লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে সব সময় ভালো লাগে। নতুন নতুন "গল্প" লিখতে বেশী ভালো লাগে। ।
পর্ব ১০ থেকে ১২,,
১০.
চৈতি ওর মা বাবার সাথে অটোতে করে চলে গেলো।
শুভ্রর চোখ ভারী হয়ে আছে তবু কিছুতেই কেউকে বুঝতে দিচ্ছেনা। কিছুতেই যেনো চৈতিকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিলোনা শুভ্রর। তবু যেতে তো দিতেই হবে! বেঁধে রাখার মত ক্ষমতা শুভ্রর যে নেই।
কিরে কি চিন্তা করছিস?
কোথায়? কিছুনা মামুন! চল যাওয়া যাক।
শুভ্রর বাবা, মাকে একটা মাইক্রোতে উঠিয়ে দিয়ে অন্য একটা গাড়িতে শুভ্র, মামুন আর মামুনের বন্ধুরা একসঙ্গে যাচ্ছে! শুভ্রর মামা বাড়ির দিকে।
গাড়ি চালাচ্ছে হিরন। শুভ্র আর মামুন বসেছে পিছের সিটে।
হুম, এবার বল? তোদের "লাভ স্টোরি" টা খুইলা বল? মামুনকে বলল শুভ্র।
আরে বলবো বলবো, এতো ব্যাস্ত কেন তুই? আইছোস যখন, সবই শুনবি। তোর সাথে অনেক কথা বলবো, কত কথা জমানো আছে! সব শুনবি।
এই দুইদিন শুধু কথাই হবে আর কিছুনা। ।
কেন? বিয়ার পর কি সব শেষ?? তখন কি সব কথা ভাবীর লগে কবি?
আরে দোস্ত, এতো মজা করিস কেন? তুই শুধু আমার ভাই না! তুই আমার অনেক কিছু। আমি এখনো যেরকম আছি, বিয়ার পরো তেমনই পাবি আমারে। তুই আর তোর ভাবী কি এক হইলো নাকি?
হ' মামা বুঝছি, আর কইতে হবেনা।
এখন তোদের কাহিনীটা একটু বল শুনি...
হুম শোন তাহলে, মিতার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় দুই বছর আগে। ওই যে নাইম রে দেখছিস না? ওর জন্যই মামা আমি মিতার দেখা পেয়েছি! ওইদিন নাইমের বার্থ ডে ছিল। আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ওর বার্থডে পার্টির আয়োজন করছিলাম। নাইমের গার্ল ফ্রেন্ড সীমা এসেছিলো সেদিন। আর সাথে ছিলো ওর বান্ধবী "মিতা"
কি বলবো তোকে মামা! আমি মিতাকে প্রথম দেখেই ওর প্রেমে পড়ে গেছিলাম।
এক কথায় আমি পাগল হয়ে গেছিলাম সেদিন! এরপর নাইমের কাছ থেকেই মিতার ফোন নাম্বারটা ম্যানেজ করি। তারপর তো সব বুঝছিসই.. এভাবেই আমাদের প্রেম শুরু হলো আর এখন বিয়ে করতে যাচ্ছি মিতাকে। ।
তুই মিতাকে অনেক ভালবাসিস! না??
হুম, অনেক ভালোবাসি! শুধু অনেক ভালোবাসি বললে ভুল হবে, আমি মিতাকে না পেলে জানিনা কি হতো আমার লাইফে! মিতাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে কল্পনাও করতে পারিনা।
বুঝেছি।
। আর বলতে হবেনা।
শুভ্র তুই জানিস না! সত্যিই আমি অনেক বড় ভাগ্যবান! যে মিতার মত একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার প্রথম ভালোবাসাকে আমি পেয়েছি, এজন্যও আমি একজন লাকি ম্যান! ও তোকে তো আরেকটা কথা বলাই হইনি...
কি? কি কথা বল??
না থাক, এখন আর বলে বা কি লাভ? বাদ দে..
প্লিজ বল?
কি আর বলবো? তুই তো প্রেম করেই ফেলেছিস। না করলে বলতাম।
মানে? আমার প্রেমের সাথে এই কথার কি সম্পর্ক? তুই কি কোন মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছিলি নাকি আমার জন্য?
হুম, ঠিক ধরেছিস। পছন্দ শুধু করেই রেখেছিলাম না, যে মেয়েটাকে পছন্দ করে রেখেছিলাম তোর জন্য? সে তোর সম্পর্কে সব কিছুই জানে! এমনকি তোকে দেখার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে মেয়েটা।
কি বলছিস এসব? আমাকে যে কখনো বলিসনি? মেয়েটা কে?
তোকে বলবো কি করে? তুই তো ঠিক মত যোগাযোগও রাখিসনা। আর পড়াশুনা ছাড়া তোর তো অন্য কোনোদিকে খেয়ালও নাই। তাই ভেবেছিলাম যখন আসবি তখনই বলবো।
"সারপ্রাইজ" হিসেবে রেখে দিয়েছিলাম। মেয়েটা হচ্ছে আমার শালী "সঞ্চিতা" খুবই সুন্দর এবং চালু একটা মেয়ে। আমার বিশ্বাস তোর প্রথমবার দেখলেই পছন্দ হবে। । তবে এগুলো এখন বলেও বা ফায়দা কি? তোর মনের রাজ্যে তো এখন একটাই রানী, সে হলো "চৈতি"
মামুনের কথাগুলো শুনে শুভ্র কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছেনা।
একটু চুপ করে থেকে বলল, আচ্ছা চল তারপর দেখা যাবে কেমন সুন্দর মেয়ে। এখনো তো আর বিয়ে করে ফেলিনি! বিয়ে করে ফেললে না হয় অন্য কথা ছিল। এখনো তো স্বাধীনতা টা নিজের হাতের মধ্যেই আছে তাইনা? চল দেখা যাবে...
শুভ্রর মুখে এরকম কথা শুনে মামুন হেঁসে উঠলো, হা হা হা হা...এইতো শুভ্র এটাইতো আসল পুরুষ মানুষের মত একটা কথা কইলি এতদিন পর! চল তাহলে তোকে আগে আমার শালীর লগে দেখা করাইয়া নিয়া আসি।
কোথায়? কোথায় যাবি এখন?
শালীর সঙ্গে দেখা করবিনা? হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে ঘুরে তারপর বাড়ি যাবো। বুঝলি?
এখন এই অবস্থায় তোর শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া কি ঠিক হবে?
আরে কি যে বলিস? আমিতো প্রতিদিনই এক চক্কর ওই বাড়িতে না গেলে পেটের ভাত হজম হইনা।
মিতাকে না দেখলে রাতের ঘুমও মাটি হয়ে যাই!
তাই নাকি? শুধু মিতাকেই দেখতে যাস, নাকি সাথে শালীটাকেও একটু দেখে আসিস??
হা হা হা, শালা কথায় কথায় তোর রসিকতা করার অভ্যাস টা এখনো গেলোনা। চল গেলেই বুঝতে পারবি..
গাড়ি নিয়ে মামুন সোজা মিতাদের বাসার সামনে গিয়ে থামালো। পকেট থেকে ফোনটা বেরিয়ে মিতার মোবাইলে কল করলো মামুন। মিতা ফোন রিসিভ করে,
মিতা: এই তুমি এখন ফোন দিছো কেন? বাসায় এখন অনেক লোক! পরে কথা বলবো তোমার সঙ্গে। এখন রাখি।
।
মামুন: আরে ফোন রেখোনা! আমি তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। একটু জরুরী দরকার ছিল। প্লিজ একটু বাইরে আসোনা?
মিতা: ইম্পসিবল! এই মুহূর্তে বাইরে আসা সম্ভব না। তুমি এখন যাও সোনা, পরে দেখা করবো।
বোঝনা কেন? বাসা ভর্তি মেহমান। তাদেরকে সময় দিতে হচ্ছে।
মামুন: ওকে ঠিক আছে আসা লাগবেনা। শুধু দোতালার বারান্দাতে একটু এসে দাঁরাও, একবার দেখেই চলে যাবো। আর হ্যাঁ, সঞ্চিতাকে সাথে করে নিয়ে এসো।
মিতা: কেন? আবার সঞ্চিতাকে সাথে আনা লাগবে কেন? আমি একা আসলেই তো হচ্ছে।
মামুন: আরে বুঝছোনা তুমি, "শুভ্র" এসেছে!!
মিতা: কি? সত্যিই!! আচ্ছা আমি সঞ্চিতাকে নিয়ে আসছি এখনই।
মিতা সঞ্চিতাকে গিয়ে বলল, এই এদিকে আই।
কি হয়েছে আপু?
তোর রোমিও চলে এসেছে তো!
মানে? কি বলছিস এসব?
মানে মানে কিছুনা। আমার সাথে চল তাহলে বুঝতে পারবি।
শুভ্র আর মামুন গাড়ির বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মিতা "সঞ্চিতাকে" সাথে নিয়ে দোতালার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। মামুন শুভ্রকে ডেকে,
হুম, উপরের দিকে তাকা!
শুভ্র উপরের দিকে তাকালো। শুভ্র বুঝতে পারছেনা কোনটা মিতা আর কোনটা সঞ্চিতা। মামুন হাত নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো ডান পাশে সঞ্চিতা দাঁড়ানো।
শুভ্র একবার দেখে লজ্জায় মাথাটা নিচে করে ফেলল। ওদিকে সঞ্চিতা বারান্দায় দাড়িয়ে দুলাভাইকে দেখতে পেয়ে হাঁসি দিয়ে বলল, হাই দুলাভাই! ওখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?
ভেতরে আসুন। ।
মামুন সঞ্চিতাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, আজকে বাসায় ঢুকতে আসিনি। তোমার রোমিও কে নিয়ে এসেছি তোমাকে দেখাতে।
মামুনের কথায় কিছু বুঝতে পারলোনা
সঞ্চিতা। পাশ থেকে মিতা সঞ্চিতার কানে কানে বলল, তোর দুলাভাইয়ের পাশে দাঁড়ানো যে ছেলেটা সেটাই হলো "শুভ্র"
একথা শুনেই যেন সঞ্চিতা আকাশ থেকে পড়লো। ভীষণ একটা লজ্জার হাঁসি দিয়ে
সেখান থেকে দৌড়ে ঘরের মধ্যে চলে গেলো।
১১.
ময়মনসিংহের একজন নামকরা ব্যাবসায়ী মামুনের বাবা জনাব "সিরাজ তালুকদার" রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সব সময় ওঠা বসা। সমাজের অনেক লোক তাঁকে এক নামেই চেনে।
এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যাবসা করে আজ সে কোটিপতি! একটা মাত্র ছেলে মামুন। মামুন সেরকম পড়াশুনা করেনি। একমাত্র ছেলে হলে যা হয়। এখন টুকিটাকি বাবার ব্যাবসা দেখছে।
সিরাজ সাহেবের বাসায় বিয়ের তোড়জোড় প্রস্তুতি চলছে।
ওদিকে শুভ্রর বাবা মা তাদের বাসায় এসে উপস্থিত হলো। অনেকদিন পর দুলাভাইকে দেখতে পেয়ে সিঁড়ি থেকে জোর পায়ে নেমে হাসান সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর পা ছুয়ে ছালাম করলেন মামুনের মা' "মিসেস মমতা বেগম"
দুলাভাই কেমন আছেন? অনেক দিন পর এলেন!
এইতো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? সিরাজ কোথায় ওকে দেখছিনা যে?
ভালো আছি দুলাভাই। উনি আছে, দোতালায় বসে ডেকোরেটরের লোকেদের সঙ্গে কথা বলছে। বিয়ের চিন্তা নিয়ে তো তাঁর কদিন ধরে চোখে কোন ঘুম নাই।
সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। কোথায় কি হবে, কি করে সাজাতে হবে? কোনটা করা যাবেনা, কোনটা করতে হবে এসব নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নেই।
ভাবী কেমন আছেন? আর শুভ্র কোথায়? ওকে দেখছিনা যে।
হুম, ভালো আছি তোমাদের দোয়ায়। শুভ্র তো মামুনের সাথে আসতেছে।
অনেকদিন পর আসলো তো তাই হইতো একটু ঘুরাঘুরি করছে।
হ্যাঁ তাই হবে।
কি মনভোলা আমি! আপ্নারা এতদুর থেকে কত কষ্ট করে জার্নি করে এসেছেন আর শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলে যাচ্ছি। চলুন জলদি উপরে চলুন। ফ্রেশ হয়ে নেবেন, তারপর কথা বলা যাবে।
কোই গো..মামুনের আব্বু! দেখো কারা এসেছে!!
মামুন শুভ্রক্কে নিয়ে সঞ্চিতাদের বাসার সামনে থেকে চলে এসেছে। গাড়ি নিয়ে এখন একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে। সেখানে কিছুক্ষন বসে গল্প গুজব করবে তারপর বাসার দিকে যাবে। গাড়ি চালাচ্ছে মামুন। পাশের সিটে বসে আছে শুভ্র।
একেবারে চুপচাপ মেরে বসে আছে।
পেছনে বসে হিরন, নাইম, ফিরোজ, টুটুল তাল দিয়ে গান বাজনা করছে। রেডিওতে গান বাজছে,
"তোমার ঘরে বাঁশ করে ক'জন ও মন জানোনা।
তোমার ঘরে বসত করে কইজনা?
সবাই সুরে সুরে তাল মেলালেও নাইম ফুল স্টপ মেরে বসে আছে শুভ্রর মতন। শুভ্রর মুখচাপা দেখে মামুন বলল,
কিরে এমন শব্দহীন হয়ে বসে আছিস কেন? মন খারাপ নাকি?
শুভ্র একটু মুচকি হাঁসি নিয়ে জবাব দিল, আরে নাহ! কিছু হইনি এমনি..মন খারাপ না।
চুপচাপ বসে ওদের গান শুনছিলাম। তা কোথায় যাবি এখন?
চল একটা রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষন বসে আড্ডা দিয়ে তারপর বাসায় যাবো। তা কিছুই তো জানালিনা! সঞ্চিতাকে কি তোর পছন্দ হয়েছে?
শুভ্র একটু গম্ভির হয়ে তারপর জবাব দিলো, পছন্দ হবেনা কেন? অনেক সুন্দর একটা মেয়ে। খুব সুইট চেহারা! যে কোন ছেলে দেখলেই ওকে পছন্দ হবে। তা সঞ্চিতা কি করে? স্টাডি কতদুর?
ও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে।
সব দিক ঠিক আছে, তবে পড়াশুনাটা একেবারেই ঠিক নেই। সারা দিন শুধু সিনেমা দেখা আর বান্ধবীদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা এই হলো সঞ্চিতার কাজ।
মামুনের সাথে কথা চলার মাঝে শুভ্রর মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো। শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে ম্যাসেজ চেক করছে। চৈতি ম্যাসেজ করেছে।
ম্যাসেজটা ওপেন করলো শুভ্র। লিখেছে,
"অশ্রু দিয়ে বেধেছি এ বন্ধন! হাঁসির খুশিতে করেছি আপন।
কখনো রাগিয়েছি তোমায়, কখনো বা চেয়ে দেখেছি ও দু নয়ন।
ভালোবাসার মন কুঠিরে বন্দি করেছি তোমায় জান,
ভুলোনা আমায়, যেওনা দূরে! আসলে আসুক ঝড় তুফান!
ম্যাসেজটি দেখে নির্বাক দুটি চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্র মোবাইলের স্ক্রিনের উপর। কি করবে বুঝতে পারছেনা।
মনে মনে ভাবছে আমি কি কোন ভুল পথে হাঁটছি? আমার কি চৈতির মনে দুঃখ দেওয়া ঠিক হবে? কোন জবাব খুজে পাচ্ছেনা শুভ্র।
কিরে কোথায় হারালি? কে ম্যাসেজ করেছে?
না কিছুনা, মোবাইল অপারেটর থেকে আসছে। তুই গাড়ি চালা।
শুভ্রর মা, বাবাকে সামনে দেখেই দৌড়ে এলো সিরাজ সাহেব। কেমন আছেন দুলাভাই? আপা কেমন আছিস?
এইতো আমরা ভালো আছি।
তোমার কি অবস্থা? ব্যাবসা, বাণিজ্য চলছে কেমন? আর বিয়ের কার্যক্রম কতদুর কি হলো? সিরাজ সাহেবকে বলছিল হাসান সাহেব।
এইতো দুলাভাই "আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে। বিয়ের কার্যক্রমও প্রায় সব শেষ। এখন বাকী যেটুকু যা আছে সেগুলো আপ্নারা আসছেন আপ্নারাই দেখবেন।
হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই! আমাদের ছেলে, সব কাজ তো আমাদেরই।
আচ্ছা দুলাভাই, আপা তোমরা বিশ্রাম নাও। অনেক দূর থেকে এসেছো। রাতে আলাপ আলোচনা করা যাবে। এই মামুনের মা' আপাদের খাবার রেডি করো...
একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করালো মামুন। গাড়ি থেকে নেমে ওরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসলো।
কিছু খাবারের অর্ডার করলো মামুন। সবার মনে একটু খুশি খুশি ভাব থাকলেও শুরু থেকেই মন মরা হয়ে বসে আছে নাইম।
নাইমকে খুব গম্ভীর দেখে শুভ্র মামুনের কাছে জিজ্ঞেস করলো ঘটনা কি? নাইমের চেহারায় এতো গুরু গম্ভীর ভাব কেন?
ও তোকে তো এই ঘটনা বলাই হইনি! তাহলে শোন কিসের জন্য ওর মন খারাপ,
আসলে কি বলবো দোস্ত, ওর জন্যই আমি মিতাকে পেলাম। ওর গার্ল ফ্রেন্ড এর বান্ধবী মিতা। কিন্ত দুর্ভাগ্য এখানে যে আমার সাথে মিতার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অথচ, নাইমের গার্ল ফ্রেন্ড সীমা আজকে ওর কাছে নেই।
ওদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে ৫/৬ মাস আগে।
সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝিতে ওদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে ও কেমন যেন হয়ে গেছে। সব সময় চুপচাপ থাকে। আর এখন আমার বিয়ে হচ্ছে মিতার সঙ্গে এই দেখে ইদানিং ও আরো আপসেট হয়ে পড়েছে।
১২.
মামুনের কথাগুলো শোনার পর শুভ্র নাইমকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ওর কাছে এগিয়ে গেলো। গায়ে হাত রেখে নাইমকে বলল, যে চলে গেছে তাঁর জন্য কি এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকলে হবে? যে যাওয়ার সে যাবেই। মন থেকে পুরানো স্মৃতি গুলো মুছে ফেলো। আরো অনেক মেয়েকে পাবে তুমি লাইফে। কেন ভেতরে পুড়ে পুড়ে নিজেকে শেষ করছো।
মুখে হাঁসি ফোঁটাও! বন্ধুর বিয়ে সামনে, এখন ইঞ্জয় করে মনটাকে সতেজ করো।
নাইম: শুভ্র! কি করে মুখে হাঁসি ফোটাবো বলো? তুমি কি ভেবেছো আমি সীমাকে ভোলার চেষ্টা মোটেও করিনি? আমি অনেক চেষ্টা করেছি শুভ্র। অনেক! কিন্ত কিছুতেই পারছিনা সীমাকে ভুলতে। গত প্রায় ছয় মাসে আমি সীমাকে ভোলার জন্য আরো দুইটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছি। এটাকে ঠিক প্রেম বলাও ঠিক হবেনা।
টাইম পাস বলা যেতে পারে। কারন প্রেম তো কেবল একবারই হয়! যেটা আমার সীমার সাথে হয়েছে।
ওদের সাথে আমি কথা বলতাম, সময় কাটিয়েছি কিন্ত সর্বদা ওদের চেহারার মধ্যে আমি শুধু সীমাকেই খুজে ফিরেছি। এজন্য রিলেশন দুটোর একটাও আমি ধরে রাখতে পারিনি। আর নতুন করে কোন রিলেশন করাও আমার পক্ষে সম্ভব না! আমি মন থেকে কখনোই সীমাকে ভুলতে পারবোনা।
।
নাইমের এমন উত্তর শুনে শুভ্রর মুখ একেবারেই চুপসে গেছে। নাইমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুভ্র কি জবাব দেবে খুজে পাচ্ছেনা। কারন শুভ্র কখনোই এরকম সমস্যার সম্মুখীন হইনি। শুভ্র তো জানেওনা যে প্রথম প্রেম দূরে সরে গেলে মনের মধ্যে কেমন অনুভুতি কাজ করে? হইতো নাইম ঠিকই বলছে।
জানিনা।
কিরে কোন কথা বলছিস না যে? কিছু চিন্তা করছিস নাকি?
নারে মামুন' কিছুনা। তা এখানেই বসে থাকবি নাকি? চল বাসার দিকে যাওয়া যাক। ওদিকে কি অবস্থা না গেলে তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
হ্যাঁ, অবশ্যই।
চল যাওয়া যাক।
শুভ্র, মামুনেরা বাসার দিকে রওনা দিলো। শুভ্র গাড়ির সাম্নের সিটে বসে আছে। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথার মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা চলে আসছে বারবার।
চৈতিকে নিয়ে একটু বেশী চিন্তা হচ্ছে। আবার সঞ্চিতার কথা ভাবছে, কেন যে মেয়েটা দেখা দিলো আমার জীবনে? কখনো কল্পনাও করতে পারিনি লাইফে একই মুহূর্তে দুটি নারীর দেখা মিলে যাবে। যখন ছিলোনা তখন কিছুই ছিলোনা আর এখন তো একটার মধ্যে আরেকটা!!
গাড়ি বাসার সামনে এসে উপস্থিত হলো। শুভ্র এখনো ঠিক পাইনি যে গাড়ি থেমে গেছে। একধ্যানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
মামুন গাড়ি থেকে নেমে,
এই যে মিঃ? এখন কি আপনাকে বরের মত কোলে করে নামাতে হবে নাকি? নেমে পড়েন..
কি, কি? ও চলে এসেছি!
হ্যাঁ, সেটাই তো আপনাকে অনেক্ষন ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্ত আপনি তো জনাব আমার কথা বুজছেনই না।
বুঝেছি বুঝেছি। চল ভেতরে চল।
মামুন শুভ্রকে নিয়ে দোতালায় উঠছে। নাইম,হিরনেরা নিচে বসে আছে।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেই আচমকা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো দুজনই। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সঞ্চিতা! শুভ্র সঞ্চিতাকে দেখে অনেকটা না, বেশ অবাক হলো। মামুন জিজ্ঞেস করলো,
কি ব্যাপার! কখন আসলে? একটু আগেই তো তোমাকে বাসায় দেখে আসলাম।
এইতো দুলাভাই মাত্র এসেছি। আমি আর আমার কাজিন সুইটি।
আমরা দুজন আজকে থাকবো। দুদিন পর বিয়ে এখন যদি আপনার পাশাপাশি না থাকতে পারি! তাহলে কি হয় বলেন? আপনি কখন কি করছেন, এগুলোও তো খেয়াল করা লাগবে নাকি?
মামুন হেঁসে দিয়ে জবাব দিলো, হ্যাঁ সেটা তো অবশ্যই! তুমি একদিন কেন? সারা জীবন এই বাড়িতে থাকলেও তো আমার কোন আপত্তি নেই। তুমি বললে তোমার বোনের সাথে তোমাকেও বিয়ে করে নিয়ে আসতে পারি! কি রাজি আছো তো?
কি বলেন দুলাভাই এসব?? শুধু ফাজলামো করেন। মুখ ভেংচি কেটে সামনে দিয়ে চলে গেলো সঞ্চিতা। মামুন পেছন থেকে ডেকে বলল, কোথায় যাচ্ছো? শুভ্র কে তো সাথে নিয়ে যাও? ওর সাথে একটু কথা বলো..
সঞ্চিতা জবাব দিলো, তাঁকে কি আমি বেঁধে রাখছি নাকি? তাঁর তো হাত পা' সবই আছে।
পারলে নিজেরে আসতে বলেন। হু...আবারো ভেংচি কেটে চলে গেলো সঞ্চিতা।
শুভ্র মামুন কে বলছে, বাদ দে মামুন! আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। এখন একটু রেস্ট নেওয়ার দরকার।
বিকেল বেলা...
শুভ্রর বাবা হাসান সাহেব মামা সিরাজ শুভ্রর মামী আর মা'জাহানারা বেগম সবাই উঠোনেতে চেয়ার টেবিলে বসে মিটিং করছে।
গোল টেবিল মিটিং চলছে। হাসান সাহেব তাঁর পুরনো বন্ধুর ব্যাপারে সিরাজ সাহেব ও মামুনের মা' মমতাকে জানালেন। তাঁরা এ ঘটনা শুনে তো বেশ অবাক এবং বিস্মিত হলো।
সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এতদিনের পুরানো বন্ধুকে হঠাৎ করে এভাবে কাছে পাওয়া আসলেই একটা মিরাক্কেল ব্যাপার! তাদের দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
জানালেন মামুনের বাবা সিরাজ সাহেব।
ও আচ্ছা, সিরাজ! জানায় তো হলোনা? বিয়াই কি করে? তাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউণ্ড, বিয়েটা কি করে ঠিক হলো? এসব কিছুই তো জানলাম না?
হুম বলছি দুলাভাই। বিয়েটা আসলে মামুনের মর্জিতেই হচ্ছে। বোঝেন তো ডিজিটাল জুগ! আজকাল ছেলেপেলেরা নিজেরাই সব কিছু গুছিয়ে নেই আগে, আর বাপ-মা কে জানায় সব ঠিক ঠাক হবার পর!
হা হা হা... বুঝেছি বুঝেছি। তারপর?
তারপর, মেয়ের ব্যাকগ্রাউণ্ড খারাপ না! ভালোই।
মেয়ে শিক্ষিত। ইংলিশে অনার্স করছে। প্রায় শেষ দিকে। বিয়াইয়ের টাকা, কড়িও বেশ ভালোই আছে। কন্সট্র্যাকশনের বিজনেস।
মোটামুটি খারাপ না!
শুভ্র ওর রুমে বসে আছে। বাইরে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই মুহূর্তে "সঞ্ছিতা" আর ওর কাজিন সুইটি এসে শুভ্রর রুমের বাইরে থেকে উকি মেরে শুভ্রকে দেখার চেষ্টা করছে। খিলখিল হাঁসির শব্দ শুভ্র শুনতে পেয়েছে। শুভ্র বুঝতে পেরেছে সঞ্চিতা বাইরে থেকে উকি মারার চেষ্টা করছে।
এক পর্যায় সঞ্চিতা কিছু না বলেই সুইটিকে নিয়ে শুভ্রর রুমে ঢুকে গেলো। ভেতরে ঢুকে একটু গলা খাকিয়ে শব্দ করে বলছে,
আসতে পারি আমরা?
শুভ্র: এসেই তো পড়েছেন। বাহিরে থাকলে না হয় বলতাম আসুন না হয় বলতাম ব্যাস্ত আছি। কিন্ত এখন কি বলবো? যাই হোক এসেই যখন পড়েছেন, বসুন। আপনাদের সঙ্গে একটু পরিচিত হওয়া যাক।
শুভ্র খাট ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলো। সঞ্চিতা আর সুইটি খাটে বসে আছে।
হ্যাঁ তো.. তোমার তো জানি। তোমার নাম কি?
আমি সুইটি।
ও আচ্ছা।
তুমি কি সঞ্চিতার সাথেই পড়ো?
হ্যাঁ, আপনি কি করে বুঝলেন?
আমি একটু বেশীই বুঝি। সব কিছু বুঝিয়ে দিতে হইনা। কিছু কিছু জিনিস দেখলেই বোঝা যায়।
সঞ্চিতা অবাক হয়ে শুভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর কথা গুলো শুনছে। শুভ্রর কথা বলার মাঝে প্রশ্ন করলো সঞ্চিতা,
আপনি তো দেখছি সব কিছুই জানেন!
আমার সম্পর্কেও জানেন?
হুম জানি..
কি কি জানেন আমার সম্পর্কে?
শুভ্র সঞ্চিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
হুম, কি জানতে চাও তুমি? তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমার সম্পূর্ণ বায়োডাটা বলে দিতে পারবো। নতুন করে বলে আর কি লাভ বলো? কি? এখনো শুনতে চাও?
সঞ্চিতা হেঁসে দিয়ে জবাব দিলো, না থাক বুঝতে পেরেছি। আর বলা লাগবেনা। এখানে আসার আগে তো দেখছি আপনি আমার সম্পর্কে বেশ ধারনা নিয়েই এসেছেন। আপনার সম্মন্ধেও কিন্ত আমি মোটামুটি অনেক কিছুই জানি।
হা হা... যাক আমাদের ক্যামেষ্ট্রি টা ভালোই জমবে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।