আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের একজন রূপান্তরিত সংশয়বাদী ।।

আমি জানি আমি জানি না বাংলাদেশের একজন রূপান্তরিত সংশয়বাদী । । বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ কোন মুসলিম মরিস বুকাইলির ‘ কোরান বাইবেল ও বিজ্ঞান’ বইটি পড়েন নাই এমন কমই আছেন । বইটির বাঙ্গলা রূপান্তর করেছিলেন আখতার-উল-আলম ,ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক যিনি পরে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০০ সালে পাঁচজন শ্রেষ্ঠ মুসলিম সাংবাদিকের একজন হিসেবে সৌদি ট্রিবিউন কতৃক পুরস্কৃত হন ।

তার ছেলে ম, গোলাম রব্বানী, জুরীখ কর্পোরেশন এর ইনভেস্টম্যান সুপারভাইজার, স্ত্রী হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট । তাদেরই পুত্র,অর্থাৎ আখতার-উল-আলমের পৌত্র,সিরাতুল মুস্তাকিম (জন্ম ১লা আগস্ট,১৯৯২) গত ২৬শে জুন,২০১২ ,একটি ইংরজি ব্লগে (ISLAM WATCH) ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে নিজেকে সংশয়বাদি বা AGNOSTIC বলেছেন । পারিবারিক পরিচয়টি তিনি নিজেই দিয়েছেন । তারপর নিজ বয়ানে বলেন- (এই অংশটুকু মুস্তাকিমের ইংরেজিতে লেখাটির অনুবাদ-} “আমি শেষ পর্যন্ত সব বিশ্বাস, ঈশ্বরের(আল্লাহর) হারিয়ে একজন বিশ্বাসির বদলে এখন সংশয়বাদী মুক্তচিন্তক হয়েছি । ’ ‘-আমি একজন বিশ্বাসী মুসলমানই ছিলাম ।

১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশে এসে ‘দি বৃটিশ স্কুলে’ ভর্তি হই । আমি ভালো ক্বারী ছিলাম এবং স্কুলের শুরুতে কোরাণ তেলাওয়াতের জন্য আমাকেই নির্বাচন করা হয়। নিয়মিত সব কিছু পালন করতাম। । বাবা ও মা ধর্মপ্রাণ ছিলেন এবং আমাকে সব সময়ই ইসলামের পথে চলার উপদেশ দিতেন ।

কিছুদিন পর ড. জামান বলে এক মৃত্তিকা বিজ্ঞানীর(UNDP’র কৃষি বিভাগে কর্তব্যরত) সাথে পরিচয় হয় । তার সাথে নানা বিষয়ে কথা বলতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন- ‘-তুমি কি লক্ষ্য করেছ আজকাল রাজনীতিকেরা প্রায় সবাই মক্কায় হজ করতে যায়? এটি ভোটারদের আস্থা অর্জণের জন্য, যে তিনি একজন হাজী - তাই বিশ্বাস করে আমাকে ভোট দিতে পার । ’ তারপর আমার ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে জিঙ্গেস করলেন । আমি শুধু বললাম- ‘পাঁচবার ওমরা পালন করেছি এবং সময়ে সময়ে নামাজ পড়ি ।

শুনে তিনি বললেন- “সত্যিই !” তারপর আশ্চর্য হয়ে বললেন-‘ তুমিও ওই ‘কালো-বাক্স’ ভ্রমন করেছ ? তাহলে তো তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করতে হয় । আমি ওই ধরনের মানুষদের সাথে কথা বলি না, যারা কালোবাক্স ভ্রমন করে এবং বিশ্বাস করে ওই সাইন্টিফিক রূপকথার গ্রন্থে- যার প্রথম অক্ষর ‘ক’ বা ‘ব’ । তারপর থেকেই আমি অন্ধ বিশ্বাসের বদলে আমি কিছুটা স্বাধীনভাবে সবকিছু চিন্তা শুরু করলাম। -সত্যি কি ক্বাবা শুধুই একটি কালো বাক্স ? যদি না ,তাহলে কি সেটা ? যেই কালো পাথরটির দিক করে মুসলমানরা নামাজ পড়ে, এবং চুমা খায় -সেটি তো একটি মেটেরাইট,ভূপতিত উল্কাপিন্ড মাত্র । -ঈশ্বর য়দি সত্যি অতই ক্ষমতাসম্পন্ন,-যিনি বিশ্ব ব্রম্মান্ড ,তারামন্ডল বানিয়েছেন তিনি কেন আমাকে একটি পুস্তক পাঠালেন যা আমি বাজারেই কিনতে পারি ।

বইটা তো কোন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জিনিষ নয় । অবশ্য কেউ যদি ধর্মীয় সংস্কারসম্পন্ন হয় তার মধ্যে অনেক কিছুই পেতে পারেন। -তিনি কেন আমার মগজের মধ্যে বিশ্বাস গ্রোথিত করে দিলেন না যে তিনি আছেন ,এক এবং অদ্বিতীয় -যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন ? -তিনি যদি অসৃষ্ট,তবে বিশ্ব ব্রম্মান্ডও কি শুন্য থেকে বা বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্ট হতে পারে না ? -যদি আমাকে যদি একটি খালি বোতল দেখিয়ে বলা হয় এর মধ্যে পানি আছে,তারপর খুলে দেখি ওর ভিতরে একটুকরো কাগজে লিখা- “কোন পানি নাই, কিন্তু h20 আছে, এবং এই বোতলটি হচ্ছে বার্তাবাহকমাত্র । ” আর তুমি যদি বিশ্বাস না কর, আমি তোমাকে জমিয়ে বরফ করবো ! ঈশ্বরের মনোভাবটিও কি এরকম নয় ? -কোরান মতে কেবল আল্লাহর অনুসারিরাই বেহেশ্ত যাবে । ভালো কথা, কোরান তো মাত্র ১৪০০ বছর আগেকার –তার আগে তো কেউ কোরান বা আল্লাহ সম্পর্কে জানতো না ।

তবে সেটা কার দোষ ? -কোরান বলছে –“তোমরা ইহুদি ও খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করিওনা ”৫:১,। আপনি কি আপনার সৃষ্টকে মানুষের মন পড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন ?কি করে বুঝবো কে অমুসলিম আর কেই বা অধার্মিক। কারও গায়ে তো লিখা নাই ? মুসলিম ছেলেদের অবশ্য খৎনা দেখে বলা যায়, কিন্ত সেটাও তো ডাক্তাররা করেন,ঈশ্বর নয়। -শিশু থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত পিতা মাতা বা সমাজ তাদের সব শিখিয়ে দেয়, কারা কোন ঈশ্বরকে মানবে বা মানবে না, কোন নবী বা বার্তাবাহককে শ্রদ্ধা করবে বা করবে না । এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে কারও পক্ষে স্বাধীন চিন্তা করা সম্ভব কিভাবে ? তাদের কোন চয়েস নাই ।

তারা এমন কি ‘কালো বাক্সের’ বাইরে কোন কিছু চিন্তাই করতে পারেনা । তার ভেতরেই চিরকাল থাকতে হবে । -পিতামাতার ক্ষেত্রে ,তারা যদি সন্তানকে বলে- ‘আমার কথা না শুনলে তোমাকে মারবো’- সেটি সঠিক নয়, অপরাধ বলেই গন্য করা হয় ,অনেক দেশে আইন আছে। কিন্তু মা যদি বলে-‘ আমার কথা না শুনলে ঈশ্বর তোমাকে নরকে আগুনে পুড়াবে’- তখন কিন্তু আমরা বলি -এইটি পবিত্র বাণী। কি হিপোক্র্যাটিক আচরণ ।

এইটা কি ফানি নয় ? শেষে বলি-আমি আমার ঈশ্বর সম্পর্কীয় সমস্ত বিশ্বাস হারিয়ে এখনএকজন সংশয়বাদী, স্বাধীন চিন্তক। আর হ্যা , এও বলি -নাস্তিকরা কিন্তু প্রমান করতে পারবেননা যে ঈশ্বর নেই ,তাদের আছে কেবল যৌক্তিক প্রমান। অন্যদিকে বিশ্বাসীরাও ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমান দিতে পারেননা, তাদের কাছে তাদের পবিত্র গ্রন্থ ছাড়া কিছু নাই । তারা নির্ভর করে পর্বত প্রমান দার্শনিক ও তথাকথিত সাইন্টিফিক যুক্তি। সবই খুবই কনফিউজিং ।

তাই একজন মডারেট সংশয়ী স্বাধীনচিন্তকই ভালো । যদি ডায়াগ্রাম আঁকা যায় যার একদিক নাস্তিকতা অন্যদিকে ধার্মিকতা, তবে তার ঠিক মাঝখানে হচ্ছে সংশয়বাদীতা । আমার বিশ্বাস সেখানে । নাস্তিক—সংশয়বাদী—ধার্মিক । এই ডায়াগ্রামটির মধ্যের অবস্থানকে যিনি বিশ্বাস করেন তিনিই নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ।

” -বয়ানটি এখানেই শেষ। মাত্র কুড়ি বছরের পাঁচবার ওমরাহ করা এবং রক্ষনশীল পারিবারিক ধর্মীয় পরিবেশের ভেতর থেকে তার এই উপলব্ধি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । তার বয়ান মোতাবেক, কোন প্রচারণা নয় ,কোন সংগঠন বা দল নয়, সম্পূর্ন নিজের সংবেদনশীল অনুসন্ধিৎসু মন থেকে তার এই উপলব্ধি । কেবল একজন অনুঘটকের নাম ও তার সাথে কিছু কথোপকথন এর বিবরন আছে । কিন্তু ধর্ম বিশ্বাস কি এভাবেই হঠাৎ বদলে যেতে পারে? তাও এত অল্প বয়সে? ধর্ম বিশ্বাস কি পরিবেশগত অথবা জিনগত ।

নাকি এর অন্য কোন মোজেজা আছে ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.