সদ্যই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে গেছেন। জন্মশহর কক্সবাজারে মমিনুল হকের কদরটা তাই এবার বেশ অন্যরকমই।
চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ করেই কক্সবাজার উড়ে গেছেন হালের এই আলোচিত ক্রিকেট তারকা। হাতে পাওয়া সংক্ষিপ্ত ছুটিটা যতটা সম্ভব কাজে লাগানোই উদ্দেশ্য। কালই তাঁকে ধরতে হবে ঢাকার বিমান।
২১ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টের আগে সময় যে নেই বললেই চলে।
আর দশটা মানুষের মতোই ঈদের সকালটা কেটেছে মমিনুলের। কক্সবাজার শহরের ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ সেরেই মেটাতে হয়েছে ভক্তদের আবদার। সবাই একটিবার কোলাকুলি করতে চান তাঁর সঙ্গে। চাইবেনই-বা না কেন, এ মুহূর্তে তিনি যে কক্সবাজারের মানুষের বড় গর্বের ধন।
ঈদগাহ ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বাসায় ফিরেই অতিথি আপ্যায়নে মেতেছিলেন মমিনুল। আয়োজন ছিল গরুর মাংস আর চালের রুটি। আরও ছিল পায়েস, সেমাই। ঈদের দিনটি পরিবারের সঙ্গেই কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর।
পরিবারের সঙ্গে আরও কিছুদিন থাকতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু উপায় নেই।
কালই ঢাকায় ফিরতে হবে তাঁকে। শুরু করতে হবে প্রস্তুতি। ঢাকা টেস্টেও যে চট্টগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
এবারের ঈদটিকে একটু অন্যরকমই মনে হচ্ছে মমিনুলের। তবে অন্যরকম এই ঈদের কারণ যে নিজের অসাধারণ পারফরম্যান্স, সেটাও মাথায় রাখছেন তিনি, ‘এবার দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পেরেছি, সে জন্য মানুষের ভালোবাসাও বেশ পাচ্ছি।
দ্বিতীয় টেস্টে মানুষ আরও বেশি কিছু আশা করছেন। তাঁরা এ জন্য দোয়া করছেন। এটাই আমার আসল পাওয়া। ’
সাকিব আল হাসানের বদলি হিসেবে মাত্র ১০ মাস আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে স্কোয়াডে ঠাঁই পাওয়া মমিনুল এখন টেস্ট স্কোয়াডেরও সদস্য। চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে অভিষেক শতকের দেখা পান।
স্পর্শ করেন ১৮১ রানের মাইলফলক। তার এই কৃতিত্বে কক্সবাজারের মানুষ উত্ফুল্ল। ঈদের দুই দিন আগে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে উত্সাহী কিশোর-যুবকেরা মমিনুলের ছবি নিয়ে বের করছে আনন্দ মিছিল, চলছে আনন্দ-উল্লাস। বিভিন্ন সংগঠন ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। তবে মাত্র ১৯ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে না পারায় একটু আফসোস সবার মনে।
মমিনুল হকের বাড়ি কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকায়। বাবা নাজমুল হক চাকরিজীবী। মা মালেকা জয়নাব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তবে তিনি অসুস্থ। তাঁকে প্রায় সময়ই শয্যাশায়ী থাকতে হয়।
তবে ছেলের খেলা থাকলে তিনি হুইলচেয়ারে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকেন। আর আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া চান ছেলের জন্য। মমিনুলের খেলা দেখতে সব সময়ই উদগ্রীব কক্সবাজারবাসী। তাঁর ১৮১ রানের ইনিংসটি ছিল ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’।
চট্টগ্রাম টেস্টে মমিনুলের খেলা সম্পর্কে মা মালেকা জয়নাব বলেন, ‘সৌরভ (মমিনুল) যখন ব্যাট করছিল, তখন ভালোই লাগছিল।
পাশাপাশি টেনশনও হচ্ছিল। তখন কেবল দোয়া পড়ছিলাম—ছেলের যেন খারাপ কিছু দেখতে না হয়। ১৯ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরিটি মিস করায় তাঁর মনটা একটু খারাপ হলো। ’ তবে সার্বিক পারফম্যান্সে তিনি খুশি।
বাবা নাজমুল হক বলেন, ‘মমিনুল শুধু আমাদের সন্তান নয়, সে পুরো কক্সবাজারবাসীর সন্তান, দেশের সম্পদ।
’
চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ করেই রাতে (গত সোমবার) বাড়ি ফেরেন সৌরভ। গভীর রাতে তিনি যখন গাড়ি থেকে নামেন, দেখেন, বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁর অপেক্ষায়। সবার হাতে হাতে ফুল। একে একে সবাই তাঁকে বরণ করে নেন। এরপর থেকে বাড়িতে লেগে আছে ভক্তকুল আর শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়।
মঙ্গলবার সকালে মমিনুল যান তাঁর চিরচেনা কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে। সেখানে সাবেক সতীর্থরা তাঁকে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন।
ছোটকাল থেকেই ক্রিকেটের প্রতি মমিনুলের ঝোঁক ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০০২ সালের শেষ দিকে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট খেলায় অংশ নেন সৌরভ। এ সময় বিকেএসপির প্রশিক্ষক নাজিমের নজরে আসেন তিনি।
এরপর নাজিমের পরামর্শে মমিনুল ভর্তি হন বিকেএসপিতে। যদিও প্রথম বছর উচ্চতার কারণে সৌরভ বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ পাননি। পরের বছর ভর্তি পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সৌরভ (মমিনুল) এখন শুধু কক্সবাজারের নয়, সারা দেশের গর্ব। তার খেলা দেখতে টিভির সামনে হাজারো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
দরিদ্র লোকজনও রাস্তার পাশে ইলেকট্রনিকস দোকানের সামনে বেশ ভিড় করেন। সে ক্রিকেট দিয়েই কক্সবাজারের মুখ উজ্জ্বল করুক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।