আমাদের একটা মানুষের সমাজ লাগবে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার, একটি নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে, অথচ তারা দেশ পরিচালনায় সকল দলের সমান অংশগ্রহনের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এর ব্যাত্যয় ঘটেনি। ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের প্রভিশন তৈরী করে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন ১৯৯০ সালের ৬ই জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেটি স্বাধীনতার পরে মাত্র ষষ্ঠ ডাকসু নির্বাচন, যাতে জয়ী হয়েছিল ছাত্রদল (বি.এন.পি এর) সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের আমানুল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পর্যন্ত এই কমিটি বহাল থাকে এবং ওইদিন ডাকসুর এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।
এবং তার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি, এবং তার পর থেকে হলে হলে চর দখলের মত সিটের দখলদারি শুরু হয়, এবং তার পর থেকে ছাত্রদেরকে জোরপূর্বক ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেয়া শুরু হয় এবং তার পর থেকে নতুন ছাত্রদের, নবীন ছাত্রদের ভয়ংকর সব আত্মবিধ্বংসী মারামারিতে ঠেলে পাঠানো শুরু হয়। আর তার পর থেকে ছাত্রদের মেরুদন্ড যে বাকা হয়ে গেল তা আজ অবধি আর সোজা হয়নি তবে মাঝে মাঝে ছাত্রদের জমে থাকা ক্ষোভ স্ফুলিঙ্গ আকারে দেখা দেয় তবে সে স্ফুলিঙ্গ দ্রুত্মই এমনকি মুহুর্তেই মিইয়ে যায় সরকারী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রবল চোখ রাঙ্গানি চোটে। এই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনতন্ত্র চর্চার দশা।
স্বাধীনতার পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩ জন ছাত্র বিভিন্ন দলীয় কোন্দলে মারা গেছেন, একটা হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি । সর্বশেষ এ.এফ রহমান হলের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক মারা যান ২০১০ সালে।
এই ঘটনার কোন বিচার হয়নি এই হত্যাকান্ডে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তারা দিব্যি ক্যাম্পাসে সেই আগের মতই ঘুরে বেড়ান ,শুধু আবু বকর বেড়াতে পারেনা, সে নিরব নিস্তব্ধ বাকহীন চেয়ে আছে।
বেশ কয়েক মাস যাবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের সংখ্যাটা খুব কম হলেও একটা অত্যন্ত যৌক্তিক দাবিতে তারা মাঠে নেমেছেন।
ডাকসু নির্বাচনে কয়েকবার ই লেজুড়বৃত্তিকারি ছাত্র সংগঠন জয়লাভ করেছে কিন্তু তবুও তারা ছিলেন জবাবদিহিতার আওতায় এখনকার মতন যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা তাদের ছিলনা। তবে অনস্বীকার্য যে, ছাত্রদের পক্ষের শক্তিকেই শেষত: ছাত্রদের ম্যান্ডেট অর্জন করতে হবে নতুবা লেজুড়বৃত্তিকারি ছাত্র সংগঠনগুলো পুনরায় এবং বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করবেই ফলত: ছাত্ররা আবার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মঞ্চের এই আন্দোলন আর সব আন্দোলনের চেয়ে একটা আলাদা চেহারা আছে যেটা খুবই আশাব্যান্জক, এই আন্দোলন অনেক দিন ধরে চলছে, সম্ভাব্য সকল গণতান্ত্রিক কর্মসুচি তারা পালন করেছেন এমনকি আইনী লড়াই তারা চালিয়েছেন এমনকি আদালতে তাদের দাবির পক্ষে রায়ও পেয়েছেন।
এই গোটাকয়েক মুষ্টিবদ্ধ হাতই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, যে লুটতন্ত্র পরিবারতন্ত্রের যাতাকলে আমরা পিষ্ট তা থেকে রক্ষার উপায়,রাস্তা দেখাতে পারেন এই তরুনেরা। পরিবর্তন অবিশ্যম্ভাবী আর মানুষ হিসেবে বেচে থাকতে চাই বলেই পরিবর্তন অনিবার্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।