লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে সব সময় ভালো লাগে। নতুন নতুন "গল্প" লিখতে বেশী ভালো লাগে। ।
পার্ট ৪ থেকে ৬...
৪.
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন ময়মনসিংহে পৌঁছে যাবে। শুভ্র আর চৈতি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আবার একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
বাহিরের মাতাল বাতাস এসে চৈতির চুল গুলো উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
এই দৃশ্যটা দেখতেও শুভ্রর খুব ভালো লাগছে।
চৈতি বাইরের মনোরম পরিবেশ
দেখায় ব্যাস্ত।
এদিকে শুভ্রর অন্য কোন দিকে খেয়াল নেই,
চৈতিকে দেখায় ব্যাস্ত সে।
আর একটু পরেই আমরা পৌঁছে যাবো, তাইনা?
কি মিঃ? কোন খেয়ালে আছেন?
হুম? কিছু বলেছো?
বলছি একটু পরই তো পৌঁছে যাবো তাইনা?
হ্যাঁ, আর বেশিক্ষন নেই। দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
হুম, এটাই তো শুনতে চাচ্ছিলাম!
কিন্ত আপনি তো অন্য খেয়ালে ছিলেন বোধহয়।
না, না এমনিই অন্য একটা চিন্তা করছিলাম।
কি চিন্তা করছিলেন, একটু কি জানতে পারি?
না, মানে এখান থেকে যেয়ে কি কি করবো? তাছাড়া মামুনের বিয়ে হচ্ছে!
সেটা নিয়েও একটু ভাবছিলাম।
মামুন কে?
ওহ হো..তোমাকে তো বলাই হয়নি! মামুন হচ্ছে আমার মামাতো ভাই।
আমরা তো সবাই ওর বিয়েতেই যাচ্ছি!
ও আচ্ছা, তাই নাকি? তাহলে তো আপনি অনেক মজা করবেন।
আপনার ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা!
হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই! তবে কি কি করবো বুঝতে পারছিনা।
অনেক দিন পর মামা বাড়ি যাচ্ছি।
মামুনকেও অনেকদিন দেখিনা।
সেই পাঁচ বছর আগে লাস্ট এসেছিলাম। আর এই যাচ্ছি।
তবে মামুন এর ভেতর অবশ্য একবার এসেছিলো যশোরে।
আপ্নারা যশোরে থাকেন?
হ্যাঁ, যশোরেই আমরা স্থানীয়।
তবে দেশের বাড়ি বরিশাল।
অউ! আমার দাদা বাড়িও কিন্ত বরিশালে!
তাই নাকি?
হ্যাঁ, তবে আমি কখনোই যায়নি!
কি বলো? আশ্চর্য! কখনোই যাওনি?
না! আমার জন্মই ময়মনসিংহে।
বাবার মুখে শুনেছিলাম,
যুদ্ধের পর নাকি তারা সেখান থেকে চলে আসে।
আমার দাদা অনেক আগেই মারা গেছিলেন। দাদী বেঁচে ছিলো।
দাদীকে নিয়েই বাবা গ্রাম ছেড়ে চলে আসে।
ওও..তা তোমার দাদা বাড়ি বরিশালের কোথায় ছিলো?
পিরোজপুরে।
অউ! আমাদের গ্রাম ও তো পিরোজপুরে!
কি বলেন? সত্যিই?
হুম, সত্যিই! তবে এখন আর সেখানে যাওয়া হয়না।
ছোট বেলা তে কয়েকবার গিয়েছিলাম। আমাদের কোন আত্মীয় স্বজন
সেখানে না থাকায় পরবর্তীতে গ্রামের জায়গা বেঁচে ফেলা হয়।
আমার বাবা ছিলো, আমার দাদার একমাত্র সন্তান!
দাদা মারা যাওয়ার পর, বাবা গ্রামের জমি বিক্রি করে শহরের দিকে চলে আসে।
তারপর ব্যাবসা, তারপর আস্তে আস্তে জায়গা-জমি
কিনে যশোরেই বাড়ি করে ফেলে!
আর তোমরা? তোমরা ময়মনসিংহ এলে কিভাবে?
হুম...
আমার বাবা একজন সরকারী স্কুল টিচার ছিলো।
বিভিন্ন জেলায় ট্রান্সফার হতে হতে শেষমেশ ময়মনসিংহেই স্থায়ী হয়ে গেলেন।
সেই থেকে সব কিছু এখানেই!
শুভ্র আর চৈতির কথা চলছে ঠিক এমন সময় শুভ্রর বাবা এসে উপস্থিত ওদের সামনে।
শুভ্র ওর বাবাকে দেখে চৈতির দিক থেকে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এমন ভাব করলো যে মেয়েটিকে শুভ্র চেনেই না।
শুভ্রকে অন্য দিকে ফিরতে দেখে চৈতি জিজ্ঞেস করলো,
এই যে, মিঃ?
হঠাৎ ওই দিকে ফিরলেন কেন?
লজ্জা লাগছে নাকি আমার মুখের দিকে তাকাতে?
চৈতির এমন সব কথা শুনে শুভ্রর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
পাশে শুভ্রর বাবা "জনাব হাসান সাহেব দাড়িয়ে আছে।
টয়লেটে যাবে বলে ওয়েট করছে।
চৈতির, শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলা কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো
"হাসান সাহেব।
তবুও না শোনার ভান করে অন্য দিকে ফিরে দাড়িয়ে আছে।
চৈতি বুঝতেই পারেনি এই লোকটা শুভ্রর বাবা!
ওদিকে শুভ্র এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে যে কিছু বলতেও পারছেনা,
আবার সরেও যেতে পারছেনা।
শুভ্র মনে মনে চিন্তা করলো, এখন যদি আমি কিছু একটা না করি?
তবে চৈতির মুখ বন্ধ করে রাখা যাবেনা!
শুভ্রর জানা ছিলোনা মেয়েরা একটু বেশী কথা বলে।
আর এই মেয়ে তো আরও বেশী কথা বলে!
চৈতি মুখ দিয়ে আর কিছু উচ্চারন করার আগেই শুভ্র বলে উঠলো,
আব্বু, তুমি কি টয়লেটে যাবে?
না ফুটবল খেলতে যাবো!
দেখতেছিসই তো বাথরুমে যাবো বলেই দাড়িয়ে আছি।
আর তোর এইসব দেখারই বা সময় কোই?
তুই তো আছিস অন্য কিছু নিয়ে।
এতক্ষনে চৈতি বুঝতে সক্ষম হলো যে,
এই মুরব্বি লোকটি আর কেউ নন, ইনি শুভ্রর বাবা।
চৈতি সালাম দিয়ে কথা বলবে? না হেঁটে চলে যাবে এইটা বুঝে উঠতে পারছেনা।
যদি সালাম দেই তাহলে শুভ্রর বাবা নিশ্চয়ই অন্য কোন কিছু বুঝে নেবে,
এদের মধ্যে কোন একটা সম্পর্ক আছে? এমন কিছু!
এটা করা যাবেনা। আর যদি হেঁটে চলে যাই, তবে উনি ভাবতে পারেন
মেয়েটি এতক্ষন শুভ্রর সাথে কথা বলছিল,
আর আমাকে দেখে লজ্জায় চলে গেলো!
নাহ , কিছুই কড়া যাবেনা! যেখানে আছি সেখানেই দাড়িয়ে থাকি।
তবে আমি শুভ্রকে একটু আগে যা বললাম,
এসব কথা তো আঙ্কেল শুনেছেই।
উনি কি মনে করেছে কে জানে?
এসব চিন্তা মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে কেন?
ওদিকে শুভ্র চিন্তা করছে বাবা কি মনে করলো কে জানে।
মেয়েটার মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই?
একজন মুরব্বি মানুষ আসলো আর তার মাঝে
এমন কথা বলার কি দরকার ছিলো?
যা হবার হয়ে গেছে। এসব নিয়ে ফালতু চিন্তা করার কোন মানে হয়না।
বাবা! আম্মু কি ঘুমাচ্ছে? নাকি জেগে আছে?
এসব দেখার কি আপনার সময় আছে নাকি?
একটু মাঝে মাঝে তো যেয়ে দেখা যায়। দুজন বুড়ো-বুড়ি যে সেখানে আছে,
এরকম চিন্তা তো আপনার মাথায় ছিলই না।
ভুলেই গেছিলেন। যাই হোক, আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে যাওয়ার কোন দরকার নেই। আপনি এখানেই থাকেন।
না, আব্বু আমি যাচ্ছি।
নাহ, এখন আর গিয়ে লাভ নেই।
একটু আগে তোর আম্মু তোকে খুজতেছিল।
এখন ঘুমাচ্ছে।
এখন তুই যে কাজটায় বিজি ছিলি আগে সেটা শেষ কর।
মেয়েটা তোকে এতো বার ডাকলো আর তোর কোন উত্তর নেই?
আমাকে দেখে লজ্জায় উত্তর দিতে পারছিলিনা।
আমি সামনের টয়লেটে যাচ্ছি।
এখন ইচ্ছা মত কথা বল!
শুভ্রর বাবার মুখে এমন কথা শুনে চৈতি তো লজ্জায় লাল।
ট্রেনের দরজার আংটা ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়েই আছে।
ভাব দেখাচ্ছে এমন, যে আমি কিছু জানিই না । ।
শুভ্র বাবারকথা গুলো শুনে বলছে,
যাও, কি যে বলো তোমার এই বয়সে এসেও রসিকতা করা এখনো ছাড়ালোনা।
আমিতো মেয়েটার সাথে এমনি কথা বলছিলাম।
মেয়েটা কিসে পড়ে, কোথায় বাড়ি এই সব।
আর তুমি কত কি মনে করতেছো...
শুভ্রর বাবা চৈতিকে উদ্দেশ্যে করে,
এদিকে তাকান? লজ্জা পাচ্ছেন নাকি?
এসব কথা কে কখন বলে আমরা বুঝি।
এই কথা বলে এক গাল হাঁসি দিয়ে শুভ্রর বাবা শুভ্রর সামনে দিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো। শুভ্রর বাবা চলে যাওয়ার পর
চৈতি শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি তখন বুঝতেই পারিনি যে ইনি আপনার বাবা।
আর আপনার বাবা এরকম করে কথা বললেন কেন?
আরে আমার বাবা আমার সাথে একেবারে ফ্রি।
সব সময় বন্ধু সুলভ আচরন করে।
উনি এরকমই।
কিছু মনে করেননি তো আবার?
না না কিছু মনে করেনি।
আমার বাবাকে তুমি চিনোনা উনি একটু রসিক প্রিয়।
তবে এখানে আর দাঁড়ানো ঠিক হবেনা।
চলো পেছনের দিকটাতে একটু হেঁটে আসি।
যাবো কিনা বুঝতেছিনা?
ওদিকে আম্মু-আব্বু কি করছে কে জানে?
তবুও পরে দেখা যাবে...
চলেন আগে হেঁটে আসি...
৫.
শুভ্রর বাবা বাথরুমে যাওয়ার জন্য দাড়িয়ে আছে পাশের একটা বগির টয়লেটের সামনে।
ওদিকে চৈতির বাবা ঘুম থেকে উঠে চৈতিকে না পেয়ে খুজতে বের হয়েছে।
"জনাব সাদিক সাহেব" তার মেয়েকে খুজছেন ট্রেনের বিভিন্ন বগিতে।
খুজতে খুজতে এক পর্যায়ে শুভ্রর বাবা "হাসান সাহেব "
যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন সেখানে এসে উপস্থিত হলেন।
মেয়েটা কোথায় চলে গেলো, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না!
জনাব সাদিক সাহেব। শুভ্রর বাবা' বেশ কিছুক্ষণ ধরে টয়লেটের সামনে দাড়িয়ে আছে,
কিন্তু যে লোক ভেতরে ঢুকেছে সে এখনো বের হচ্ছে না!
এমতাবস্থায় "হাসান সাহেব " সময় পার করার জন্যে পকেটে হাত ঢুকিয়ে
সিগারেটের প্যাকেট টা বের করলেন।
ম্যাচ খোজার জন্য তিনি আরেকটা পকেটে হাত ঢোকালেন,
কিন্তু সেখানে কোন ম্যাচ পেলেন না।
দুই পকেটেই অনেক খোজাখুজি করেও তিনি কোন ম্যাচ খুজে পেলেন না।
এরপর পাশের ভদ্রলোক' যিনি সম্পর্কে চৈতির বাবা হন' তাকে লক্ষ্যে করে হাসান সাহেব বললেন,
ম্যাচ হবে নাকি ভাই আপনার কাছে?
চৈতির বাবা : না ভাই, নাই! আমি ধুমপান করিনা!
অন্য কোথাও দেখতে পারেন।
শুভ্রর বাবা : ঠিক আছে ভাই, ধন্যবাদ।
আমি অন্য কোথাও দেখছি।
পাশেই রেস্টুরেন্ট ছিলো, সেখান থেকেই হাসান সাহেব সিগারেট টি জ্বালিয়ে নিয়ে আসলো।
টয়লেটের সামনে দাড়িয়ে তিনি সিগারেট টানছেন
আর পাশে ট্রেনের দরজায় ভর করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকা ভদ্রলোকের দিকে তাকাচ্ছেন।
হাসান সাহেব বার বার লোকটিকে দেখছেন,
লোকটিও একটু পর পর হাসান সাহেবের দিকে তাকাচ্ছেন।
এভাবেই শুভ্র এবং চৈতির বাবার বেশ কিছুক্ষণ ধরে একে অপরের দিকে তাকাতাকি চলতে লাগলো।
তাকাতাকির এক পর্যায় শুভ্রর বাবা লোকটির কাছাকাছি এগিয়ে গেলেন।
হাসান সাহেব চৈতির বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।
"হাসান সাহেব" লোকটির মুখের দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।
তারপর বললেন,
সাদিক?
হ্যাঁ, কে? হাসান!!
চিনতে পেরেছিস?
হ্যাঁ, পেরেছি।
তুই!
আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা।
কি করে সম্ভব!
আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
সাদিক সাহেব তার হাতে একটু চিমটি কেটে দেখলেন, না...
এতো সত্যিই!!
অবিশ্বাস্য! সত্যিই এটা একটা বড় সারপ্রাইজ! কখনো কল্পনাও করতে পারিনি এভাবে আমাদের দেখা হবে!
আমিও! বিশ্বাস করতে পারছিনা, সাদিক! তোকে এভাবে পাবো? কখনো চিন্তাও করিনি! প্রায় ২৪/২৫ বৎসর পর দেখা! কি করে পারলি এভাবে হারিয়ে যেতে?? একবারও কি আমার কথা তোর মনে পড়েনি? অনেক খুজেছিলাম তোকে!! কোথাও পাইনি।
কেমন আছিস তুই?
আর কোথায় আছিস এখন?
চুল গুলো তো প্রায় সব পেকে গেছে?
কলব করিস না কেন?
ভাবি কোই?
আরো অনেক কথা আছে! পাঁচ মিনিট দাড়া টয়লেট সেরে আসি। তারপর সব কথা হবে।
শুভ্র আর চৈতি ট্রেনের একেবারে শেষের বগির দিকে,
একটা জনশূন্য কামরায় বসে আছে।
শুভ্রকে নিয়ে চৈতির মাথায় এখনো পর্যন্ত কোন খারাপ ধারনা জন্ম নেইনি।
শুভ্রর আচার, ব্যাবহারেও কোন ত্রুটি বা খারাপ মতলব চৈতির চোখে ধরা পড়েনি।
বরং যতই সে শুভ্রর সাথে ঘুরছে আর ওর মুখের কথা শুনছে,
ততই চৈতি মুগ্ধ হচ্ছে।
তাই শুভ্রর সাথে চৈতির যেকোনো পরিবেশে বসতে কোন আপত্তি নেই!
ওদিকে চৈতির বাবা-মা যে চৈতিকে খোঁজাখুঁজি করতে পারে,
সে খেয়ালও এই মুহূর্তে চৈতির মাথায় নেই!
মুখোমুখি সিটে বসে আছে দুজন।
চৈতি খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
সকালের আলো হালকা হালকা ফুটতে শুরু করেছে।
বাহিরের উতল হাওয়ায় চৈতির চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে।
শুভ্র তাকিয়ে আছে চৈতির দিকে।
ভোরের অল্প মিষ্টি আলোতে আরো সুন্দর লাগছে চৈতিকে।
এলোমেলো বাতাসে খোলা চুলের একটা সুঘ্রাণ যেনো শুভ্রকে পাগল করে তুলছে।
৬.
এই যে মিঃ! ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? অমন করে তাকিয়ে কি দেখছেন?
না, মানে..কোই কিছুইনা। এমনি তাকিয়ে ছিলাম। তোমার চুল গুলো অনেক সুন্দর!
আসলে তেমন সুন্দরও কিন্ত না। আগে অনেক চুল ছিলো, এখন তো আরো কমে গেছে।
তারপরও প্রসংশা করার জন্য ধন্যবাদ।
হুম, তা এখান থেকে যাওয়ার পর প্ল্যান কি তোমার?
প্ল্যান বলতে, সামনে পরিক্ষা! বাসায় যেয়ে তো শুধুই পড়াশুনা করা ছাড়া তেমন আর কোন প্ল্যানই দেখছিনা।
ও আচ্ছা, তা ভালো করে পড়াশুনা করো কিন্ত। ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
সেটা আপনার না বললেও চলবে, আমি কিন্ত স্টুডেন্ট খারাপ না।
রেজাল্ট ভালো আসে সবসময়।
তাহলে তো ভালোই। তারপরও সামনে এস, এস, সি এজন্য #পড়াশুনাটাও একটু বেশী বেশী করতে হবে।
হুম, সেটা ঠিক!
পুরনো দিনের বন্ধুকে কাছে পেয়ে চৈতির বাবার চৈতিকে খোঁজার কথা একেবারে ভুলেই গেছে। দুজনেই গল্পে মোজেছে সেরকম ভাবে।
রেস্টুরেন্টে বসে চা খাচ্ছে আর আড্ডা চলছে।
তারপর তুই কোথায় যাচ্ছিস? বাড়ি করেছিস কোথায়?
আমি তো ময়মন্সিংহে যাচ্ছি, সেখানেই সবকিছু। বাড়িও ওইখানে করেছিলাম আরো ১২ বৎসর আগে। তোর কোথায়?
আমি সেই ২০ বৎসর আগে থেকেই যশোরে আছি। শহরের পরে কিছু দোকান পাট আছে ভাড়া দেওয়া আর শেয়ারের ব্যাবসা নিয়ে পড়ে আছি।
ও আমার একটা ছেলেও আছে। তোর ভাবি আর ছেলে শুভ্রকে নিয়েই শুভ্রর মামা বাড়িতে যাচ্ছি। সম্বন্ধীর ছোট ছেলের আবার বিয়ে তিন দিন পর।
ও তাই নাকি? তা তোর সম্বন্ধীর বাড়ি কোথায়?
মুক্তাগাছা!
ও আচ্ছা, আমার বাসা তো ফুলপুরে।
তা তুই আর কি করছিস? আর ভাবী কোই? ছেলেমেয়ে কয়জন? কিছুই তো বল্লিনা।
আরে বলবতো অবশ্যই, সময় তো দিবি। আমি আপাততো কিছুই করছিনা। রিটায়ার্ড নিয়ে নিয়েছি। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়তে অনেক দিন শিক্ষাকতা করেছিলাম। ছেলে মেয়ে দুইটা।
ছেলেটা দুই বছর আগে বাইরে চলে গেছে কাজের ভিসায়। আর একটা মেয়ে, চৈতি। তোর ভাবী আর মেয়েকে নিয়ে আমার এক পুরনো কলিগের বাসায় গিয়েছিলাম চুয়াডাঙ্গা। সেখান থেকেই ফিরছি।
বাবা খোঁজ করতে পারে চলুন ওঠা যাক।
আবার পরে কথা বলা যাবে।
হ্যাঁ, চলো।
শুভ্র আর চৈতি দুজনে হাঁটছে।
কয়েকটি বগি পার হয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে চলে এলো।
ওরা বুঝতেই পারিনি সেখানে চৈতি এবং শুভ্রর বাবা
দুজনই একসাথে আগে থেকেই বসা ছিলো।
তাদের কাছাকাছি আসলেই শুভ্রর বাবার চোখ পড়ে চৈতি এবং শুভ্রর ওপর। চৈতি ওর বাবাকে দেখতে পেয়েই ঘুরে অন্য দিকে চলে যাচ্ছিলো। এর মধ্যেই শুভ্রর বাবা শুভ্রকে উদ্দেশ্যে করে,
এই ছেলে এদিকে আসো!
চৈতির বাবাও চৈতিকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো।
এই, কোনদিকে যাও এদিকে আসো।
জি, বাবা! আমি?
হ্যাঁ তোমাকেই তো বলছি।
তোমাকে সারা ট্রেনে খুজে বেড়াচ্ছি কোথায় হারিয়ে গেছিলে?
চৈতির বাবার কথা শুনে হাসান সাহেব,
এটা তোর মেয়ে!?
হ্যাঁ, এটাই তো আমার মেয়ে! কেনো? তুই আগে দেখেছিস নাকি?
শুভ্রর বাবা মুচকি হেঁসে জবাবা দিলো,
না না, আগে দেখিনি এমনিই বললাম। এই তোমরা এখানেই বসো দুজনই।
এটা কে? তোর ছেলে?
হ্যাঁ, এটাই তো আমার একমাত্র পিচ! পরিরচিত হও, এটা তোমার আঙ্কেল।
শুভ্র: আঙ্কেল, "আচ্ছালামু আলাইকুম" ভালো আছেন?
হ্যাঁ, ভালো আছি বাবা।
বসো, আমার পাশে বসো।
শুভ্র সিদ্দিক সাহেবের পাশে গিয়ে বসলেন।
তোমার আঙ্কেল কে কি ছালাম দিয়েছো? কি মেয়ে, চুপচাপ দাড়িয়ে আছো কেনো?
"আচ্ছালামু আলাইকুম"
ওয়াআলাইকুম আচ্ছালাম" আম্মু, তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? এখানে বসো। আমার পাশে বসতে কি লজ্জা লাগছে নাকি?
একথা বলছেন আর হাসান সাহেব মিচকি মিচকি হাসছেন।
না না, আঙ্কেল লজ্জা লাগবে কেনো? এমনিই দাড়িয়ে ছিলাম। বসছি।
শুভ্র আর চৈতি দুজন দুজনের দিকে কৌতূহল নজর নিয়ে তাকাচ্ছে। কি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? দুজনেরই একেবারেই অজানা।
চৈতিকে দেখে আগে এক একটু পছন্দ হলেও হাসান সাহেব এবার সত্যি সত্যিই মনের মধ্যে নিজের পুত্রবধু হিসেবে ফাইনাল করে নিলো চৈতিকে।
এবার হাসান সাহেব তাদের বন্ধুত্বের পুরনো হিস্টোরি বর্ণনা করা শুরু করলেন।
শোনো শুভ্র, তোমাকে আগেও হয়তো বলেছিলাম আমার একটা পুরনো বন্ধু ছিলো।
যাকে হঠাৎ করে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই হলো আমার সেই পুরনো ছোট বেলার বন্ধু "সিদ্দিক" আমরা একসাথে বড় হয়েছি।
ছোট বেলায় একসাথে পড়াশুনা করেছি।
এমনকি আমরা ৭১' এ মুক্তিযুদ্ধাও ছিলাম। যুদ্ধের পর চারিদিকে আনন্দের জোয়ার!
তার ঠিক কিছুদিন পর পাশাপাশি দুই গ্রামের মধ্যে একটা তুমুল গ্যাঞ্জামের
সুত্রপাত ঘটে।
পাশের গ্রামের মোড়লের ছেলেকে নিয়ে। যার জন্য সিদ্দিকের ফুফাতো বোনের ফুলের মত জীবনটা একেবারেই শেষ হয়ে যায়! কেউ এগিয়ে না আসলেও
সিদ্দিক এর তুমুল প্রতিবাদ জানায়। পরবর্তীতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে,
সিদ্দিকের জীবনটা ঝুকির মধ্যে চলে যায়। আমিই ওকে পরামর্শ দিয়েছিলাম গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। কোথায় যাবে, তার ঠিকানাও দিয়েছিলাম।
কিন্ত পরবর্তীতে আমি সেখানে যেয়ে ওকে খুজেই পেলাম না। পরে বুঝতে পারি ও এখানে আসেইনি!
কোথায় চলে গেছিলো আমি খুঁজেও পেলাম না। গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পর আমি কম খুজিনি তোকে।
হাসান সাহেবের কথা গুলো চৈতি এবং শুভ্র খুব আগ্রহর সাথে শুনে যাচ্ছে।
ওদের এই মুহূর্তে বুঝতে বাকী নেই যে, ওদের দুজনেরই বাবা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো।
শুভ্র এর আগেও ওর বাবার মুখে সিদ্দিক সাহেবের কথা শুনেছে, তবে এই সিদ্দিক সাহেবই যে চৈতির বাব হবে! এটা শুভ্রর কল্পনাতেও আসেনি!!
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।