আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো ফেব্রুয়ারি, আবারো বইবই গন্ধ

স্বপ্ন দেখাটা অভ্যাস হয়ে গেছে, আকাশ-কুসুম তো বটেই আবারো ফেব্রুয়ারি মাস, আবারো বইবই গন্ধ। বইপাগলদের তীর্থস্থান বইমেলার মৌসুম। বইমেলা শব্দটি শুনলেই মনের ভিতর কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায়। নতুন বইয়ের গন্ধ, স্বাদ পাওয়ার জন্য মন উৎসুক হয়ে উঠে। কাগজের বই পড়ার যে আনন্দ, যে গন্ধ তা কি আইপ্যাড-কিন্ডল-নুকে হয়? হয় না।

জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বইমেলাতে কী করণীয়, কী নয় ইত্যাদি বিষয়ে ভীষন জ্ঞানগর্ভ কিছু উপদেশ সাজিয়ে দেওয়া হলো: বইমেলায় কি করবেন? -আপনার ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ওখানে কাজে দিবে না। তাই পকেটভর্তি টাকা নিয়ে যান, ঝোলাভর্তি বই নিয়ে ফিরুন। রেশনের চালের মতো অনেক ছাড়ে অনেক ভাল ভাল বই পাবেন। তাই বই কিনুন। কিনুন।

কিনুন। দেউলিয়া হবার মাঝেও প্রশান্তি আছে। -একটা ইণ্টেলেকচুয়াল ইউনিফর্ম চাপাতে পারেন। এই যেমন দাড়িওয়ালা খোমা, ময়লা পাজামা; পাঞ্জাবী ঢোলা, কাঁধে ঝোলা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এখন সব ইকলজিকাল ফেরেব্বাজির যুগ।

চা খেয়ে মেলাময় প্লাস্টিকের কাপের কার্পেট সাজিয়ে দেওয়াতে বাঁধা নেই, এদিকে বই কেনার পর প্লাস্টিকের প্যাকেট চাইতে গেলেই আপনি অসবুজ! তাই নিজের ঝোলা সঙ্গে রাখুন, বই নেওয়ার সুবিধে, প্লাস একটা ইণ্টেলেকচুয়াল ইয়েতো আছে। -হুড়োহুড়ি এড়িয়ে চলুন। আমাদের কৌতুহল আর আগ্রহের খেদ মেটাতে এবছর ফেব্রুয়ারি মাস একদিন বাড়িয়ে ২৯দিন করা হয়েছে। তাই ধীরেসুস্থে মেলায় যান, পারলে ছুটির দিনগুলো বাদে যান। -দূর্ধর্ষ কিছু বইয়ের নাম সবসময় মুখস্থ রাখুন।

কখন কোন চিপা দিয়ে টিভি ক্যামেরা বা রেডিও মাইক্রোফোন চলে আসে তাতো বলা যায় না। তখন যদি আপনি ফস করে দু-চারটা সাংঘাতিক বইয়ের নামই করতে না পারেন, তো ইজ্জতের ফালুদা নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে। বইয়ের নাম জানতে আমাদের কামেল সচলদের সাথে যোগাযোগ করুন। -ছোটদের স্টলে ঢুকুন, তাদের বইয়ের গন্ধ শুকুন। আরে বড় প্রকাশকদের বইতো সবসময় আপনার বগলেই থাকে, সারাবছরই পাবেন।

ছোট প্রকাশনীর সব বই-ই অখাদ্য হয় না, বিশ্বাস করুন! বইমেলায় কি করবেন না? আঁতেল সঙ্গ বর্জন করুন যথা-সাধ্য, নয়তো তাদের আঁতলামিতে আপনাকে *** বনে যেতে হতে পারে । বইমেলার সময় হলো আঁতেল-প্রজাতির ভাদ্র মাস, সাবধান! ভলতেয়ার বলেছেন “প্রকৃত বন্ধুরাই বই চুরি করে। “ কিন্তু ভাই চুরি তো চুরি-ই; তা সে বই হোক বা বদনা। শখের বশে হোক বা অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে; বই চুরি করবেন না। কিনুন।

পকেট মারবেন না। ( আচ্ছা, পকেট-মারেরা ব্লগ কি এখনও পড়া শুরু করেনি? জাস্ট ইন কেস..)। অবশ্য আলালের ঘরের বেমক্কা দুলাল আইডেন্টিফাই করে যদি পকেট ঝাড়তে পারা যায়,তাহলে বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রফেশন বলেও একটা ব্যাপার রয়েছে। হোমার সিম্পসন একবার বলেছিল, “বই হইল একটা আজাইরা জিনিস।

এ্কবার আমি ‘টু কিল এ মকিং বার্ড’ বইটা পড়ছিলাম। পুরাটা বই পইড়া শেষ করছি, কিন্তু মকিং বার্ড মারা শিখতে পারি নাই। ” আপনি যদি হোমারের মতো করেও ভাবেন তাও মেলায় ঘুরে আসুন। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, নতুন বই ছোঁয়ার-পাঠ করার সুযোগ যে কী রকম আরামের কাজ তা কেবল পাঠকরাই জানেন। শুনেছি ১৯৭২ সালের দিকে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গনে একটি গাছের নীচে চট বিছিয়ে ৩২টি বই নিয়ে শুরু হয়েছিল এর যাত্রা।

এখন সেখানে ব্যাপক হুল্লাট। পাঁচ-ছশো বইয়ের স্টল। প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেম সারেন, মেয়েরা বই দ্যাখে-ছেলেরা দ্যাখে মেয়ে, কবি-লেখকেরা তীর্থ করেন, বংশি বাদকেরা বংশি বাজান, রংবাজেরা গালে-মুখে আল্পনা আঁকার পায়তারা করেন, কেউ কেউ আবার কামানদাগা করে ছবিও তুলেন। বিশাল যজ্ঞ। সত্যিকার পাঠকের কখনো মৃত্যু হয় না।

বরং একজন সাধারণ দর্শনার্থী মেলার বইপত্তর ঘেটেঘুঁটে নতুন পাঠক হিসেবে জন্ম নেয়। তাই মেলায় যান, সপরিবারে যান, বন্ধুদের নিয়ে যান। ইট-কাঠের এ শহরে আধ্যাত্মিক মালিশের এমন সুযোগ আর পাবেন না! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।