আকবর বাদশার সবকিছুই হত হিসেব করে, ঝোঁকের মাথায় ছক না কষে তিনি এগুতেন অল্পই। যেকোন মুহুর্তে যুদ্ধযাত্রার জন্য তার মজুত থাকত “পাঁচশত হাতি আর মালবহনের জন্য একশত সারি ঘোড়া আর উট, প্রতি সারিতে দশটি করে। পহেলা বৈশাখের উদ্যাপন আকবরের আমল থেকেই শুরু হয়। চৈত্রের শেষ দিনে কৃষকরা তাদের সমসত্ম লেনদেন ভূস্বামীদের বুঝিয়ে দিতেন এবং বৈশাখের প্রথম দিনে ভূস্বামীরা কৃষকদের মিষ্টি মুখ করাতেন। এই দিনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মেলা বসতো।
আকবর যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। সম্রাট আকবর প্রায় ৫০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। এর বেশিরভাগ সময় তাকে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতে হয়েছে। আকবর একজন সুশাসক ছিলেন।
মুসলমান শাসকদের সময়ে বহু বিদেশি শক্তি ভারতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা।
আকবর রাজপুত জাতির সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধ পাতিয়ে যেমন তাদেরকে বশে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি চিরকুমারী রাণী এলিজাবেথের পাঠানো বণিক কোম্পানি তথা রাণীর অনুরোপত্র হয়ত রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল তাকে। তাই হয়ত বৃহত্তর স্বার্থের আশা নিয়েই ঐ বিলেতি কোম্পানিকে তিনি দিয়েছিলেন অবাধে ব্যবসা করার অনুমতি। অমুসলমানদের মন্দির নির্মাণ ও নিজ নিজ উৎসব পালনের অনুমতিও দেন তিনি। আকবরের বাবা ছিলেন সুন্নি মুসলমান, কিন্তু তাঁর মা ছিলেন শিয়া। ছেলেবেলায় কিছুকাল তিনি এক হিন্দু পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেছিলেন।
শেখ মুবারক নামে এক উদারপন্থী চিন্তাবিদের মতবাদ তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৫৫৬ সালে বৈরাম খাঁর সাহায্যে আকবর পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্রে হিমুকে পরাজিত ও নিহত করেন। এই জয়ের পর আকবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পান।
তিনি ভারতের নানা অঞ্চল জয় করে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেণ। আকবর তার নিজস্ব ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দীন-ই-ইলাহি নামক ধর্ম চালু করার চেষ্টা করেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুদের ওপর থেকে জিজিয়া কর তুলে নেন।
আকবর সতীদাহ প্রথার বিরোধী ছিলেন।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো নারীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা যাবে না এ মর্মে তিনি এক আদেশ জারি করে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধ ও বিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন।
রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আকবর হিন্দুদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। রাজস্ব সচিব রাজা টোডরমল এবং সেনাপতি রাজা মানসিংহ তাদের অন্যতম। আকবর সাহিত্য ও শিল্পের অনুরাগী ছিলেন।
২৭ অক্টোবর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। আগ্রার অদূরে সেকেন্দ্রা নামক স্থানে আকবরের সমাধি রয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।