সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাকেরই প্রাপ্য,যার হিসাব অত্যান্ত সুক্ষ্য এবং সম্পূর্ন নির্ভুল। হুমায়ূন আমহেদ নিয়ে পোষ্টটা দিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে এই জাতি অধম এবং নির্বোধ হলেও, মহান ও উদার মনের অধিকারী..... সমরেশ মজুমদার লেখাটি পড়ে মনে হল। এতদিন পরে হলেও তারা যেন বুঝতে পেরেছে তাদের চেয়ে আমরা জাতী হিসাবে অনেক উদার মনের অধিকারী।
যে রাতে হুমায়ূনের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম সেই রাত ছিল ঘনবর্ষার। হায়দ্রাবাদ শহর ভেসে যাচ্ছিল বৃষ্টির জলে।
নিউইয়র্কে, যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছে হুমায়ূন সেখানেও চাঁদ ওঠার কথা নয়। চাঁদ দেখা গেছে তার পরের দিন। হুমায়ূনের ইচ্ছে ছিল চাঁদনী রাতে রুপোলি শাম্পানে ভেসে যাওয়ার। ইচ্ছেগুলো কেন যে পূর্ণতা পায় না!
পঁচিশ বছর ওর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। দেখা না হলেও ছিলাম।
ওর প্রবল ইচ্ছে ছিল কলকাতার বিশেষ একটি পত্রিকায় উপন্যাস লেখা- যেখানে তারাশংকর, সমরেশ বসুরা লিখে গিয়েছেন। মধ্যরাতের আড্ডায় ওকে বলেছিলাম, এখানে যে টাকা পাও তার সিকি ভাগও পাবে না। কি হবে লিখে? সে আমার হাত ধরে বলেছিল, টাকার দরকার নেই, আমার আজীবনের একটা ইচ্ছে পূর্ণ হবে। হুমায়ূন সেই কাগজে কয়েকবছর লিখেছিল। অথচ হুমায়ূনের মৃত্যুর পরে কলকাতায় দু-একটি কাগজ ছাড়া তথাকথিত বড় কাগজগুলো খবরটা পাঠকদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।
কেন এই উদাসীনতা? লক্ষ্য করেছি, বাঙালি হিন্দু পাঠক উপন্যাসে মুসলমান চরিত্র পেলে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। নামাজ, রোজা, আপা, দুলাভাই শব্দগুলো যেন তাদের উপন্যাসের রস গ্রহণে বাধা দেয়। অথচ বাংলাদেশের মুসলমান পাঠকরা অবলীলায় আমাদের উপন্যাসে কোনো তথাকথিত হিন্দু আচার থাকলে উদারতার সঙ্গে রস গ্রহণ করেন। তাদের কাছে উপন্যাসটির মানই শেষ কথা। বলতে দ্বিধা নেই, পশ্চিমবাংলার পাঠকরা এ বিষয়ে অত্যন্ত মৌনবাদী।
সেই ভাবনা থেকেই বড় কাগজগুলো নির্লিপ্ত ছিল কিনা তা জানি না। শ্রদ্ধেয়কে শ্রদ্ধা জানানোর অক্ষমতা মানে নিজেকেই ছোট করা।
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক (শরৎচন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথ মনে রেখেই বলছি) হুমায়ূন আহমেদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সে যদি প্রায় তিরিশ বছর ধরে বাংলাদেশে পাঠকদের বইকুনো না করত তাহলে সেখানে ভালো পাঠক তৈরি হতো না। আর সেটা সে করেছিল বলে আমাদের সহজে গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের মানুষ।
খুব শান্ত এই মানুষটির সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রা নিউইয়র্কের হোটেল থেকে চুরি হয়ে গেল একদিন। সে উত্তেজিত হয়নি। আমায় বলেছিল, যে নিয়েছে তাকে আমি অনুমান করি। কিন্তু সে যেন স্বীকার না করে, তাহলে তার সঙ্গে কখনো কথা বলতে পারব না। আমি এ কথা প্রচারের পরই মানিব্যাগটি ফেরত এসেছিল।
বছরখানেক আগে একা আমি আর হুমায়ূন বসেছিলাম। হঠাৎ সে তার আফসোসের কথা বলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলেছিল। আমি যদি নদীর একূল ওকূল বাঁধতে পারতাম!
সব ইচ্ছে এই জীবনে পূর্ণ করে যাওয়া যায় না। হুমায়ূনও পারেনি।
কিন্তু বাংলা সাহিত্যের এই মুকুটহীন বাদশা বাঙালির মনে থেকে যাবেন বহুকাল। লিখতে শুরু করার সময় হুমায়ূনের কি এই ইচ্ছেটা মনে আসেনি? এলে সেটাই সত্যি হয়ে থাকবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।