িলখেত চাই, আমার পরানো যাহা চায় আলেকজান্ডার দি গ্রেট, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নাম বীর হিসেবে কে না জানে। কিনতু এদের সাথে আমারও যে নাম থাকতে পারে তা আমি স্বপ্নেও (স্কয়ারের আউটলেট নয়) ভাবিনি। এই অবিশ্বাস্য কাহিনীই আজকের বিষয়। একবছর ধরে ফোন দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, এমন একজন বন্ধু ফোন করে জানাল তার বোনের জন্য রক্ত প্রয়োজন। বিধার অপার কৃপায় আমার রক্তের গ্রুপের সাথে তার রক্তের গ্রুপের মিলে গেছে।
ঢাকার বাইরে থাকার জন্য উপযুক্ত কারন দেখিয়ে সেযাত্রা রক্ষা পেলাম। সে জানাল তার আরো ব্লাড ডোনার আছে তাদের সে খুজে নিবে। পরের দিন আবার ফোন করল, আমি সমস্যা শেষ হয়েছে ভেবে ফোন ধরলাম। জিজ্ঞাসা করল, আমি কোথায়? সরল বিশ্বাসে বললাম, ঢাকাতেই আছি। জানালো, তার বোনের আরো রক্তের প্রয়োজন।
আমার রক্ত নিয়ে সে পৃথিবীর আলো হাওয়া আরো কয়েকদিন দেখতে চায়। উত্তরা থেকে জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত মেডিকেলে আসলাম। বন্ধুটি আমাকে একজন নারী ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি পরম মমতায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ডায়াবেটিস, এজমা অথবা অন্য কোন অসুখ আছে কিনা, আমি কোন ওষুধ খাই কিনা, গত কয়েকমাসে আমি কোন ইনজেকশন নিয়েছি কিনা ইত্যাদি। সবগুলিরই উত্তর না বোধক পেয়ে তিনি মিষ্টি হেসে আমার বিপি মাপলেন।
আমি ওনার বয়স আরেকটু কম হলে কার কি ক্ষতি হতো ভাবছিলাম, তিনি আমাকে চৌদ্দ নম্বর রুমে যেতে বললেন। ওই রুমের ছোকড়া কোন রকম হাই, হ্যালো ছাড়াই রক্ত বিশুদ্ধতা ও ম্যাচিং এর অজুহাতে আমার বাম হাতের শিরা ফুটা করে দিলেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও কিছুতেই সিরিঞ্জে রক্ত তুলতে পারলেন না। চোখের সামনে আমি নিজেকে রক্ত শূন্যতার রোগী হিসেবে দেখতে পেলাম। এই কথা আরকটু আগে বলতে পারলে, আমি এখন ফিরতি বাসে থাকতাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে ছোকড়া আমার বাম হাতের শিরা খুজে বের করে ফেললো। বিস্ময়ে আমার চোখ বড় হয়ে গেল যখন সে হাতের শিরা থেকে দূমু্ল্যের বাজার থেকে কেনা শাক, সবজি খেয়ে তৈরী করা রক্ত দিয়ে সিরিজ্ঞের অর্ধেকটা ভরে ফেললো। ঘন্টাখানেক পর পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনার পালা। কয়েকজনকে বিশুদ্ধতা ও ম্যাচিং এর কারন দেখিয়ে রক্ত দানে অযোগ্য ঘোষনা করা হলে আমি আশায় বুক বাধলাম। কিন্তু হায়, যন্ত্রপাতির দূর্বলতা কিংবা অজানা কোন কারনেই হোক তারা আমার রক্ত বিশুদ্ধ ও অন্যকে দান করার উপযুক্বত বলে ঘোষনা দিল।
দাত চেপে মুখটাকে কঠিন বানিয়ে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, সে দাত বের করে হাসছে। দীর্ঘক্ষন হাসার কারনে গভীর ভাবে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, তার উপরের পাটির একটি দাত নেই। এবার আমার মুখে হালকা হাসি ফুটলো। রক্ত সংগ্রহের বেড মাত্র দুইটি, কয়েক দশক লোক রক্ত দেয়ার জন্য অপেক্ষামান। একটি চেয়ারে আমি বসলাম।
ঘন্টাখানেক পর ডাক পড়লো। এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট আসেনে শুয়ে পড়লাম। বয়স্ক কর্মচারিটি অতি দ্রততার সাথে রক্ত নেয়ার সুই ঢৃকিয়ে দিলেন। অনন্ত কাল পরেও যখন তা খুলছেন না, তখন তাকিয়ে দেখলাম, একই সাথে তিনি দুইজন ব্লাড ডোনারকে নিয়ন্ত্রন করছেন। আমার কাছে মনে হলো, আমার চেয়ে অন্য আরেকজনের প্রতিই তার মনোযোগ বেশী।
দিব্য চোখে দেখতে পেলাম, বয়স্ক লোকটি সুই খুলতে ভুলে গেলেন। আর আমি.....যাক ভদ্রলোকের দয়া হলো। তিনি আমাকে সুই খুলে মুক্তি দিলেন। আমি বেচে আছি দেখে তৃপ্তির নিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করার চেয়ারে বসলাম। রক্ত দেয়ার পর আমার সতীর্থরা কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছিল।
আমি আগেই বন্ধুর হাত খালি দেখেছিলাম, তবু চমক দেখব বলে আবার তাকালাম। না তাকালেই বোধ হয় ভাল ছিল। এক গ্লাস সরকারী পানি (ফিল্টার পানির ব্যবস্থা আছে, সাথে একটি একৃরিয়াম যেখানে পাঙাস জাতীয় মাছ আছে) খেলাম। শূন্য চোখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। হঠাত একটি পোস্টার দেখে আমার লোম দাড়েয়ে গেল।
পোস্টারটি ছিল ১৪ই জুন রক্ত দান দিবস উদযাপনের। ওখানে লেখা ছিল, "যারা স্ব্চেছায় রক্ত দান করে তারা একেকজন বীর"। মুহুর্তের মধ্যেই আমার বুক ফুলে উঠলো, আমি নিজেকে বীর হিসেব বরন করে নিলাম। আলেকজান্ডার, নেপোলিয়নদের আমার ইয়ার দোস্ত বলে মনে হলো। আমার এই বিরল সুযোগ তৈরী করে দেয়ার জন্য প্রথম বারের মতো বন্ধুটির দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালাম।
বন্ধুটিও আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, চল বাইরে গিয়ে ঠান্ডা কিছু খাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।