পৃথিবী নামক স্বপ্নের খেলাঘরে চলছে ভাঙা আর ধ্বংসের নিষ্ঠুর খেলা ৷ আর এ খেলাঘরের খেলোয়াড়রুপী দানবরা হচ্ছে কিছু শক্তিশালী দেশ যারা খেলাচ্ছলে দুর্বল দেশগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয় ৷ বর্তমান বিশ্বে এমনি এক শক্তিশালী এবং পরধন লোভী দেশের নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ আর এ দেশটির প্রধান সহযোগী হিসেবে পরিচিত দুটি দেশ হচ্ছে,বৃটেন ও ইসরাইল৷ এদের কাজই হলো কিভাবে মুসলমানদের সম্পদ লুট করা যায়; কিভাবে মুসলিম দেশকে ধবংস করা যায় এবং কিভাবে মুসলিম শাসকদের নিজেদের গোলামে পরিণত করা যায় ৷ তাদের এ অসৎ লক্ষ্যের শিকারেপরিণত হয়ে আজ ইরাক,আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশে অশান্তির আগুন জ্বলছে ৷ এসব দেশের শিশুরা মায়ের কোলে বসে ঘুম পাড়ানি ছড়া শোনার পরিবর্তে হায়েনাদের গুলির আওয়াজ শোনে;তারা ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোন সুন্দর স্বপ্নও দেখতে পারে না ৷ শৈশবেই বাবা-মাএমনকি পরিবারের সবাইকে হারিয়ে তারা অনিশ্চয়তা,ভয় কিংবা আতংকের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে ৷ কিন্তু তাদের মনেও তো ভালোভাবে বাঁচার ইচ্ছে জাগে; তাদেরও তো ইচ্ছে হয় নির্ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে কিংবা বন্ধুদের সাথে খেলা করতে৷ কিন্তু হায়েনাদের বন্দুকের গুলি তাদের স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে৷
বিভিন্ন দেশে হামলায় চালানো, গুপ্ত হত্যা করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করা ও বোমা মেরে মানুষ হত্যা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার সমকক্ষ আর কেউ নেই। আমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা মেরে জাপানের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল।
কেবল হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিই নয়,তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে পৃথিবীর অসংখ্য দেশ৷মার্কিন বাহিনী ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ভিয়েতনামের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। মার্কিনীরা সেখানে নিষিদ্ধ নাপাম বোমা ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আমেরিকার একজন লেখক উইলিয়াম ব্লাম তার Killing Hope: US Millitary & CIA Interventions Since World War-Two বইতে মার্কিন সরকারের আগ্রাসী ইতিহাসের একটি তালিকা তুলে ধরেছেন৷ ওই তালিকায় দেখা যাচ্ছে আমেরিকা এ পর্যন্ত ২৩টি দেশে বোমা হামলা করেছে ৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হত্যায় সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে।
এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা ২০টিরও বেশী দেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছে ৷
১৯৫৩ সালের ১৯ শে আগস্ট ইরানের ইতিহাসে একটি পীড়াদায়ক ঘটনা সংঘটিত হয়। সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃটেনকে সাথে নিয়ে ইরানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অভ্যন্তরে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নির্বাচিত ও জনপ্রিয় মোসাদ্দেক সরকারকে উৎখাত করে। ইরানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও তার সরকার ইরানের তেল শিল্পকে জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়ার পরই এই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বছরের জুন মাসে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক ভাষণে ১৯৫৩ সালে ইরানের তৎকালীন সরকারকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হাত থাকার কথা উল্লেখ করে ওয়াশিংটনের ঐ পদক্ষেপকে ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত প্রায় ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত থেকেছে, তা পুষিয়ে নেয়া এত সহজ হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি তার এই হস্তক্ষেপকামী নীতি থেকে সরে আসতে পেরেছে ? না, পারেনি।
এবার আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অপকর্মের একটি ভয়াবহ কাহিনী শোনাবো। ১৯৮৮ সালের ৩রা জুলাই। ঐ দিন সকাল সোয়া দশটায় ইরানের একটি যাত্রীবাহী বিমান প্রায় তিনশত যাত্রী নিয়ে বন্দর আব্বাস থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
যাত্রার কয়েক মিনিট পরেই পারস্য উপসাগরে মোতায়েন মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিনসেনস থেকে বিমানটিকে লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই বিমানটি পারস্য উপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় ৬৬টি শিশুসহ বিমানের ২৯০জন যাত্রী এবং ক্রুরা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৩৮জন বিদেশীও ছিল। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর ইরানসহ বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলো যখন প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠে তখন মার্কিন সরকার ঘোষণা করে যে, তারা ভুলবশত যাত্রীবাহী বিমানে হামলা চালিয়েছে।
তারা মনে করেছিল, ওটা নাকি ইরানের এফ-ফোরটিন যুদ্ধবিমান!
যুক্তরাষ্ট্রের ঐ দাবি যে সত্য ছিল না তা সবাই জানে। কারণ যুদ্ধবিমান আর যাত্রীবিমান দেখতে এক রকম নয়। এখানে আরেকটি বিষয় বলা দরকার, মার্কিন নৌ-বাহিনী যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ঐ বিমানে হামলা চালিয়ে থাকে তাহলে তো তাদের দুঃখ প্রকাশ কিংবা ক্ষমা চাওয়ার কথা । কিন্তু প্রায় দুই যুগ পরেও তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উপরন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো,ঐ নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের সবাইকে পুরস্কৃত করেছে! ১৯৯০ সালের ২৩শে এপ্রিল ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখা হয়, ইরানের যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের সময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ভিনসেনসে কর্মরত সকল সেনা কমান্ডার ও সৈন্যকে পুরস্কৃত করা হয়।
ঐ সময় জাহাজের মোতায়েনে মার্কিন নৌ কমান্ডারকে ‘বীর' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ঘাতকদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমে মার্কিন সরকার প্রমাণ করে যে, ইরানের যাত্রীবাহী বিমানে হামলার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সকল অপকর্মের বিচার হোক। তাদের মোড়লিপনা থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ হোক প্রকৃত স্বাধীন।
ইরানের এ ধরনের একটি এয়ারবাসকে প্রায় ৩০০ যাত্রীসহ গুলি করে নামিয়েছিল আমেরিকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।