আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষণিকের ভাললাগা (Resubmit)



রবিবারের সকাল বেলা। গানের মিষ্টি সুরে ডুবে গেছে তামান্না। টেপ রেকর্ডারের ভলিউমটা খানিকটা বাড়িয়ে দিল। মনে পড়ে গেল স্বামীর হাত ধরে পথ চলার সেই সুখময় স্মৃতিগুলো। গান শুনতে শুনতে তামান্না হাসপাতালে যাবার জন্যে নার্সের ড্রেস পড়ে নিল।

ঠিক যেন ফ্লরেন্স নাইটিঙ্গেইল। দেখতে এক কথায় সুন্দরীও বটে, লম্বা, স্লিম ও ফর্সা, যাকে বলে বেহেস্তের হুর। ব্যধিতে আক্রান্ত এক বৃদ্ধাকে একদিন হুইলচেয়ারে করে কেবিনে ঢুকাচ্ছিল। সাজানো গোছানো কেবিন। সেই কেবিনে রয়েছে আর এক বৃদ্ধা রোগী।

তাঁর বিছানা জানালার পাশে, অন্যজনের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। দুজনের বয়স ষাটোর্ধ। দুজনের মধ্যে বেশ ভাবও গড়ে উঠেছে। দুজনের বিছানার পাশে ছোট্ট দু’টি টেবিলের ওপর একগাদা ওষুধ রাখল তামান্না। দুধসাদা রঙ্গের জানালার পর্দাটা কিছুটা সরিয়ে দিল।

বাইরে সোনা রোদ চিক চিক করছে। সূর্যের আলো ফিনকি দিয়ে কেবিনে ঢুকছে। জানালার পাশের বৃদ্ধা বাইরে তাকিয়ে বললেন, ‘বাহ্, কী সুন্দর বাচ্চারা পার্কে খেলছে। ’ দেয়ালের পাশের বৃদ্ধা বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, ‘তাই নাকি, আর কী দেখছো তাড়াতাড়ি বলো না আমায়?’ ‘ওরা খিলখিল করে হাসছে। ’ দেয়ালের পাশের বৃদ্ধার চোখ দুটো তোলপাড় করা আনন্দে চক চক করে উঠল।

তিনি বললেন, ‘কী অপূর্ব!’ জানালার পাশের বৃদ্ধা বাইরে তাকিয়ে উচ্ছসিত হয়ে বললেন, ‘আরে! শিশুরা যে ফুল কুড়াচ্ছে। ’ এদিকে তামান্না নিত্যদিনের মত দুই বৃদ্ধাকে ওষুধ খাইয়ে, পর্দা টেনে দিয়ে, ডিম লাইট জ্বালিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে। রোজকার টেনশন থেকে মুক্তি পাবার জন্যে হয়ত তামান্না এভাবে কাজে ডুবে থাকতে ভালবাসে। মা-বাবা হারিয়েছে সেই ছোট বেলায় যখন ক্লাস ফাইভে পড়ত। বড় মামা ছিলেন মানসিক দিক দিয়ে সত্যি একজন বিরাট বড় মাপের মানুষ।

মামার আদর যত্নে সে নার্সিং ডিগ্রী লাভ করতে সক্ষম হয়। তামান্নার জীবনে প্রেম এসেছিল চুপিসারে কিন্তু সেই সুখ পদ্ম পাতার পানির মত টলটলে। যাক্ সে সব কথা। আকাশ কুসুম ভেবে লাভ নেই। পরের দিন তামান্না ট্রলিতে খাবার নিয়ে কেবিনে ঢুকল।

জানালার পাশের বৃদ্ধা তামান্নাকে বললেন, ‘মা, পর্দাটা একটুখানি সরিয়ে দাও। ’ তামান্না তড়িঘড়ি করে পর্দাটা একটু ফাঁক করে দিল। দুই বৃদ্ধা আবার প্রাণবন্ত আড্ডায় মশগুল। এক পলকে বাইরে তাকিয়ে জানালার পাশের বৃদ্ধা বান্ধবীকে বললেন, ‘পার্কের বাগানে কী সুন্দর কমলা রঙ্গের গাঁদা ফুল বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে। তুমি কি ফুলের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছ?’ আবেগাপ্লুত বান্ধবী বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, গন্ধ পাচ্ছি, আচ্ছা ছেলেমেয়েরা পার্কে খেলতে এসেছে?’ ‘হ্যাঁ, ওরা খেলছে আর পাখির ডাকে মুখরিত পার্ক, কী অসামান্য দৃশ্য!’ কী দারুণ এনজয় করে দেয়ালের পাশের বৃদ্ধা অস্থির হয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, ওরা কি রঙ্গের জামা পড়েছে আর পাখিগুলো কী রঙ্গের?’ জানালার পাশের বৃদ্ধা অট্টহাসি দিলেন, ‘হা… হা … হা্…।

’ তারপর বললেন, ‘পাখিগুলো বাসন্তি রঙ্গের আর শিশুদের গায়ে রংবাহারি পোশাক। ’ কেবিনের এক কোণে দাঁড়িয়ে তামান্না নীরবে বৃদ্ধাদের আকর্ষণীয় কথোপকথন শুনছিল। হঠাৎ বুকের কাছটা কীরকম চিনচিন করে উঠল। খাবারের পাট চুকিয়ে সে দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে পড়ল। দেয়ালের পাশের বৃদ্ধা অভিভূত হয়ে বললেন, ‘বাগিচায় আর কি কি ফুল দেখা যাচ্ছে?’ জানালার পাশের বৃদ্ধা গুনগুন করে গান ধরলেন।

এরপর বললেন, ‘বেলি, জুঁই, গোলাপ আর ওগুলো মৃদু বাতাসে নাচানাচি করছে। ফুলগুলো একেবারে লা-জবাব!’ ‘তাই নাকি? এত্ত ফুল। ’ ‘গাছের পাতাগুলো কেমন হলদে হয়ে এসেছে। বুঝতে পারছো? পাতা ঝড়ে নতুন পাতা গজাবে তাই। ’ ‘ঝড়া পাতার লাল, হলুদ, বাদামী কার্পেট হবে, কী দারুণ দৃশ্য হবে।

ছেলেমেয়েরা এখন কি করছে?’ ‘ওরা বাহারি গাছের ছায়ার নীচে বসে খেলছে। ’ ‘হা…হা… হা…, ওরা মজা করছে, তাই না?’ ‘ঠিক তাই। ’ বান্ধবীকে গাজাখুরি গল্প শোনাতে গিয়ে জানালার পাশের বৃদ্ধা মুখ টিপে টিপে হাসছিলেন। জানালার বাইরে ছিল শুধুমাত্র একটা উঁচু ঘেরা দেয়াল। বৃদ্ধাশ্রমের জীবন হতাশার মেঘের মত ঘিরে ফেলেছিল এ দুজনকে।

দুদন্ড আনন্দে জীবন কাটলে জীবনী শক্তিকে সজীব করে তোলে। দেয়ালের পাশের বেডে শুয়ে অন্ধ বান্ধবীর মুড কি ফুরফুরে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।