আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই যে কোন সুপারষ্টারই নিজের ব্যাপারে ( অর্থ্যাৎ নিজের ইমেজের ব্যাপারে) যথেষ্ট সচেতন থাকে, আলেকজান্ডার ও তার ব্যাতিক্রম না। চাইলেই যে কেউ আলেকজ়ান্ডারের মূর্তি গড়তে পারতনা, সমসাময়িক তিনজন শিল্পীকে তিনি এই অধিকার দিয়েছিলেন। এরা হলেন লি সি পোস নামে এক জন ভাস্কর, চিত্রশিল্পী অ্যাগলেস এবং হীরকশিল্পী পিরগোন্টলেস, লি সি পোসের কিছু কাজ এখনও এখানে সেখানে দেখা যায়, আর বিভিন্ন বইপত্রের বিক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে আমরা আলেকজাণ্ডারের চেহারার স্পষ্ট ছবি পেয়ে যাই।

নেপোলিয়ানের মত আলেকজান্ডারো বেশ খর্বকায় ছিল। টেনেটুনে ৫ফুট। কিন্ত স্বাস্থ্য ছিল সুঠাম, দেখতেও নাকি সুন্দর ছিলেন। উজ্জ্বল গাত্রবর্নের সাথে ঢেউ খেলানো মাথার চুল, মুখে একটু লালচে আভাও ছিল। ঐতিহাসিক প্লুটার্ক এ ভাবেই বর্ননা দিয়েছেন।

একটু বাদিকে হেলানো ছিল তার মাথা গবেষকরা এ ব্যাপারেও গবেষনা করতে ছাড়েন নি, আলেকজান্ডারের দৃষ্টিশক্তি স্বভাবিক ছিলনা, এবং তিনি “ব্রাঊন সিন্ড্রোমে” আক্রান্ত ছিলেন, নিজে দাড়ি রাখা পছন্দ করতেন না বলে সৈন্যদলেও নিয়মিত দাড়ি কামানোর ব্যবস্থা করেছেন। নরম সরম আলেকজান্ডার কে বোঝাই যেত না এই চেহারার আড়ালে কি ভয়ংকর এক যোদ্বা বাস করে। এ পরিচয় অবশ্য তার ছেলেবেলার বন্ধুরা ঠিকই পেয়েছিলেন। মাঝ মাঝে আক্ষেপ করে বন্ধুদের বলতেন “আমার বাবা আমার জন্য বিজয় করার জ ন্য কিছু রেখে গেলেননা সব জায়গাই তার বিজয় চিহ্ন। “ আলেকজান্ডারের নামের আগে ঐতিহাসিকরা মহান বিষেশন যোগ করেন প্রকৃত ভাবে তার পিতা ফিলিপ কিন্ত ম্যাসি্ডনিয়াস সম্রাজ্য বিস্তৃত ঘটান বিপুলভাবে।

ফিলিপের রাজবংশ ম্যাসাডনিয়ায় রাজত্ব করছেন ৩০০ বছর। বীর আলেকজান্ডার তার সমর প্রতিভার বিপুল অংশ পেয়েছেন তার বাবার কাছ থেকে। কিন্তু তার হৃদয় বৃত্তিকে প্রভাবিত করছেন তার মা ওলিম্পীয়াস। দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি, ঔদ্ব্ত্য, আর ভীষন নিষ্ঠুর ছিলেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা তার দ্বিগজয়ী স্বামী ফিলিপ ও তাকে ভীষন সমজে চলতেন।

রাজা ফিলিপ মারা যাবার পরই রানী ওলিম্পীয়াস তার প্রধান সতীন কে জ্যান্ত পুরিয়ে মারেন। এহেন মায়ের প্রবল প্রভাব ছিল তার ঊপর। এছাড়াও আলেকজান্ডার বিশ্বাস করতেন তিনি ইলিয়াড মহাকাব্যের প্রবাদ প্রতিম নায়ক অ্যাকিলিসের বংশধর। উত্তর গ্রীশের থেসালোনিকি ছিল ফিলিপের রাজধানী, জায়গাটার চর্তুদিকে ছিল পাহাড় আর জঙ্গল, যীশু খীষ্ট্রের জন্মের ৩৫৬ বছর আগে জুলাই মাসে ২০ তারিখ এখানেই জন্ম হয় আলেকজান্ডারের। রাজকুমার হওয়া সত্ত্বেও প্রছুর পরিশ্রম করতে হয় তাকে।

তার দৃষ্টিতে আদর্শ পুরুষ ছিল তার বাবা। মতাদর্শ কিছু বিরোধ থাকা সত্ত্বেও ফিলিপ আলেকজান্ডারকেই তার উত্তরাধিকারী ঘোষনা করেন। প্লেটর শিষ্য অ্যা্রিষ্টটলের সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচয় ছিল ফিলিপের। আলেকজান্ডারের শিক্ষক হিসাবে তিনি অ্যারিষ্টটলকেই মনোনয়ন করেন। পারস্যর সাথে গ্রীক শ্ত্রুতা অনেক পুরানোদিনের।

এজিয়ান সাগরেরপারের এই দেশটিকে আক্রমন করার উদ্দ্যেশে নিয়ে তৈরি হচ্ছিলেন ফিলিপ, কিন্ত পারস্য থেকে পাঠানো গুপ্ত হত্যাকারীর হাতে নিহত হন তিনি। তখন তার বয়স মাত্র ৪৬ বছর আর আলেকজান্ডারের বয়স মাত্র ২০ বছর। সিংহাসনে বসেন আলেকজান্ডার। এর মাত্র ২ বছর পর ছ’হাজার ঘোড়াসওয়ার, ৪৩ হাজার পদাতিক সৈন্য নিয়ে তিনি এশিয়া জয়ের উদ্দ্যেশ্য বের হন। যিশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে এক মে মাসে আলেকগান্ডারের পারস্য অভিযান শূরু হয়।

ট্রয়ের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে কাবোকাস নদীর তীরে পারস্যরাজের বিপুল সৈন্য জমায়েত হয়। ১৫০০০ হাজার অশ্বারোহী এবং ১৬০০০০ হাজার পদাতিক। এদের এক-তৃতীয়াংশ ভা্রাটে গ্রীক সৈন্য। নদী পাড় হয়ে খাড়া পারে বিপক্ষ সৈন্যদের সাথে সামনা সামনি যুদ্বে অবতীর্ন হন আলেকজান্ডার। প্রথম বিজয়ের স্বাদ নিন আলেকজান্ডার।

পিতার অশ্বারোহী বাহিনীর সাথে যুক্ত করেন মেসোডনিয়ান সেনানী, যারা বর্শা ছোড়ায় ছিল সিদ্বহস্ত। সাধারন বর্শার দৈর্ঘ্য যেখানে ৭ ফুট সেখানে অলেকজান্ডারে সৈন্যর বর্শার দৈর্ঘ্য ছিল ১৬ ফিট। বর্শার এই বিশাল দৈর্ঘ্যই তার সেনাদের করছিল অজেয়। এরপর আলেকজান্ডার তার দৃষ্টি ফেরালেন আবশিষ্ট এশিয়ার দিক এবং পলাতক বিসাসের ওপর। ৩২৯ খ্রীষ্টাব্দে বিসাস ধরা পরেন।

অঙ্গ প্রতঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। স্পিটামিন নামে এক ব্যাক্ট্রিয়াবাসি আলেকজান্ডারের ঘুম কেড়ে নেয়। পাহাড়ি ঘোড়া সওয়ারদের সাথে নিয়ে স্পিটামিন আলেকজান্ডারর সৈন্যাদের উপর ঝটিকা আক্রমন করে ব্যতিব্যাস্ত করে তুলে। আলেকজান্ডারের সৈন্যরা হতাশ হয়ে পরে আর দলেদলে পালাতে থাকে, বাধ্য হয়ে আলেকজান্ডারকে ব্যাক্ট্রিয়াবাসীদের মধ্য থেকে সৈন্য নিয়োগ দিতে হয়। ৩২৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে স্পিটামিন ধরা পরে এবং তার খন্ডিত মস্তক উপহার দেয়া হয় আলেকজান্ডার কে।

৩২৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ৭৫ হাজার সৈন্যর এক বিশাল বাহিনী নিয়ে অভিযান শুরু করেন আলেকজান্ডার। এত বিপুল সৈন্যর মধ্যে মেসিদোনিয়ান মাত্র ১৫০০০ হাজার। হিন্দুকূশ অতিক্রম করে ঝিলম নদীর তীরে হাজির হন পরের বছর জুন মাসে। মুখোমুখি হন তার জীবনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাঞ্জাব অধিশ্বর পূরুর। উচ্চতায় পুরু ছিলেন প্রায় ৭ ফুট, বিশাল ছিল তার সম্রাজ্য।

তার বাহিনীতে ৫০০০০ হাজার পাদাতিক ছাড়াও ছিল সমর নিপুন আশ্বারোহী বাহিনী ও হস্তী বাহিনী। গ্রীক সেনাবাহিনী এই হস্তী বাহিনীকে ভীষন ভয় পেত। মহারাজ পুরু এম্নিতেই বিশাল দেহের তার ওপর এক বিশাল হাতীতে চেপে সুবর্ন ও রৌপ্য নির্মিত অস্ত্র নিয়ে খোলা ময়দানে আভির্বুত হন। শ্ত্রু সৈন্য সজাগ দৃষ্ট রাখছেন এ কথা আলেকজান্ডার জানতেন, তাই শত্রুদের বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য নানা কৌশল করে, অনবরত সৈন্যদের কুচকাওয়াজ করায় তাতে পুরু মনে করে আলেকজান্ডারের বিশাল বাহিনী, প্রায়ই মনে হত এই বুঝি যুদ্ব বাজে, এই বুঝি যুদ্ব বাজে, কিন্ত প্রতিবার দেখা যেত আশংকা মিথ্যা। পুরুর বাহিনী বিরক্ত হয়ে যায়।

বিরক্ত হয় মহারাজ পুরুও। প্রহরায় পরে ঢিল। রাতে প্রহরা বন্ধ করে দেন। আলেকজান্ডার এই সুযোগেই ছিলেন তিনি। সেনাবাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করে রাতের আধারেই নদী পার হয়ে ওপরে গেলেন।

সেরাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্ট হচ্ছিল। ভোর বেলায় পুরুর মুখোমুখি হলেন তিনি। বাহিনীর বিশাল অংশকে আলেকজান্ডার লুকিয়ে রেখেছিলেন। ঊপস্থিত অল্প শত্রু দেখে পুরু ভাবলেন তার বিজয় অনিবার্য। হাতীর পিঠে বসে আক্রমন করে বসেন পুরু, চারিদিকে জল কাদা, এর মধ্যে পুরুর হস্তী বাহিনী অকর্মন্য হয়ে গেল।

ওদিকে আলেকজান্ডারের লুকানো আশ্বারোহি বাহিনী পিছন দিক দিয়ে আক্রমন করে বসে। হাতির পিঠে বসে পলায়ন করা অবস্থায় পুরু ধরা পরে। নিয়ে আসা হয় তাকে আলেকজান্ডারের সামনে। তার পরের ইতিহাস সবার জানা বন্দী নৃপতিকে সামনে নিয়া আসা হলে তাকে আলেকজান্ডার জিজ্ঞেস করেন, কেমন ব্যাবহার প্রত্যাশা করেন তিনি? রাজকোচিত মর্যাদার সাথে পুরু উত্তর দিলেন, একজন রাজা আর একজন রাজার কাছে যে ব্যাবহার আশা করে তার মতো’। আলেকজান্ডার উত্তর দিলেন যাও তুমি মুক্ত।

প রে ওই পুরু আলাকজান্ডারের খুব ভাল বন্ধুতে পরিনত হন। এদিকে বর্ষা অবিরাম চলছে, মেসিদোনিয়ান সেনারা এই ধর নের বর্ষায় অভ্যস্ত ছিলেন না। বিদ্রোহ করে বসল, বিফাল মনোরথে ভারত অভিযান বন্ধ রেখে দেশের দিকে ফিরে চললেন। দেশে ফেরার পথে পড়ল অন্তহীন মরুভূমি, শেষ পর্যন্ত অলেকজান্ডার যখন দেশে ফেরত যান তখন তার ৮৫০০০ সেনা থেকে মাত্র ২৩০০০ হাজার সেনা অবশিষ্ট ছিল। ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আরব জয়ের উদ্দ্যেশে বের হন।

পৌছান ব্যবিলন, এখানে ১৯ মে এক ভোজসভায় অংশ নেন। খাওয়ার পর পেটে শুরু হয় ভয়ানক ব্যাথা। ৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মৃত্যু হয় আলেকজান্ডারের, তার মৃত্যু নিয়ে আজও আছে মতভেদ। কেউ বালেন খাদ্যে বিষ ক্রিয়া, কেউ বলেন, ম্যালেরিয়া আবার কেউ বলেন অন্ত্রের কোন ক্ষতই তার মৃত্যুর কারন। জিবন্ত কিংবদন্তী ছিলেন এই মানূষটি।

আজ তার মৃত্যুর ২৩০০ বছর পর এই মানুষটিকে পৌরানিক কাহিনীর অসামান্য কোন নায়ক মনে হয়।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.