কক্সবাজারে ‘ভূঁয়া’ কাগজপত্রের আশ্রয় নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে প্রতারণা করে বিরোধপূর্ণ জমিতে সশস্ত্র আনসার ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলাজুড়ে জমির দাম বৃদ্ধির সুযোগে একশ্রেণীর ভূমিদস্যূ চক্র এই অপকর্ম করে যাচ্ছে। ওই চক্রটি ভূঁয়া কাগজপত্র সৃজন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি খাস জমি জবরদখল করে। পরে ওই জমি রক্ষায় সরকারি বাহিনী আনসার-ভিডিপির সদস্যদের ‘ভাড়া’য় ব্যবহার করে। অথচ কোন বিরোধপূর্ণ ও মামলা চলমান আছে এমন জমিতে আনসার সদস্য মোতায়েনের কোন সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগে জেলাজুড়ে জমির দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলের প্রতিটি জমি কয়েকদফা বেচাকেনা হয়েছে। এই সুযোগে জমির দালাল শ্রেণী যেমন বেড়েছে, তেমনি ‘ভূমিদস্যূ’ চক্রও বেড়েছে।
সূত্র মতে, ওই সব ‘ভূমিদস্যূ’ চক্র ভূঁয়া কাগজপত্র সৃজন করে অন্যের জমি জবর দখল বেদখল করে যাচ্ছে। এনিয়ে কক্সবাজারে প্রায় প্রতিনিয়তই হামলা, সন্ত্রাস ও মামলার ঘটনা ঘটছে।
‘ভূমিদস্যূ’ চক্রের অনেকেই জেলার আনসার-ভিডিপি বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে প্রতারণা করে ‘মিথ্যা’ অঙ্গীকারনামা দিয়ে দখলকৃত জমি রক্ষায় সশস্ত্র আনসার সদস্যদের ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ইলিয়াছ সওদাগর নামের একজন ‘ভূমিদস্যু’ তেমনই ‘বিরোধপূর্ণ’ জমিতে নিরাপত্তার নামে ‘মিথ্যা’ ও প্রতারণামূলক অঙ্গীকারনামা দিয়ে ১০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য অনুমোদন নিয়েছেন। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর নজির হোসেন ঘোনা এলাকায় প্রায় এক একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি জবরদখল বজায় রাখতে ওই আনসার সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ইলিয়াছ সওদাগর সন্ত্রাসি দিয়ে ওই জমি দখল করার পর ‘বিরোধপূর্ণ’ সেই জমি পাহারা দেয়াচ্ছেন ১০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্যকে।
অভিযোগ রয়েছে, ইলিয়াছ সওদাগর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আনসার বাহিনীর বর্তমান জেলা কমান্ড্যান্টকে মিথ্যা ও ভূঁয়া ‘অঙ্গীকারনামা’ দিয়ে সেই জমিতে আনসার সদস্য মোতায়েনের অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন।
বর্তমানে ওই জমির মালিকরা বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আনসার সদস্যদের বাধার মুখে নিজেদের জমিতে যেতে পারছেন না। যার নামে ‘নজির হোসেন ঘোনা’ সেই মরহুম নজির হোসেনের মেজো ছেলে এস এম নুরুন্নবীর তৈরি করা একটি ‘ভূঁয়া’ দলিল নিয়ে ‘ভূমিগ্রাসি’ ইলিয়াছ সওদাগর এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক’ পরিচয়দানকারি এস এম নুরুন্নবী পৈত্রিক সম্পত্তির তার অংশের চেয়েও অধিক জমি ৩ জন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। নিজের অংশের জমি বিক্রির পরও তার অপরাপর ভাইদের জমি ভূমি অফিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের নামে নামজারি খতিয়ান করিয়ে নেন। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই ‘ভূঁয়া’ খতিয়ান বাতিল করার জন্য আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
অথচ ‘ভূমিগ্রাসি’ ইলিয়াছ সওদাগর সবকিছু জানার পরও সেই ‘ভূঁয়া’ খতিয়ানের জমি কিনে সন্ত্রাসি দিয়ে দখল করেন। দখলের পর মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ‘বিরোধপূর্ণ জমি নয়’ মর্মে মিথ্যা অঙ্গীকারনামা দিয়ে সেই জমির নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ১০ জন আনসার সদস্য অনুমোদন করিয়ে নেন। প্রায় দুই বছর ধরে ‘বিরোধপূর্ণ’ জমিতে সশস্ত্র আনসার সদস্যরা পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র মতে, ইলিয়াছ সওদাগরের দখল করা ওই জমির প্রকৃত মালিক মহিউদ্দিন মানিক, মোহাম্মদ ইদ্রিস, নজির হোসেনের স্ত্রী গোল চম্পা ও হাজী আবুল বশর। এদের মধ্যে ‘ভূঁয়া’ খতিয়ান সৃজনকারি এস এম নুরুন্নবীই ওই জমি মোহাম্মদ ইদ্রিস ও আবুল বশরের কাছে বিক্রি করেছিলেন।
এখন তারা পথে পথে ঘুরছেন।
আনসার ও ভিডিপি সূত্র মতে, কোন জমিতে আনসার সদস্য মোতায়েনের অনুমতি নেয়ার আগে সেই ‘সম্পত্তি / প্রতিষ্ঠান / জায়গাটি নিষ্কন্টক ও কোন ধরণের বিরোধপূর্ণ নহে বা কোন আদালতে মামলা চলমান নহে’ মর্মে অঙ্গীকারনামা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, আনসার মোতায়েনের পরও যদি সেই ‘সম্পত্তি / প্রতিষ্টান / জায়গাটি নিয়া যদি কোন ধরণের বিরোধ দেখা দেয় বা কেহ প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে মামলা করেন বা কোন পক্ষ হইতে আনসার মোতায়েনের প্রেক্ষিতে আপত্তি উপস্থাপিত হয়’ তবে তাৎক্ষনিক আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু নজির হোসেন ঘোনার ‘বিরোধপূর্ণ’ ওই জমিতে আনসার মোতায়েনের ব্যাপারে লিখিত আপত্তি তুলেন ক্রেতা সূত্রে জমির মালিক হাজী আবুল বশর। তাছাড়াও ওই জমি নিয়ে কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ (প্রথম আদালত) আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে।
তারপরও দীর্ঘ দুইবছর ধরে সেই ‘বিরোধপূর্ণ’ জমিতে সরকারি বাহিনী ‘আনসার-ভিডিপি’র সশস্ত্র ১০ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
হাজী আবুল বশর দাবি করেন, তিনি জেলা কমান্ড্যান্টের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
সর্বশেষ কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালী ইলিয়াছ সওদাগরের দখল করা জমিতে আনসার সদস্য মোতায়েনের ব্যাপারে আপত্তি তুলে আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্টের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন।
তাদের অভিযোগ, ইলিয়াছ সওদাগর তার দখল করা জমিতে আনসার সদস্য মোতায়েনে যে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন তাতেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। নিজে অঙ্গীকারনামায় দস্তখত না করে তার স্ত্রী মর্জিনা আকতারের নামে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন।
আনসার ও ভিডিপির কক্সবাজার জেলা কমান্ড্যান্ট শেখ মনিরুজ্জামান জানান, সশস্ত্র আনসার নিয়োগের পর দু’টি জমির ব্যাপারে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। পাইওনিয়ার হ্যাচারি ও হাসান রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। ইলিয়াছ সওদাগর আম-মোক্তারনামামূলে হাসান রিয়েল স্টেটের জমি পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, ‘পাইওনিয়ার হ্যাচারির জমি নিয়ে অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তেমন কোন অভিযোগে প্রমাণ মেলেনি।
তবে অভিযোগকারি আদালতে গিয়েছেন। আদালতের আদেশ পাওয়া গেলে আনসার ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে। ’
শেখ মনিরুজ্জামান জানান, হাসান রিয়েল স্টেটের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করতে শুরু করেছে।
তবে হাসান রিয়েল স্টেটে আনসার অনুমোদন পাওয়ার সময় ইলিয়াছ সওদাগরের স্ত্রী মর্জিনা আকতার অঙ্গীকারনামায় দস্তখত করার কথা স্বীকার করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।