আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী! বলল, তারা তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না!
হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য মানুষের জীবনে সাঙ্ঘাতিক প্রভাব ফেলেছেন। আমার জীবনেও ফেলেছেন। এতটাই বেশি, যে সেটা লুকিয়ে রাখাই শ্রেয়। হুমায়ূন আহমেদ লেখক, তাই আমারও লেখক হতে হবে।
তিনি ডক্টরেট করা, প্রফেসর, তাই এমনটা আমারও চাই। মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর তিনি বলেছেন, ভবিষ্যত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো হবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। সোজা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙে ভর্তি হওয়া।
এই লোকটা মারা যাবার পর তাঁকে নিয়ে লিখিনি। তাঁর কথা আনিনি।
এখনো মনে পড়ে, বাংলাদেশ সময় রাত দশটার পরপর তিনি মারা গেছিলেন। সেই সময় আমি টাঙাইল থেকে আসছি। বাস জ্যামে আটকানো। অস্থির লাগছে। জীবনে যেমনটা হয়নি, মুখ পাকিয়ে বমি চলে আসছে।
বসে থাকতে পারি না, অকল্পনীয় অস্বস্তি। অনেকটা সময় ধরে। হয়ত আধঘন্টা। তারপর তীব্র বৃষ্টি নেমেছিল। সেই বৃষ্টিটায়, বুক পর্যন্ত জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেছিলাম।
বারবার জলস্পর্শ নিচ্ছি মাথায়, মুখে, বুকে। অদ্ভুত চোখে চেয়ে আছে বাসভর্তি মানুষ। ভিজে যাচ্ছিল বাসের সিটও। টানা দশ মিনিট। কোন কারণ ছাড়াই করুণাধারায় ভেজা।
তারপর শরীরটা ভিতরে ঢুকিয়ে বসলাম। ঘন্টাখানেক পর মেসেজ এল,
দাদা, হুমায়ূন আহমেদ ইজ নো মোর।
এই কথাটা কাউকে বলিনি। বলার কিছু নাই। আত্মার যোগাযোগের চেয়ে পিস্টনের সাথে ডিজেলের স্পার্কের যোগাযোগ এখন অনেক সচ্ছ্বন্দ্যের বিষয়।
বইয়ের নতুন পাতা খুলতে গেলে পুরনো পাতাকে ভাঁজ করে রেখে দিতেই হয়।
আজকে হঠাৎ অন্যদিন ঈদসংখ্যা হাতে চলে এল। নিব না। হুমায়ূন আহমেদ নেই। নিতে হবে, খুলে দেখতে হবে, কারণ তাঁর অপ্রকাশিত লেখা নাকি আছে।
খোলার পর, তীব্র একটা ঝাঁকি খেলাম। বারবার চোখ বুলালাম, না, ঠিকই দেখছি। হুমায়ূন আহমেদের এই লেখাটার শিরোনাম নবীজি।
একটা উপন্যাস শুরু করেছিলেন তিনি। শুধুই শুরু।
আকৃতিতে সামান্য এই লেখাটা পুরোটাই তুলে দিতে পারলে ভাল লাগত। তা হয়ত শোভন হবে না। শুধু একটা ছোট অংশ তুলে ধরছি।
আরব পেনিসুয়েলা। বিশাল মরুভূমি।
যেন আফ্রিকার সাহারা। পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে ভারত মহাসাগর, পূর্বে পার্শিয়ান গালফ। দক্ষিণে প্যালেস্টাইন এবং সিরিয়ার নগ্ন পর্বতমালা। সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল। এখানে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বলে কিছু নেই।
সারা বৎসরই মরুর আবহাওয়া। দিনে সূর্যের প্রখর উত্তাপ সব জ্বালিয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। সারা দিন ধরে বইছে মরুর শুষ্ক হাওয়া। হাওয়ার সঙ্গে উড়ে আসছে তীক্ষ্ণ বালুকণা। কোথাও সবুজের চিহ্ন নেই।
পানি নেই। তারপরেও দক্ষিণের পর্বতমালায় বৃষ্টির কিছু পানি কীভাবে কীভাবে চলে আসে মরুভূমিতে। হঠাৎ খানিকটা অঞ্চল সবুজ হয়ে ওঠে। বালি খুঁড়লে কাদা মেশানো পানি পাওয়া যায়। তৃষ্ণার্ত বেদুঈনের দল ছুটে যায় সেখানে।
তাদের উটগুলির চোখ চকচক করে ওঠে। তারা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কাঁটাভর্তি গুল্ম চিবায়। তাদের ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে থাকে। তারা নির্বিকার। মরুর জীবন তাদের কাছেও কঠিন।
অতি দ্রুত পানি শেষ হয়। কাঁটাভর্তি গুল্ম শেষ হয়। বেদুঈনের দলকে আবারো পানির সন্ধানে বের হতে হয়। তাদের থেমে থাকার উপায় নেই। সব সময় চলতে হবে।
মাঝেই যুদ্ধ। এক গোত্রের সঙ্গে আরেক গোত্রের হামলা...
... পবিত্র কোরান শরীফে সূরা তাকবীরে জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যা বিষয়ে আয়াত নাজেল হলো। কেয়ামতের বর্ণনা দিতে দিতে পরম করুণাময় বললেন-
সূর্য যখন তার প্রভা হারাবে, যখন নক্ষত্র খসে পড়বে, পর্বতমালা অপসারিত হবে। যখন পূর্ণগর্ভা উষ্ট্রী উৎক্ষেপিত হবে, যখন বন্যপশুরা একত্রিত হবে, যখন সমুদ্র স্ফীত হবে, দেহে যখন আত্মা পুন:সংযোজিত হবে, তখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?
যে মহামানব করুণাময়ের এই বাণী আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন, আমি এক অকৃতী তাঁর জীবনী আপনাদের জন্য লেখার বাসনা করেছি। সব মানুষের পিতৃঋণ-মাতৃঋণ থাকে।
নবীজির কাছেও আমাদের ঋণ আছে। সেই বিপুল ঋণ শোধের অতি অক্ষম চেষ্টা।
ভুলভ্রান্তি যদি কিছু করে ফেলি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি পরম করুণাময়ের কাছে। তিনি তো ক্ষমা করার জন্যেই আছেন। ক্ষমা প্রার্থনা করছি নবীজির কাছেও।
তাঁর কাছেও আছে ক্ষমার অথৈ সাগর।
হুমায়ূন আহমেদ এই লেখা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন একজন ধার্মিক আলিমের অনুরোধে। অন্যপ্রকাশের নতুন শোরুম উদ্বোধনে। ধার্মিক লোকটার অনুরোধ ছিল, হুমায়ূন আহমেদের লেখা কত মানুষ পড়ে, তিনি যদি দয়াময় রাসূল দ.'র একটা জীবনী লিখতেন! কতই না মমতায় শুরু করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ! পড়ালেখা চালাচ্ছিলেন। সেইসাথে অভিমানও ছিল করুণাময় নবীজি দ.'র উপর।
অগুণতি মানুষ তাঁকে দেখেছে। লেখক দেখা পাননি। যদি কখনো স্বপ্নে দেখেন, তার পরই শুরু করবেন তিনি এই লেখা। শুরুও করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি।
আহা, কী লেখা হত সেটা!
পনের ষোল বছর বয়েসি অর্বাচীণ এক ছেলে হুমায়ূন স্যারকে ঈদগায় রোজার ঈদে বলেছিল, আমার বাসায় যদি আসতেন, আমার ঈদ সার্থক হতো।
সেদিন রাতেও মন খারাপ ছিল আমার। হায় হুমায়ূন আহমেদ! আপনি ঠিকই আমার একটা রোজার ঈদ সার্থক করে দিয়ে গেলেন। ঈদের ভোর রাতের সময়টায়, আপনাকে নিয়ে এই প্রথম লিখছি। আর ভোর রাতে, যত জগৎ আছে, সমস্ত জগতের প্রতি করুণাধারা রাসূল দ.'র আগমনের সময়ে, তাঁর প্রতি যে ভালবাসার জমাট প্রকাশ দেখতে পেলাম আপনার কলমে, ঈদ (খুশি) তো সাঈদ (আনন্দময়) ছিলই, মুবারক (পবিত্র) হয়ে গেল।
আমার নবী দ.'র নাম নিয়ে ঈদ শুরু হল।
তাঁর নাম যেখানে তাই তো পবিত্র। ঈদ মুবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।