আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি হুমায়ূন হব।

নির্বাক কালের সাক্ষী হুমায়ূন আহমেদ, আমার সংগ্রহশালার সবচেয়ে বেশী জায়গা দখলকারী লেখকের নাম। একজন লেখক তার লেখা দিয়ে পাঠকের মনের এত গভীরে যে ঢুকতে পারে, এ আমার জানা ছিল না। আমার মনে আছে, একবার হিমু উৎসব হয়েছিল। তিনি নিজে সব হিমুকে নুহাশপল্লীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কয়জন লেখক কাগজ কলমের একটা চরিত্রকে জ্যান্ত করে ফেলতে পারে? অসম্ভব কাজ!! অসম্ভব!! হুমায়ূন আহমেদ স্যার কে আমি কখনও চোখে দেখিনি।

দেখার ইচ্ছাও হয় নি। দেবতা বলব না, উনি আমার কাছে ছিলেন একজন মুনিঋষি এর মতন। যাকে দূর থেকে দেখা যায়, যার প্রতিভা ও জ্ঞানের সুবাস নেওয়া যায়। যখনই মন খারাপ হয়েছে, সময় কাটানোর কিছু ছিল না অথবা কিছুই ভাল লাগছিল না, তখন তার বই ই ছিল আমার একমাত্র সঙ্গী। মানুষটা মরে যাওয়াতে আমার কষ্ট হয়নি।

সত্যিই হয়নি। কিছু কিছু মানুষ তার কাজের মধ্য দিয়ে অমর হয়ে যায়, তখন পার্থিব শরীরটার কোন মূল্য থাকে না। আমি কাদিনি, শোক করিনি। কেন করব? কার জন্য করব? শোক হয় আমার বাঙালী জাতীর উপর। সারাটা জীবন দেখেছি, কোন শিল্পী মারা গেলেই তার এ্যালবাম বা বই টা হিট করেছে।

ফেসবুকে কারো ফেসে অমিল নেই, সবার প্রো-পিক এ একজনের ই ছবি। আমি করিনি, করব ও না। এ কাজ করা অন্যায়। এ যে লোক দেখানো, এযে অসম্মান। আমার সব থেকে প্রিয় জ্ঞানী মানুশটাকে আমি আর যাই করি, অসম্মান করতে পাড়ব না।

উনি মারা যাবার আগ পর্যন্ত উনি আমার কাছে যা ছিলেন, ঠিক এখন ও তাই আছেন। হায়রে মূর্খ বাঙালী। তোমাদের অবস্থা হয়েছে "কান নিয়েছে চিলে" গোছের। একজন একটা কথা বলে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরি করল, আর সাধের বাঙালী জামা খুলে, লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে ছুটল তার পিছু পিছু। ছিঃ ছিঃ ছিঃ !!! ধিক তাদের, শত ধিক !!! মানুষটা কি সম্মান পাবার যোগ্য না? অনেকে শুনছি তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলছেন।

কতটুকু বোঝেন বা জানেন আপনারা? একজন স্রষ্টা ও তার সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য আছে। সত্যি বলতে, তার কিছু কাজে আমিও কষ্ট পেয়েছি। বইগুলও ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম। পরে মনে হল, মানুষই তো। থাক না।

তার আপনজনরা তো রয়েছেই এব্যাপারে মাথা ঘামাতে, আমি না হয় নাই ঘামালাম। ফুলে বিষ ও থাকে, মধু ও থাকে। সবার বিষ নিয়ে লাফালাফি বেশী। আমি বিষ নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছুক নই। হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর বই এ আমি যখনই কোন নতুন কিছু জেনেছি, তখন ই নেট এ সার্চ দিতাম।

ভুল কিছু পাইনি। অন্য সব লেখক থেকে তিনি আমার কাছে আলাদা। ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের মনের স্রেশঠত্তের দিক তুলে না ধরে, কি করে একজন মানুষ ভাবে, এটা তিনিই আমাকে বুঝতে শিখিয়েছেন। তার বইতে আমি কোন খল নায়ক পাইনি। কিভাবে যেন, খল নায়ক ও সমাজে নিজের জায়গা করে নিত।

"কোথাও কেউ নেই" এ "বাকের ভাই" এর ফাঁশির দিনের কথা আমার মনে আছে। ওইদিন খুলনা জিলা স্কুল এ আমরা ক্লাস ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম। সারা দেশে মিছিল হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদকে অনুরোধ করা হয়েছিল যেন বাকের ভাই এর ফাঁসি না হয়। সারা দেশ কেঁদেছিল।

আমি কেঁদেছিলাম। ক জন পারে? আমি বলি, কজন পারে???? অসম্ভব ! অসম্ভব !!! বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদের দরকার। খুব দরকার। আমি কারো জন্মদিনে আর কার বই উপহার দেব??? আরেকজন হুমায়ূন দরকার। আরেকজন হিমু দরকার।

আরেকজন মিসির আলি , শুভ্র দরকার। না হলে হবে না। সাহিত্ত্যের একটা অংশ মরে যাবে। আরেকজন হুমায়ূন দরকার। .।

.। .। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.