এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক...
অনেকেই বলেন ভালোবাসা নাকি সংজ্ঞাহীন। অবশ্য আমার তেমনটা মনে হয় না। আসলে মানুষ ভালোবাসাকে মানুষ সংজ্ঞাবদ্ধ কিছু ভাবতে একটু অস্বস্তি বোধ করে। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত একটা ব্যাপার সংজ্ঞাহীন বা সংজ্ঞার উর্ধ্বে, ততক্ষণ সেটা অলৌকিক, ততক্ষণ সেটা একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর বাইরে। কিন্তু সংজ্ঞা দেয়া মাত্র ভালোবাসা অতি সাধারণ।
জগতের আর ১০টা ব্যাপারের মতোই। বৃষ্টি পড়া... বাতাস বয়ে যাওয়া... গাছ থেকে পাতা পড়া বা ফুটবল খেলার মতই...। কোন বিশেষত্ব নেই। প্রিয়জনকে এমন সাধারণ কিছু উপহার দেয়ার কোন মানে হয় না!
কাপলদের (অধিকাংশ) দেখেছি, ভালোবাসার শারিরিক পার্টটুকু নিয়ে ভাবতে তাদের দারুণ অস্বস্তি। ভাবটা এমন যেন এটা খুব ক্ষুদ্র অংশ অথবা এটার যেন কোন অস্তিত্বই নেই।
যেন যেটাকে ভালোবাসা বলা হচ্ছে তার পুরোটাই 'মন' এর বিষয়। কিন্তু মন যে বুকের সামান্য বাম দিকে থাকে না সেটা আমরা প্রায় সবাই জানি। মনের অস্তিত্ব আছে - তবে সেটা বুকের কয়েক ইঞ্চি বামে না বরং ফুটখানেক ওপরে। যখন কেউ বলে- "আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি..." - আসলে সে বলতে চায়, আমি মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ দিয়ে তোমার কথা ভাবি যেখানে যুক্তি খুব একটা পাত্তা পায়না, যেখানে ভারি অসম্ভব কাজগুলোকেও সম্ভব বলে মনে হয়, যেখানে লাভ-ক্ষতি আর হিসেব-নিকেশটা বড় নয় - তোমার সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে ধারাবহিকতা দেয়াটাই মুখ্য। এই পুরো চিন্তাটাই কিন্তু হচ্ছে মস্তিষ্কে।
মস্তিকের ভাবনাগুলো স্বস্তিভাব আনছে, প্রশান্তি দিচ্ছে, আমোদ দিচ্ছে পুরো শরীরকে। আর মস্তিষ্কতো শরীরেরই অংশ। তাহলে প্রেম শারিরিক নয় কিভাবে? সব প্রেমই শারিরিক। পার্থক্যটা ব্রেইনের কোন অংশে ভাবনাটা আসছে, কি উদ্দেশ্যে আসছে আর সেটা স্বল্পস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী সেখানে।
মানুষ সব জায়াগায়ই একটা আলগা খোলস চায়।
এটা মানুষের স্বভাব। অংকে দশমিক শুদ্ধ বা ভগ্নাংশসহ উত্তর দেখতে ভালো লাগে না; পূর্ণ সংখ্যা দেখতে ভালো লাগে। অপূর্ণতাকে ঢাকতে মানুষ অযুহাত খোঁজে, সান্ত্বনা খোঁজে। শত কষ্টের মাঝেও মানুষ স্বপ্ন দেখে। ভাবতে ভালোবাসে কষ্টের সময়টুকু পেরিয়ে সে সুখের দেখা পাবে।
গাধার সামনে মুলো ঝুলায় মানুষ, সেই মানুষই আবার নিজের সামনে মুলো ঝোলায়। আজীবন ছুটে চলে মুলোর পাণে।
তবে খোলস জরুরী...
কেন?
ছোটবেলায় যখন বাবা-মা'কে জিজ্ঞেস করতাম - বাচ্চা কোথা থেকে আসে - উত্তর পেয়েছি, "বাচ্চা দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। " বড় হয়ে সত্য জানার পরে রাগ হয়েছিলো। পরে সেটা কমেছে বন্ধু-বান্ধবদের তাদের বাবা-মা'র বলা উত্তরগুলো শুনে, হাসিও পেয়েছিলো।
তাদের কাউকে বলা হয়েছে বাচ্চা দৈত্য এসে বাড়ির সামনে রেখে যায় (হ্যারি পটার স্টাইল), কাউকে আবার বলা হয়েছে বাচ্চা আকাশ থেকে পড়ে। সঠিক উত্তরটা জানার পর এটা নিয়ে অনেক আগ্রহ জন্মেছে এবং এত গবেষণা করেছি যে একটা সময় এটা নিয়ে আগ্রহ মারাত্মকভাবে হ্র্রাস পেয়েছিলো।
এই যে শারিরিক প্রেমকে মানবিক রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা, সেটা কিন্তু শরীরী আকর্ষণের কারণেই। এখানে মানবিক দিকটা একটা সুনিয়ন্ত্রিত খোলস। কিন্তু যখন কেউ শরীরী বিষয়গুলোকে অতিমাত্রায় বিশ্লেষণ শুরু করবে ধীরে ধীরে তার মনে হবে - ধুর! এটা কোন ফিলিংস হলো? মাত্র মিনিটখানেকের এই-সেই... তারপর যেইকে সেই... কোন নতুনত্ব নেই... আগ্রহ আরও হারাবে জীববিজ্ঞানের বইয়ের পাতায় পড়া বাক্যগুলোকে বাস্তবিকভাবে চিন্তা করলে।
খোলসটা সেখানেই ভেঙে যায়। সত্য বের হয়ে আসে।
জগতের সব সত্য তিতা না। কিছু সত্য মিষ্টি, তবে ললিপপের মত। একবারে শেষ করতে নেই, চাবিয়ে খেতে নেই।
৩০.০৭.২০১২
রাত ১১টা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।