আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশান্তির নিদ্রা কত দেরি, পাঞ্জেরি?

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল বাংলা ভাষার নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশের গর্ব শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, তাও কয়েকদিন পার হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে ব্লগে এত ভালো ভালো পোস্ট লেখা হয়েছিল যে, আমি নতুন কোন পোস্ট দেবার স্পর্ধা দেখাইনি। সে মেধাও আমার নেই। তবে যা করেছিলাম, সেটা আমার সামুর জীবনে কোনদিন করা হয়নি। জঘন্য ভাষায় এক কুলাঙ্গারকে গালাগালি করেছিলাম।

কেনই বা করবো না বলুন? বাংলাদেশের ব্যাক্তি বিশেষগত অর্জন খুব কম। হ্যা, খুবই কম। এর মধ্যে যে হারে হিন্দি প্রীতি বেড়ে গিয়ে নিজ ভাষারই শ্রাদ্ধ হবার দশা, তাতে ওই একজন হুমায়ুনই পেরেছিলেন সংস্কৃতির তিনটা আসরে বাংলাকে পাঠক দর্শকদের কাছে আকর্ষনীয় করতে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন। তার লাখ লাখ ভক্তকুল যখন তার বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনায় শোকার্ত, সেই সময় যখন দেখি কেউ কেউ নিয়মিত ভাবে ব্লগে নেতিবাচক মন্তব্য করেই যাচ্ছে, তখন কি মেজাজ ঠান্ডা রাখা যায়? কারা এই সমালোচনাকারি? ইসলাম নিয়ে ব্যাবসা করা ছাড়া যাদের অন্ন বস্র বাসস্থান জোগানোর যোগ্যতা নেই তারা।

অল্প বা অর্ধশিক্ষিতরা ইসলাম বেচে খাবে, আর ইসলামের শিক্ষা অনুসারে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না, সেটা কি হয়? বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষের সাথে সাথে সংক্লিস্ট অঞ্চলের অনেক শব্দ ঢাকার ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। আউলা শব্দটিও সে রকমই। এর আরেক নাম হলো কুফা। ইংরেজি বলে জিংক্স। শুদ্ধ বাংলাটা এখনই মনে পড়ছে না।

হুমায়ন আহমেদকে সমাহিত করার স্থান নিয়ে এখন যা চলছে, সেটিকে আউলা লাগা ছাড়া আর কিছু বলা যাচ্ছে না। একজন নন্দিত মানুষ, অসহায় হয়ে কফিনে শুয়ে চির অবসরের প্রতিক্ষায় ক্ষণ গুণছেন। অথচ তারই অতি কাছে অতি আপনজনদের মতানৈক্যের কারণে তার সময় কাটছে হীমাগারে। এ ভীষন অমানুসিকতা ! এবং গর্হিত কাজ। হুমায়ুন আহমেদকে অনেকে নাস্তিক বলে থাকেন।

অথচ তিনি তো ইসলাম ত্যাগ করেননি। বরং নাটিক নভেলে আল্লাহ কোরান নবী এই সব ব্রাত্য(!) বিষয়গুলি তো তিনিই প্রথম ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন। আর এই মুসলমানের দাফনও ইসলামি কায়দায় এবং ইসলামি রীতি মেনে করাই তো উচিত। আর ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ি, মৃত মানুষকে সর্বোচ্চ দ্রুততার সাথেই দাফন করা উচিত। হুমায়ুন আহমেদের দাফন নিয়ে যে আউলা, তার এক পক্ষ্যে আছে তার ছোট স্ত্রি শাওন-তার বাবা মা- এবং প্রকাশক মিজান।

বিপরীতে হুমায়ুন আহমেদের প্রথম পক্ষ্যের গর্ভজাত সন্তানরা, যাদের সাথে হুমায়ুনের দুই ভাইই আছেন। বিদেশে বিবাহিত কারো সংসার ভাঙ্গলে, সেই ব্যাক্তিটিকে homewrecker বলে যথেষ্ঠ নিন্দার সম্মুখিন হতে হয়। শাওন সেই পাপে দুস্ট। লোকে বলে অতি অল্প বয়সি একটা মেয়ের পক্ষ্যে উচ্চশিক্ষিত এবং অনেক পরিণত মস্তিকের একজন মানুষের অনেক দিনের গড়া সংসার ভাঙ্গা অসম্ভব ! এর পেছনে আরেকটি অতি কুটিল মস্তিকের স্লো পয়জন কাজ করেছে। যখন শুনলাম, শাওনের মা পলিটিক্স এ যুক্ত দুই এ দুই এ চার মেলাতে অসুবিধা হয়নি।

ওই পরিবারের ধন সম্পদের পরিমান যাই ই হোক, মানসিকতায় যে চরম দৈন্যভাব প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সেই পরিবারকে অন্তত সমৃদ্ধ বলা যায় না। তার সবচেয়ে বড় প্রমান লাশ নিয়ে দেশে ফেরার সময় শাওনের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমনের আবদারে অনড় থাকা। আরে মাতারি ! তোর কি বিয়া লাগছে, যে আরাম আয়েস করে দেশে ফিরা লাগাবে? যে মানুষটা তোর মোহে পড়ে তার জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ আর সন্তানদের ত্যাগ করেছিল, সেই মানুষটা লাশ নিয়ে ফেরার পথেও তোর বিলাস করা চাই? বিজনেস ক্লাসে ভ্রমন করার মত অত বড় ঘরের মেয়ে কিন্তু তুই না। রোজার দিন না হলে, তোর ঘরের কথা ব্লগেই চাউড় করে দেয়া হতো ! অনেকে বলবেন, আরে হুমায়ুন আহমেদের কি এতে কোন দোষ ছিল না। হ্যা ছিল ! তবে আজ তিনি সব দোষের উবর্ধে।

তাছাড়া যে যন্ত্রণাময় অসুস্থ দিনগুলি তিনি পার করেছেন, তার অপরাধের তুলনায় সেটি নেহায়তই কম ছিল না। তাছাড়া নারীদের মোহনীয় শক্তি উপেক্ষা করার মত মহাপুরুষ পৃথিবীতে বিরল। কিংবা নেই বললেই চলে। গুলতেকিন বা তার গর্ভজাত সন্তানদের অভিমান করার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। যে মেয়েটি প্রেম করে হুমায়ুনকে বিয়ে করে বিয়ের দিনটিও রাস্তায় বসে কাটিয়েছে, কখনও না খেয়ে থাকলেও অনুযোগ অভিযোগ করেনি, সুখে দুঃখে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে ছিল, এক মুহুর্তও ছেড়ে যায়নি, তার অভিমান পর্বত প্রমান হবে সন্দেহ কি? তাছাড়া গুলতেকিনের বিরুদ্ধে বিচ্ছেদ হবার মত কোন অভিযোগ হুমায়ুন আহমেদ নিজেও কোনদিন করেননি।

কোন সন্তানই নিজ বাবা মায়ের বিচ্ছেদকে (তাও আবার দ্বিতীয় বিয়ের মত ঘটনায়) মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু মানুষটি তো এখন সব বিচার সব বিতর্কের উবর্ধে ! তিনি চরম অসুস্থ অবস্থায় থাকাকালেও যখন আপনি ও আপনার সন্তানরা চোখের দেখাটিও দেখতে যাননি, তখন একটি মরদেহ কোথায় দাফন হবে, সে মাথা ব্যাথাটি এখন কেন চাগাড় দিচ্ছে? এই দুই পক্ষ্যের টানাটানিতে চির শয়নের শেষ স্থানটির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ। আর এই বিতর্ক নিস্পত্তির জন্য শাওনের মা গেছে তার নেত্রির কাছে। সেই নেন্ত্রি আবার ঠান্ডা মাথার খুনি বলে কুখ্যাত এক এমপিকে নিস্পত্তির দায়িত্ব দিয়েছে। তামাশার একটা সীমা থাকে ! দুই পক্ষ্যকেই বলি।

হুমায়ুন কেবল আপনাদের নন। তিনি সারা বাংলাদেশের মানুষের। যদি তার কবরের স্থানটির সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে সেটা সাধারণ মানুষ তার ভক্তরাই নির্ধারন করে দেবেন। আপনাদের দায়িত্ব সেটিকে সম্মান করা। এর বাইরে ক্যাচাল করে আর আউলা লাগিয়ে ওই মৃত ব্যাক্তিটিকে আর কস্ট দেবেন না।

আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত হলো, হুমায়ুন আহমেদকে এমন যায়গায় সমাহিত করা, যেখানে সর্বসাধারণ তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যেতে পারে। *সর্বশেষ আপডেট... অসমর্থিত খবরে বলা হচ্ছে, প্রথম পক্ষ্যের সন্তানদের সম্মতিতে(!) শাওনের আবদার মত নুহাশপল্লিতেই চির শয়ানে যাচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদ। এর পেছনে কোন খুনি গুন্ডার ধমকি কাজ করেছে কি না কে জানে? (খবরে পড়লাম বহু আলোচিত আবুল ভাই নাকি পদত্যাগ করেছে। তার পদই ছিল কোথায়, আর ত্যাগই বা করলেন কি? তাছাড়া হুকুমের চাকরের পদত্যাগে, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির হোতা, ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাবে। শেকর নিয়ে টান দেবো আরেকদিন)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।