এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। কালজয়ী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর থেকেই এ কথাটা আমার মাথার ভেতর কামড়াচ্ছিল- তাঁকে কি বাংলাদেশের জাতীয় কথা সাহিত্যিক বা জাতীয় লেখক ঘোষণা করা যায় না? আমার মনের ভেতর যুগপৎ অনেক দ্বিধাও ছিল, হয়তো এ ধরনের চিন্তা আমি ছাড়া আর কারো মাথায় খেলে নি। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় চ্যানেল আইয়ের খবর শোনার পর আশ্বস্ত হলাম- নাহ, শুধু আমিই নই, তাঁকে জাতীয় কথা সাহিত্যিক বা জাতীয় লেখক হিসেবে ভূষিত করার কথাটা আরো অনেকের মনেই উঠে এসেছে।
কোন্ শর্ত পূরণ সাপেক্ষে একজন অধ্যাপককে জাতীয় অধ্যাপক, বা একজন কবিকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সে বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই।
এবং এ-ও জানি, হুমায়ূন আহমেদকে জাতীয় কথা সাহিত্যিক বা জাতীয় লেখক হিসেবে ঘোষণা না দিলেও এ-দেশের মানুষ ও রাষ্ট্র বা সরকারের তাঁর প্রতি ভালোবাসা বা শ্রদ্ধার একবিন্দুও ঘাটতি হবে না। এ দেশবাসী শতাব্দী থেকে শতাব্দী হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণে রাখবে। জোছনারাতে হিমুরা খালি পায়ে রাস্তায় বের হবে- তাঁদের অশ্রুতে রাজপথ ভিজে যাবে।
একজন লেখক, একজন নাট্যকার, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা কীভাবে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যেতে পারেন, হুমায়ূন আহমেদ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। একটা যুবক কীভাবে বইয়ের কীট হয়ে যেতে পারে, হুমায়ূন আহমেদ তা শিখিয়ে গেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের কারণে একটা বইয়ের মেলাও সর্বাধিক মুখরিত উৎসবে পরিণত হয়ে উঠলো। একটা সময় ছিল, যখন এ দেশের গুটিকতক পাঠক বই বলতে কেবল পশ্চিম বঙ্গের লেখকদের বই-ই বুঝতেন। হুমায়ূন আহমেদ এক আশ্চর্য জাদুকর- বাংলাদেশের পাঠকদের চুম্বকের মতো টেনে আনলেন তাঁর বইয়ের দিকে। সেই যে হ্যামেলিনের বাঁশিঅলা ছিল, আর চোখের সামনে এ যুগে আমরা দেখলাম- বাংলাদেশের বইঅলা। এ বইঅলার পেছনে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে চললো অগণিত পাঠক- আবালবৃদ্ধবণিতা- তাঁরা এ বইঅলার বইয়ের ভেতর বুঁদ হয়ে পড়ে থাকলো।
বাংলাদেশের এ জাদুকরি বইঅলা আমাদের হৃদয়ের কথা সাহিত্যিক- তাকে কেউ জাতীয় কথা সাহিত্যিক ঘোষণা দিক বা না দিক- তিনি বাংলাদেশের আকাশে সমগ্র আগামী জুড়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়ে থাকবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।