আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষণিকের পরিচয়

প্ল্যান প্রোগ্রাম করে অনেক কিছু হয় না আবার কিছু ব্যাপার কেমন হুট করে হয়ে যায়! আজকে এয়ারপোর্ট গিয়েছি মরক্কোর দুই ফ্রেন্ডকে বিমানে উঠিয়ে দিতে। উঠিয়ে ও দিলাম। ফেরার পথে মেট্রোতে উঠে ঘুম দেব চিন্তা করছি। সে প্রিপারেশন নিয়ে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করবো এমন সময় দেখি সামনের সারিতে এক মহিলা আর একটা মেয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে শহরের ম্যাপ দেখছে। একটু কৌতূহলী হয়ে উঠলাম।

বেশভূষাতে ও ঠিক রাশান মনে হল না। তার উপর আবার লাগেজগুলোতে ট্যাগ দেখে বুঝলাম সদ্য বিমান থেকে নামা টুরিস্ট। নিজেদের মধ্যে তারা কথা বলছে নিচু স্বরে। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম। আসলে কথা শোনার জন্য না ভাষাটা চেনার জন্য।

নাহ মেট্রোর ঝাকুনিতে কিছু বুঝতে পারলাম না। আমার পাশের মিম ভাই কে বললাম চলেন এদের সাথে নামি। মনে হয় এদের কোন হেল্প দরকার। আমাদের ও কোন কাজ নাই একটু হেল্প টেল্প করি। মেট্রোর ভেতরে কোন কথা বলি নি বের হয়েই পরিচিত হলাম।

জানলাম তারা নরওয়ে থেকে এসেছে। তারপর এক বিরাট ইতিহাস। অপরিচিত দুটো মানুষের সাথে প্রায় ঘণ্টা ছয়েক কাটিয়ে আসলাম। এই অল্প সময়ে মানুষ দুটো কেমন আপন হয়ে গেল। একটু আগে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে এসেছি।

তারা অন্য একটা শহরে যাবে। খারাপ লাগছে। ভদ্র মহিলা পেশায় ডেন্টিস্ট। বাবার পেশাগত কারণে প্রথম জীবনে কিছুদিন মস্কোতে এবং পরবর্তীতে লন্ডন থাকায় আধো আধো রুশ এবং চমৎকার ইংরেজি বলে। তার মেয়ের ইংরেজি ও চমৎকার।

নাম কাথারিনা। পড়াশুনা করে ইউনিভার্সিটি অব অসলো তে। বিষয় রাশান স্টাডিজ। সে সুত্রেই রাশায় আসা। এসব বলতে বলতেই আমরা পৌঁছে গেলাম রেলওয়ে স্টেশনে।

হাতে সময় থাকায় তাদের লাগেজপত্র স্টেশনের লকারে রেখে চষে বেড়ালাম স্টেশনের আসে পাশে অনেক দূর। মিম ভাই কাথারিনার সাথে কথা বলতে বলতে হাটতে লাগলো আমি ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলতে লাগলাম। অনেক কিছু জানলাম অনেক কিছু জানালাম। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন একটা আইডিয়া না থাকায় আমাকে প্রচুর প্রশ্ন করল। আমি ও যথা সম্ভব উত্তর করে গেলাম।

বাংলাদেশ সম্পর্কে তার জানা বলতে দুটো জিনিস ছিল, এক, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস দুই, জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশন। ইউনুস প্রসঙ্গে যখন কথা বলছিল আমি মনে মনে হেসেছিলাম, কোথাকার কোন ডেন্টিস্ট তুমি বাংলাদেশ চেনো না অথচ ইউনুস চেনো। আর আমরা স্বদেশীরাই ইউনুসকে চিনতে পারলাম না। আফসোস। এরপর মা মেয়ের সাথে গেলাম এক সুপার শপে।

তাদের শখ ট্রেনে বসে রাশান শ্যাম্পেন পান করবে। তাই একটা রাশান ব্র্যান্ডের শ্যাম্পেন কিনল। এরপর গেলাম একটা ক্যাফে কাম বারে। সেখানে হালকা খাওয়া দাওয়ার সাথে বেজায় আড্ডা চলল। একটু পর পর সে কি হাসি।

উচ্চস্বরে প্রাণ খোলা হাসি। মোটামুটি উভয় পক্ষের জীবন বৃত্তান্ত, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স, ক্লাইমেট চেঞ্জিং এর ইম্পেক্ট এগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হল। ফটো সেশন হল। মাঝের থেকে কাজের কাজ হল আমি মনে মনে বলে ফেললাম কাথারিনাকে বিয়ে করবো। অসাধারণ একটা মেয়ে।

এটা অবশ্য নতুন কিছু না। প্রথম দেখায় আমার যে মেয়েকে ভালো লাগে তাকেই আমি মনে মনে বিয়ে করে ফেলি। হুজুগে বাঙ্গালীর হুজুগ বেশিক্ষণ থাকে না অবশ্য। যাই হোক। অনেক চমৎকার একটা সময় কাটলো।

আমার দেশ সম্পর্কে আমাদের সম্পর্কে অনেক উঁচু একটা ধারণা নিয়ে গেল নরওয়ের অপরিচিত দুজন মানুষ। অনেক কথা শেষে ট্রেনে বিদায় বেলায় সংক্ষেপে শুধু বলে গেল, অপ্রত্যাশিত ও অভিভূত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।