আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ার কাজল থেকে......

মুক্ত মন....সারাক্ষণ ........বাইরে ফকফকে জোছনার আলোয় ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটছে বিলু- এমন সময় তাদের বাড়ির প্রবেশ পথে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পায় সে। একজন মানুষ ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে আসে। চাঁদের আলোয় মানুষটিকে স্পষ্ট চিনতে পারে বিলু। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। তার সামনে, হাত তিন-চারেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে মানুষটি।

সে হারুন। হারুনকে দেখে কোলের ছেলে মাটিতে পড়ে যাবার উপক্রম হয় বিলুর। সমস্ত শরীর জুড়ে কেমন যেন একটা শিহরণ জাগে, মুখে কথা ফুটে না তার। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে সে। আজ কতো দিন পর হারুনের সাথে দেখা তার।

‌'কেমন আছস, বিলু?' বিলুর সামনে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাই জিজ্ঞেস করে হারুন। কথার জবাব দেয় না বিলু। মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে সে। চোখ দু'টি জলে ভরে আসে তার। মনে মনে ভাবে সে, দুদিন আগে চলে যাওয়াই ভালো ছিল।

তাহলে আজ এভাবে হারুনের মুখোমুখি হতে হতো না তাকে। দাঁত দিয়ে যথা সম্ভব ঠোঁট কামড়ে ধরে অশ্রু নিবারণের বৃথা চেষ্টা করে বিলু। কিন্তু অশ্রু যেন আর বাধা মানে না। টপ টপ করে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল। 'ভালো।

' মাথা নিচু করেই আস্তে করে বলে বিলু। হারুণ এগিয়ে বিলুর কোল থেকে তার ছেলেকে নিজের কোলে টেনে নেয়। এতক্ষণে ঘুমিয়ে ছিল ছেলেটি। হারুনের স্পর্শ পেয়ে জেগে ওঠে। কোমল দৃষ্টি দিয়ে হারুনের মুখের দিকে তাকায় সে।

হারুন আদর করে ওর চোখে-মুখে অসংখ্য চুমো খেতে শুরু করে । এ যে বিলুর সন্তান! তার ভালোবাসার বিলু। তারপর বুকের সাথে একেবারে মিশিয়ে ধরে ওকে। ছেলেটিও ভালোবাসার আবেশে হারুনের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে। যেন কত জনমের বন্ধন দুজনের।

'তুমি কেমন আছো, হারুন ভাই?' চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে বিলু। 'ভালো, অনেক ভালো। ' একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে হারুন। আপন মনে খানিকটা হাসে হারুন। তারপর বলে,- বিয়া কইরা ফালাইলাম; আর কতোকাল একলা থাকুম ক দেহি? জবাবে কিছুই বলে না বিলু।

তার বুকের ভেতরটা কে যেন হাতুড়ি দিয়ে উপর্যপুরি পিটিয়ে যাচ্ছে। হায় খোদা, এমন দিনও কি কপালে লেখা ছিল তার? 'কি কস বিলু, ভালো করছি না?' বিলুকে নিরুত্তর দেখে পুণরায় জিজ্ঞেস করে হারুন। 'হু'। জবাব দেয় বিলু। 'জানস বিলু, তোর বিয়ার পর পাগরের মতো হইয়া যাই আমি।

কিছুই ভালো লাগতো না আমার। তারপর একদিন বাড়ি ছাড়লাম। একবার ভাবছিলাম, দুনিয়াই ছাইড়া যামু। কিন্তু তা আর পারলাম না রে, দুনিয়া ছাড়া সহজ কাম না। সেই দিন যদি দুনিয়া ছাইড়া যাইতাম, আইজ কি তোর লগে আর দেখা হইতো আমার? ক, হইতো দেখা?' 'কই আছিলা এতদিন?' 'নদীতে।

' জলেভারা চোখ তুলে তাকায় বিলু। রাজ্যের সব বেদনা সব কষ্ট বুঝি আজ চোখের জল হয়ে ঝরে পড়ছে তার। 'বিশ্বাস হয় না? আমি নদীতেই ছিলাম। ' বিলুর চোখে চোখ রেখে বলে হারুন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার মাথা নিচু করে বিলু।

একখণ্ড ধুসর বর্ণের মেঘ এসে কিছু সময়ের জন্য আড়াল করে দেয় চাঁদটাকে। চাঁদ আড়ালে যাবার সাথে সাথে জোছনাও কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। তবে বেশিক্ষণ এ অবস্থায় থাকা হয়নি চাঁদের। খানিক পরেই আবার মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে ঘিয়ে রঙের জোছনায় ভরিয়ে তুলে চারদিক। 'ছেলের নাম কী রাখছস, বিলু?' জিজ্ঞেস করে হারুন।

'হাছান। ' 'হাছান?' 'হু, তোমার নামের প্রথম অক্ষরের লগে মিলাইয়া রাখছি। ' 'নাম কে রাখছে, তুই?' 'হু, আমি রাখছি হাছান। আর অর বাপে রাখছে, ওয়াহেদ। উনার বাপের নাম নাকি ওয়াহেদ আছিল।

' 'দুইডা নামই সুন্দর। ' 'ঘরে যাইবা না?' মাথা নিচু করেই জিজ্ঞেস করে বিলু। 'নাহ্, ঘরে যাইয়া কি করুম। বাইরেই ভালো লাগতাছে। কেমন ফকফকা জোছনা চাইর পাশে।

' 'তোমার বউরে একবার নিয়া আইসো, দেখতে খুব মন চায়। ' 'কয়দিন থাকবি আর, তুই?' 'কাইলকার দিনই আছি, তারপর চইলা যামু। ' 'থাক না, আর কয়ডা দিন। ' 'নাহ্। ' বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে বিলু।

'বিলু, তোর জামাইডা কেমন রে? আদর টাদর করে নি তোরে ঠিক মতো?' আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে হারুন। 'হু'। 'মনে হয় ভালো মাইনসের হাতেই পড়ছস। ' 'তোমার কথা তারে কইছিলাম। ' 'কি কইলো শুইনা?' প্রশ্ন করে অধীর আগ্রহে বিলুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে হারুন।

(অসমাপ্ত)............................................................................................................................................... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।