কারাগার একটি বিশেষ আবাসস্থল, যেখানে আসামীরা অবস্থান করেন। এখানে অপরাধী ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বাঁধাগ্রস্ত হন ও মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। কারাগার সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। কারাগারের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে প্রিজন যা প্রাচীন ফরাসী শব্দ প্রিসাউন থেকে উৎপত্তি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশ কর্তৃক অপরাধজনিত কারণে আটক বা গ্রেফতারের ফলে ব্যক্তিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
ব্যক্তিকে যদি কারাগারে রাখা হয় তাহলে তিনি প্রিজনার নামে আখ্যায়িত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত আসামীদের ক্ষেত্রেও প্রিজনার শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যদি তিনি অপরাধের জন্য অপরাধীরূপে ঘোষিত হন। এছাড়াও, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিকেও ফাঁসিতে ঝুলানোর পূর্ব পর্যন্ত কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভক্ত। অপ্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ ও মহিলাদের পৃথক রাখা হয়।
বিদেশী নাগরিকদের জন্যও রয়েছে পৃথক স্থান।
সাধারণতঃ পুরুষ এবং নারী অপরাধীকে পৃথক স্থানে অথবা পৃথক কারাগারে আটক রাখা হয়। কারাগারের দেয়াল ও মূল ফটক বেশ মজবুতসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিঃশ্ছিদ্র থাকে। সেল নামে পরিচিত ছোট্ট, ক্ষুদ্র তালাবদ্ধ কক্ষে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিনই আটককৃত ব্যক্তিদের ব্যায়ামের জন্য কক্ষ ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়।
কিছু ব্যক্তি কারাগারে অবস্থানকালীন সময়ে দিবাভাগে কারখানায় কাজ করেন অথবা রান্নাবান্না কিংবা কাপড় ধৌতকরণে নিযুক্ত থাকেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাগণ কারারক্ষী নামে পরিচিত ও তাদের দেখাশোনার ভার গ্রহণ করেন। কারাগার পরিচালক ওয়ার্ডেন বা জেলার নামে পরিচিত। কারাগারে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার, ছোট্ট পরিসরে হাসপাতাল, ভিজিটিং রুম, রান্নাঘর রয়েছে। ভিজিটিং রুমে আটককৃতের পরিবার এবং আইনজীবিদের পরিদর্শনের জন্য বরাদ্দ থাকে।
১৯৫৫ সালে মানবিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ আদর্শ ক্ষুদ্রতম আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করেছে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের কারাভোগের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদবী দেয়া হয়। পদবী অনুযায়ী পোষাক ও কাজের ধরনের পরিবর্তন ঘটে। মাঝে মাঝে পুরাতন ওভারসীয়ার কয়েদীদের মধ্যে কেহ শিক্ষিত হলে, তাকে কারাফটকে অবস্থিত অফিসে দাপ্তরিক কাজও করতে দেয়া হয়।
সামরিক বাহিনীতে বিশেষ কারাগার রয়েছে যা সামরিক কারাগার নামে পরিচিত।
সাধারণতঃ যুদ্ধ অপরাধী, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাজনিত কারণে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকি সৃষ্টিকারী সেনা সদস্য(দেরকে) সামরিক আদালতে যথোচিত বিচার করা হয়। গুরুতর অপরাধে সেনা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশী লোক আটক আছে। ২ মিলিয়নেরও অধিক লোক আমেরিকার জেলগুলোতে রয়েছে। ১৯৮৫ সালে সেখানে ৭৪৪,০০০ জন আটক ছিল।
২০১০ সালের তথ্য মোতাবেক বৈশ্বিকভাবে কমপক্ষে ৯.৯৫ মিলিয়ন লোক কারাগারে আটক রয়েছেন। গুয়ানতানামো কারাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা। এই কারাগারটি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে এর অবস্থান।
এ কারাগারে যাদের বন্দী রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশের বিরূদ্ধে অভিযোগ আনা হয় নি বা আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয় নি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকা শহরের প্রধান কারাগার। এটি পুরনো ঢাকার চানখাঁরপুলে অবস্থিত। ঢাকা বিভাগের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের এখানে দন্ডপ্রদানের জন্য আটক রাখা হয়। এছাড়াও ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানার মামলায় বিচারাধীন লোকদিগকে, বিচারকালীন সময়ে আটক রাখার স্থান হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
বিচারাধীন আটক ব্যক্তিকে বলা হয় হাজতী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বার এই কারাগারে আটক জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। গাজীপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক কারাগার হিসেবে বিবেচিত “কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার” ১০০০ হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির এই কারাগারে ডবল ইউনিটের প্রতিটি ভবনের একটি রুমে ৩ জন করে বন্দি থাকবেন। প্রতিটি কক্ষে একটি করে ফ্যান, লাইট ও অ্যাটাচ্ড বাথরুম রয়েছে। প্রতিটি ভবনে দাবা, লুডু ও কেরাম খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে।
বন্দিরা সময় কাটাতে ওই সব খেলাধূলার পাশাপাশি বিনোদন হিসেবে টেলিভিশন দেখতে পারবেন।
শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকা লায়ালপুরের কারাগারে বন্দি করে রাখে। তাঁর নির্জন সেলের সামনে কবর খুঁড়ে শেখ মুজিবকে ভয় পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অসম সাহসী বাঙালী নেতা শেখ মুজিব ভয় পাননি, বরং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে বলেছে, "আমি বাঙালী, আমি মুসলমান, আমি মানুষ। মানুষ একবারই মরে বারবার মরে না।
আমি কখনই আত্মসমর্পণ করবো না। একমাত্র বাঙালী যিনি তাঁর যৌবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানী শাসকদের সীমাহীন শোষণের বিরম্নদ্ধে লড়াই করে পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে কাটিয়েছেন। এমনকি তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনার যখন বিয়ে হয় তখনও তিনি কারাগারে। সদ্য বিবাহিত শেখ হাসিনা এবং জামাতা পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ কারাগারে গিয়ে শেখ মুজিবের আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিলেন।
জল্লাদ শাহজাহান বাংলাদেশের সকল কারাগারের প্রধান জল্লাদ।
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ ঘাতককে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামী খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামী হাসানসহ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি কমাত্র জল্লাদ যিনি একরাতে দুই কারাগারে চারজন আসামীকে ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় জগতে জল্লাদদের আইডল। যুদ্ধাপরাধীদের যদি ফাঁসি হয় তাহলে হয়তো তিনিই তাদেরকে ফাঁসি দিবেন।
তার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার হচ্ছে- ২৬৯১৬৪৯১০৬১২৯ । ১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬ টি মামলা হয। সারা পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে দীর্ঘসময় (৩৩ বছর) ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করার জন্য জেল সুপারের কাছে জল্লাদের খাতায় নাম লেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথম ১৯৮৯ সালে তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাসি দিয়ে তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন।
তিনি জানান একটি ফাসি দিতে প্রধান জল্লাদের সাথে ৬ জন সহযোগী লাগে এবং ফাসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের ২ মাস ৪ দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ করা হয। জেলখানায় তিনি জল্লাদ শাহজাহান নামেই খ্যাত। এমনকি তার জগ-বালতি-প্লেটের ওপরেও লেখা জল্লাদ। অভিযুক্ত কয়েদীদের মৃত্যুদণ্ড ফাঁসিতে যেসব দেশে কার্যকর করা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এ দেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
তারপর থেকে ৪ শতাধিক মানুষকে এদেশে ফাঁসি দেয়া হয়েছে ।
সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে এখনও ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আটক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি, সংঘাত-সংঘর্ষ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে এবং এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের এ ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা এবং সাজাপ্রাপ্ত হওয়া পুরো জাতিকে একাধারে মর্মাহত, ব্যথিত এবং স্তম্ভিত করেছে।
( ইন্টারনেট থেকে ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।