বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
গাছের যেই ফলটা সবচে মিষ্টি, সেখানেই নাকি ঢিল পড়ে বেশি। সর্বাবস্থায় এই কথা কতটা খাটে তা জানিনা, তবে ইসলামের ক্ষেত্রে তার পরিমাণ শতভাগ। ইসলাম বিদ্বেষীরা (Also Known As Atheists) তাদের সকাল দুপুর রাতের খাবারের কথাও মনে হয় এতটা ভাবেনা, যতটা ইসলামের নামে কুৎসা রটনার পিছে তাদের ভাবনার ঘোড়া ছোটায়।
তাদের এই অহেতুক পণ্ডশ্রমের একটাই কারণ আমার অক্ষিগোচর হয়েছে, এবং সেটা হল ইসলাম সম্পর্কে খুব Upper and High level এর অজ্ঞতা। তারা হয়তো আল কুরআনের বা হাদীসের একটা আয়াত দেখলো, যেটা আপাতদৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য হলনা, সাথে সাথেই খ্যামটা নাচতে শুরু করে আর ব্লগ ফেসবুকে পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে নিজেকে ৮ম প্রজাতির বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষ প্রমাণ করে মনিটরের সামনে হাই তুলে।
তাদের অসংখ্য ম্যা-ম্যা ধ্বনির একটি হল ইসলামে নাকি নারীদের একদম রাস্তার কুকুরের মত মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
কেন ভাই?
কারণ ইসলামে বলে কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে তাকে ৪ জন সাক্ষী আনতে হবে তার ধর্ষণ প্রমাণ করার জন্য। এটা কি সম্ভব নাকি? ইসলাম তো মেয়েটাকে নিয়ে মশকরা করছে। ধর্ষককে ছেড়ে দিচ্ছে। সাক্ষী আনতে না পারলে মেয়েটাকে দোররা মারছে!!!
ওরে বাপরে! কী ভয়ানক ব্যাপার রে! প্রথম ধাক্কায় যে কোন সাধারণ মুসলিম ধাক্কায়িত হবেন স্বাভাবিক।
কিন্তু আসলেই কি তারা সত্যি বলছে? নাকি আপনার অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদের স্বভাব সুলভ মিথ্যাচার করছে?
পৃথিবীর কোন মানুষ আজ পর্যন্ত কোরআন বা হাদীসে এই কথা খুঁজে পায়নি যে ধর্ষিতাকে ৪ জন সাক্ষী জোগার করতে হবে। না রে ভাই। আমি নিজেও পাইনাই। কেউ-ই পায়নাই। তারা কোথায় পেল তা তারাই ভালো জানেন।
আমাদের নবী, সাহাবা, তাবেয়ী, ইমাম, আলেমদের চাইতে তো তারা বেশি ইসলাম বুঝে। হুম। তারা সর্বজ্ঞানী Apes.
আসলে সত্য কী?
সত্য হল ধর্ষিতার ৪ জন সাক্ষী কখনোই লাগেনা। এটা একটা হাস্যকর অভিযোগ। একটা সার্টিফাইড ডাহা মিথ্যা কথা।
কোন মেয়ে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেই তা সাথে সাথে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়। ৪ জন সাক্ষীর যে কাহিনী, তা হল “জিনা”কারীর ক্ষেত্রে, ধর্ষিতার ক্ষেত্রে নয়।
আল কুরআনের সূরা নূরের ৪ নাম্বার আয়াতে বলা আছে-
যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে (ব্যাভিচারের) অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।
ধরুন আপনি আর অন্য একজন নারী হয়ত পরিচিত।
আপনারা দুই জনই মুমীন। কিন্তু হঠাত একদিন শুনতে পেলেন কেউ একজন, ধরুন জনাব X আপনাদের নামে অভিযোগ করলো আপনারা জিনা করেছেন। অর্থাৎ, illegal physical relation. সেক্ষেত্রে জনাব X-কে ৪ জন সাক্ষী জোগাড় করতে হবে, যেই সাক্ষীরা আদালতে এই কথা বলবে, যে আপনারা দুইজন illegal physical relation স্থাপন করেছেন। যদি জনাব X এই চারজন সাক্ষী আনতে পারেন, তবেই এটার বিচার শুরু হবে। যদি তিনি তা করতে অসমর্থ হন, তবে আপনি আর ওই নারী দুজনই অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
৪ জন সাক্ষীর MYTH এর সমাপ্তি এখানেই। ধর্ষণের কথা তো এখানে বলাই নেই!!
এখন কথা হচ্ছে কোন নারী যদি ধর্ষিত হন, তিনি কী করবেন?
তিনি অবশ্যই ধর্ষকের বিরুদ্ধে বিচারকের নিকট অভিযোগ করবেন। তার ৪ জন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। কেন নেই?
কারণ ইসলামে শাস্তির বিধান ৩ প্রকারের -
১ – হুদুদ (Fixed punishment by divine law)
২ – কিসাস-ও-দিয়াত (Retaliation and bloodmoney)
৩ – তা-জিরাত (discretionary punishment)
হুদুদ হল সেই সব বিষয়ের শাস্তি, যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত। এগুলো হল:
ব্যাভিচার, মিথ্যা অভিযোগ, চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান, ইসলাম ত্যাগ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি।
কিসাস-ও-দিয়াত হল হত্যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের শাস্তির বিধান।
এই দুই ক্ষেত্রেই ধর্ষণ অনুপস্থিত। তাহলে ধর্ষণের শাস্তি নির্ধারিত হবে শেষ উপায়ে। অর্থাৎ তা-জিরাত এর মাধ্যমে। ইসলাম বিরোধী যে কোন অপরাধের বিচার তা-জিরাত এর মাধ্যমে করা হবে।
এবং তা-জিরাত পদ্ধতিতে বিচারকের ইসলামি জ্ঞান ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে।
অতএব, তা-জিরাত অনুসারে, প্রথমে অভিযোগটির ভিত্তি দেখা হবে, এরপর মেডিক্যাল পরীক্ষা থেকে শুরু করে আধুনিক সকল প্রকার উপায়ে যথাযথ তদন্ত করা হবে। তদন্তে যদি ধর্ষিতার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে ধর্ষকের শাস্তি হবে।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, যে ধর্ষিতা যদি সত্যিই ধর্ষিত হয়, তবে কোন অবস্থাতেই তাকে শাস্তি দেয়ার বিধান ইসলামে নেই। নেই।
নেই।
পরিশেষে আমি ইসলাম বিদ্বেষীদের (মতান্তরে নাস্তিক) একটি উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই। আপনারা ইসলামকে নিয়ে প্রশ্ন করবেন করুন। কিন্তু কুৎসা রটানোর চেষ্টা করে কী লাভ? কুৎসা রটানোর ইচ্ছা যদি এতই খোস-পাঁচড়ার মত গায়ে লেগে যায়, তবে বুদ্ধিমানের মত আগে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানার চেষ্টা করুন। কোথাও একটা লেখা বা আয়াত দেখেই তার ব্যাখ্যা না বুঝে গজমূর্খের মত “হই হই আমি তো বলে বিরাট কিছু” বলে ওরাং ওটাং এর মত লাফাবেন না।
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।