স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার। সাজ্জাদ ভাই আর আমি হুমায়ূন আহমেদের একাধিক সাক্ষাৎকার নিছি। আগে ওনার বাসায় আমাদের যাতায়াত ছিলো। তিনি যখন হাতিরপুলে থাকতেন তখনও, পরে ধানমণ্ডিতে গেলে সেইখানে।
আরো অনেকের সাথে আমাদেরও উনি নিয়া গেছিলেন ওনার দেশের বাড়িতে। ১৯৯৬ সালের দিকে হুমায়ূন ভাই বিরক্ত হইছিলেন বোধকরি আমার উপরে। তার আগে ১৯৯৪ সালে তিনি আমারে একটা বই উৎসর্গ করছিলেন। উৎসর্গের ঘটনাটা আনন্দের। একদিন বাংলা একাডেমী মেলায় উনি স্টল থিকা বাইরে আইসা আমারে বললেন, শোনো তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।
একটু হাঁইটা উনি বললেন, আমি তোমারে একটা বই উৎসর্গ করতে চাই তোমার আপত্তি আছে কোনো? আমি বললাম, আপত্তি কেন থাকবে হুমায়ূন ভাই, আমি তো খুশি। উনি বললেন বেশি কিছু লিখি নাই উৎসর্গে। ঠিক আছে তুমি যাও। পরের দিন মেলায় আমারে স্টলের ভিতর ডাইকা নিয়া দর্শক ক্রেতাদের সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দিলেন: এ হচ্ছে ব্রাত্য রাইসু। ওরে আমার নতুন বইটা আমি উৎসর্গ করছি।
হুমায়ূন ভাই কবি প্রকৃতির লোক ছিলেন বইলা আমি ভাবি। মনে আছে একদিন সকালে ওনার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। গেলে পরে উনি আমারে নিয়া বাইর হইলেন। বললেন, চলো তোমারে ইউনিভার্সিটিতে নিয়া যাই। ডিপার্টমেন্টে ওনার রুমে ঢুইকা কী কী জানি করলেন।
বিশাল একটা ড্রয়ার খুইলা ভক্তদের চিঠি দেখাইলেন। অনেক চিঠি। এরপর জিজ্ঞেস করলেন আমি কোথায় যাবো? বললাম বাসায় ফিরবো, বাড্ডায়। উনি বললেন, চলো আমার টিভিতে কাজ আছে। আমি তোমার সঙ্গে যাই, রামপুরায় নেমে যাবো।
রিকশায় ওনার সঙ্গে কী কী আলাপ হইছিল মনে নাই। উনি বাংলাদেশ টেলিভিশন রামপুরায় আইসা বললেন, ঠিক আছে রাইসু তুমি তাইলে যাও। আমার এইখানে কাজ আছে। এই রিকশায়ই যাও। এরপর উনি মানিব্যাগ খুইলা বললেন, তোমার কি টাকাপয়সা কিছু লাগবে।
দেখলাম অনেকগুলা পাঁচশো টাকার নোট মানিব্যাগে। বললেন যত খুশি নিয়া যাও।
এই ঘটনার কিছুদিন পরে দেখি উনি আর আমার লগে কথা কন না। ওনার বাসায় যাই, কিছু কন না। পরে কয়েকবার জিজ্ঞেস করছি, কী ব্যাপার? উনি কোনো উত্তরই দেন নাই আর।
১৯৯৫ টু ৯৬ দুইবার আমি হুমায়ূন ভাইয়ের নাম লইছি কাগজে। একবার মঈনুল আহসান সাবের ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিতে গিয়া। আমি আর ডিয়ার ফ্রেন্ড রাজু আলাউদ্দিন ওই ইন্টারভিউটা নিছিলাম। ওইখানে আমি বলছিলাম, দাঁড়ান কী বলছিলাম--বইটা গোছগাছ করা আছে--ওইখান থিকা তুইলা দেই:
রাইসু: সেটা হলো যে, আমি মনে করি আমাদের যে কবিতা আছে-না? কবিতার একটা মানদণ্ড আমি আবিষ্কার করছি নিজের মতো করে। আন্ওয়ার আহমদের নাম শুনেছেন তো? সাবের: হ্যাঁ, শুনেছি।
রাইসু: আমাদের বাংলায় ভালো কবিতাগুলো আন্ওয়ার আহমদের চেয়ে একটু ভালো, খারাপ কবিতা হলে আনওয়ার আহমদের চেয়ে একটু খারাপ। এই হচ্ছে আমাদের কবিতার মানদণ্ড। সাবের: ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা? রাইসু: ব্যক্তিগত হলে অসুবিধা কী? যেমন আমাদের উপন্যাসের মানদণ্ডে যদি আমরা ধরতে চাই হুমায়ুন আহমেদ হচ্ছেন আমাদের মানদণ্ড। খুব ভালো উপন্যাসও হুমায়ুন আহমেদের চেয়ে খুব খারাপ না। আমাদের এখানে উপন্যাসের ক্ষেত্রে একেবারে অন্যরকম কিছু আমরা এখনো পাই নাই।
এই জন্যেই অদ্ভুত লাগে, যখন একজন হাসান আজিজুর হকের ভক্ত হুমায়ুন আজাদকে স্যরি হুমায়ুন আহমেদকে ফেলে দেয়। সাবের: হুমায়ুন আজাদ ফেলে দেওয়ারই জিনিস। রাইসু: এটা কি রেকর্ড হবে? সাবের: হ্যাঁ, অবশ্যই। রাইসু: তো কোথায় ফেলবেন তাঁকে? সাবের: তাঁকে ভাগাড়েই ফেলা উচিৎ।
তো এই ইন্টারভিউ বাংলাবাজার পত্রিকায় ছাপার পর থিকা হুমায়ূন ভাই আর আমার সঙ্গে কথা বলেন না।
আগে আরেকটা লেখা লিখছিলাম, হিমু, মিসির আলী ও হুমায়ূন আহমেদ নিয়া। যেইখানে হুমায়ূন আহমেদ মিসির আলীর বাসায় দুপুর রাতে হাজির হন চা খাবেন বইলা। এবং চা না থাকার কারণে প্রকাশকদের ফোন করতে হয় চা নিয়া আসার জন্যে। সেই লেখা উনি পছন্দ করেন নাই। অবসর প্রকাশনার আলমগীর ভাই অবশ্য লাইক করছিলেন।
তো এরপর দুই তিনবারই দেখা হইছিল। এমনিতে সাজ্জাদ ভাইয়ের সঙ্গে ওনার সম্পর্ক অনেক দিন ঠিকঠাক ছিল। পরে মাঝখানে একটা গণ্ডগোল হয়, শুনছি। শেষে আবার ভালো হইছিল সম্পর্ক ওনাদের। আমার সঙ্গে শেষ আলাপ ফোনে।
আমি ওনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাইলাম। উনি ফোন কইরা কোনো এক সকালে যাইতে বললেন। কিন্তু যেহেতু নাম শোনার পরেও না চেনার ভঙ্গিতে কথা বললেন আমি আর যাই নাই ইন্টারভিউ নিতে। আমাদের যৌথ ভাবে নেওয়া আরেকটা ইন্টারভিউ আছে হুমায়ূন আহমেদের, যা ভোরের কাগজের ছাপা হইছিল। সেইটা পরে আপ করতেছি।
ওনার প্রতি আমার ভালোবাসা আপাতত অঁটুট থাকুক। যদি ঘটনাক্রমে কোনোদিন মইরা যাইতে হয় তার পরে ওনার সঙ্গে সব ঠিকঠাক কইরা নিব নে। এই ভুবনে দেরি হইয়া গেল!
(ব্রাত্য রাইসু, ২৪.৭.২০১২)
”প্রতিটি লেখক এক অর্থে ধর্মপ্রচারক” - হুমায়ূন আহমেদ
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: সাজ্জাদ শরিফ ও ব্রাত্য রাইসু
সাজ্জাদ শরিফ: আপনার লেখার মধ্যে আপনি প্রায়ই কিন্তু একটা কল্পরাজ্য তৈরি করেন। কল্পরাজ্য কী রকম, ধরা যাক ময়ূরাক্ষী নদী। ঐ নামে হিমুর একটা নদী আছে।
কঠিন একটা অবস্থায়, একটা কট্টর বাস্তবের সামনে এসে যখন সে দাঁড়ায়, তখন সে ওখানে যায়। এবং সে এক ধরনের প্রশান্তি নিয়ে আসে।
হুমায়ূন আহমেদ: যারা খুব যৌক্তিক তারা এটার ব্যাখ্যা ভালো দিতে পারবেন। আমার কাছে এক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। সেটা এই যে, আমার নিজের বোধহয় কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস, যদিবা থাকে, খুব কম।
যেহেতু সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারছি না,সেহেতু সমস্যাটা পাশ কাটিয়ে আসার একটা প্রবণতা আমার থাকে।
বাকি অংশ লিংকে: >> http://bit.ly/MYqgRL ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।