকানে আছেন। আমি তো আর ছাই দোকানের উপ্রের দিকে তাকাইয়া হাটি না, দুকানের ভিত্রের দিক তাকাইয়া হাটি তাই আর কি দুকান খুজিয়া পাহিতে বেশ কষ্ট হইয়াছে।
ইতিমইধ্যে দেখি এক লুল ভাইয়া তাহার বউ থুক্কু গার্লফ্রেন্ডকে একটু সজোড়ে আঁকড়াইয়া ধরিয়া রইয়াছিলেন বলিয়া উহার জিএফের চিল্লাচিল্লিতে সামান্য জটলার সৃষ্টি হইয়াছে। উহাদের “বন্ধন” রবির নেটওয়ার্কের মতন শক্তিশালী বলিয়া সামান্য সময়ের মইধ্যে ঠিক হইয়া গেল। যাহা হোক, দুকান খুজিয়া পাইয়া আম্মার লগে দেখা করিয়া জানিলাম উনার কেনাকাটা অনেকটাই শেষ!! আমি কহিলাম একদিনে কি কিনলা??!! আর আমার জন্য তো কিছুই কিনিলা না! তাছাড়া তুমার তো বেশ কয়েকদিন আইসা দেইখা তারপরে কিনা উচিত ছিল। দরকার হইলে আমি প্রত্যেকদিন আসব। দশ-বার দিন ঘুইরা তারপরে কিনুম।
আম্মা আমার এ হেন কথায় সামান্য তাজ্জব হইলেন তাহা আর পাঠককুলকে বুঝাইয়া কহিতে হইবে না! পাশে তাকাইয়া দেখি এক ললনা তাহার বান্ধুবী/কাজিনকে বলিতেছে “এইটা কি সুন্দর না?!” আমি কহিলাম “অবশ্যই অবশ্যই সুন্দর!” হঠাত আম্মা কহিল, “বিড়বিড় কইরা কি কস?” আমি কহিলাম কিছু না কিছু না!
এদিকে আরও কিছু কেনাকাটা করিয়া মার্কেট হইতে বাহির হওনের সময় পাশ দিয়া অতিক্রমকারী এক ললনা তাহার বয়ফ্রেন্ড/হাজবেন্ডকে বলিতেছে মার্কেট করতে আর ভালু লাগে না! যেই ভিড়! ভাইজানের মুখের দিকে তাকাইয়া দেখিলাম এক বান্ডেল বস্তা সহকারে সামান্য মলিন হাসি! বুঝিলাম উহার টাকা-পয়সা সমূলে উৎপাটিত হইয়াছে আজকে!
মনে মনে আরও ভাবিতে ভাবিতে একখান সূত্র আবিষ্কার করিলাম - “অধিক মার্কেট করা ললনা যদি কাহারও বউ হয় তাহলে সৃষ্ট সমস্যা, গার্লফ্রেন্ড হইলে সৃষ্ট সমস্যার ঘনমূলের সমান। ” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।